২১ অক্টোবর ২০১৮ রবিবার, ১০:০৮ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনসাইডার ট্রেডিং বা আগাম তথ্য জেনে পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেন করার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যারা আগাম তথ্য জানতে পারে তারা লাভবান হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দিন দিন ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কারসাজি বেড়েই চলেছে। দুঃখের বিষয়, এই আগাম তথ্য সরবরাহের সঙ্গে বেশিরভাগ কোম্পানি জড়িত থাকে, কারণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় যারা থাকে তারাই প্রথমে বিষয়টি জানতে পারে। পরে তারা নামে-বেনামে এসব শেয়ার বেচাকেনা করে। এর সঙ্গে বড় একটি গ্রুপও জড়িত। এসব বিষয়ে ডিএসই, সিএসই ও বিএসইসিকে কঠোর নজরদারি করতে হবে। যদি কয়েকটি কোম্পানিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যায় তাহলে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের কাজ করার সাহস পাবে না। এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক বাকী খলীলী এবং বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্টের এমডি রিয়াদ মতিন। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করেন হাসিব হাসান।
বাকী খলীলী বলেন, যখন একটি দেশে নির্বাচন সামনে আসে, তখন ওই দেশের পুঁজিবাজারে সাধারণত নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন হয়নি যে, পুঁজিবাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে হ্যাঁ, যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে মারামারি-হানাহানি ঘটে সেক্ষেত্রে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীর নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। বর্তমানে বাজারের এই অবস্থা শুধু যে নির্বাচনের কারণে হয়েছে, তা কিন্তু নয়। বাজারে এই খারাপ অবস্থা দীর্ঘসময় ধরে হচ্ছে। যেহেতু এটি দীর্ঘসময় ধরে হচ্ছে, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো কারণ রয়েছে। একটি বাজার যখন দীর্ঘসময় ধরে ধীরগতিতে থাকে, তখন বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়।
বর্তমানে মানি মার্কেটে ডিপোজিট রেট কমে গেছে। সব দেশেই যখন মানি মার্কেটে ডিপোজিট রেট কমে যায়, তখন পুঁজিবাজারে অর্থের প্রবাহ বেড়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে সেটি দেখা যাচ্ছে না। তার মানে দেশের সেকেন্ডারি মার্কেটের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ভীতি কাজ করছে।
বাজারে দুই ধরনের বিনিয়োগ হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি লভ্যাংশভিত্তিক বিনিয়োগ। যতক্ষণ পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি লভ্যাংশভিত্তিক বিনিয়োগ বেশি হবে ততক্ষণ বাজারের গভীরতা বাড়বে।
আরেকটি হচ্ছে ডে ট্রেডিংভিত্তিক। অল্প সময়ে মুনাফা লাভের আশা। আসলে এখানে ডে ট্রেডিংয়ের মূল কারণ হচ্ছে, কিছু কিছু কোম্পানি মুনাফা করা সত্ত্বেও লভ্যাংশ দেয় না। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আস্থার সংকট তৈরি হয়। বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত আট বছরে বিনিয়োগের প্রতি আস্থা তৈরির জন্য বিভিন্ন আইন ও নীতি প্রণয়ন করেছে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ সেভাবে দেখা যায় না। ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাজারে বিভিন্নভাবে যেসব কারসাজি হয়েছে, সেগুলোর একটিতেও বড় ধরনের শাস্তি দিতে দেখা যায়নি।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বছরে তিনবার ইপিএস ঘোষণা করে। কোনো কারণে ইপিএস কোনো প্রান্তিকে বাড়ে আবার কোনো প্রান্তিকে কমে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, কী কারণে ইপিএস ওঠানামা করল, এটা জানার অধিকার বিনিয়োগকারীর রয়েছে। কিন্তু তারা সেটি জানতে পারে না। যদি বিনিয়োগকারীকে সঠিক তথ্য যথাসময়ে সরবরাহ করা যায়, তাহলে তারা বিনিয়োগে উৎসাহী হবে।
রিয়াদ মতিন বলেন, দীর্ঘসময় খারাপ অবস্থায় থাকার কারণে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের একটি অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। সামনে নির্বাচন। আর নির্বাচন সামনে এলে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আসলে দেশের অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক। সে তুলনায় বাজার ওইভাবে এগোতে পারেনি। কিন্তু ২০১০ সালের পর বাজার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিনিয়োগ বাড়ছে না।
ইনসাইডার ট্রেডিং বা আগাম তথ্য জেনে পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেন করার ঘটনা সবসময় ঘটে। এতে যারা আগাম তথ্য জানতে পারে তারা লাভবান হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই আগাম তথ্য সরবরাহের সঙ্গে বেশিরভাগ কোম্পানি জড়িত। কারণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় যারা থাকে তারাই প্রথমে বিষয়টি জানতে পারে এবং এর সঙ্গে বড় একটি গ্রুপও জড়িত। এসব বিষয়ে ডিএসই, সিএসই ও বিএসইসিকে কঠোর নজরদারি করতে হবে। যদি কয়েকটি কোম্পানিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যায়, তাহলে ভবিষ্যতে কেউ এসব কাজ করার সাহস পাবে না।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।