facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

যে কারণে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের দাবি


১৭ জুন ২০১৯ সোমবার, ০২:৪৪  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


যে কারণে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের দাবি

নির্ধারিত হারে কর দিয়ে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে গতকাল দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে। এদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির রিজার্ভের পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হলে যতটুকু বেশি তার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপের বিষয়টি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক, সে বিষয়ে ডিএসইর পর্ষদ সদস্যদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি লক্ষ করা গেছে।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মতিঝিলে ইউনূস সেন্টারে সিএসইর ঢাকা কার্যালয়ে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সিএসই জানায়, ঘোষিত বাজেটে করজালের আওতা বাড়ানো, হুন্ডির পরিবর্তে বৈধ পথে প্রবাসী আয় প্রেরণে প্রণোদনা ও চার স্তরবিশিষ্ট নতুন মূল্য সংযোজন কর বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের কথা উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানো, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর জোর দেয়া হয়েছে, যা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করছি। গত ২ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে বাজেটে বিবেচনার জন্য আটটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে সিএসই। এর মধ্যে শুধু করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা বাড়ানোর প্রস্তাবটি আংশিক বিবেচনা করা হয়েছে। তাই এক্সচেঞ্জটির বাজেট প্রস্তাবনাগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছে সিএসই।

সিএসইর বাজেট প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে—তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিদ্যমান করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা, নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয় তিন বছর করমুক্ত রাখা, স্টক এক্সচেঞ্জের নতুন প্রবর্তিত এসএমই বোর্ডের কোম্পানিগুলোর জন্য তিন বছর পর্যন্ত শূন্য করহার নির্ধারণ করা, ১ লাখ টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত রাখা, যা ঘোষিত বাজেটে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট তৈরির লক্ষ্যে সব ধরনের বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়কে করমুক্ত রাখা এবং জিরো কুপন বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়ের করমুক্ত সুবিধা ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব করদাতাকে অন্তর্ভুক্ত করা, ২০১৩ সালের অর্থ আইন অনুযায়ী ৫৩ বিবিবি ধারা থেকে বন্ড শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য আইনে সিকিউরিটিজের সংজ্ঞায় বন্ড অন্তর্ভুক্ত থাকায় বন্ডের লেনদেনের ওপর দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়। তাই ওই ধারা থেকে বন্ড লেনদেনকে অব্যাহতি রাখা প্রয়োজন, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য সিএসইকে পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যহতির সুবিধা প্রদান করা, স্টক ব্রোকারদের উৎসে দশমিক শূন্য ৫ শতাংশের পরিবর্তে দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ হারে কর কর্তন করা, পাচার রোধ করা ও বিনিয়োগের স্বার্থে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা প্রশ্নে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর প্রদান সাপেক্ষে পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগের সুযোগ রাখার দাবি জানিয়েছে সিএসই।

তাছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে রুগ্ণ কোম্পানিকে ভালো কোম্পানি কর্তৃক অধিগ্রহণের সুযোগ রাখা, নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে বোনাস লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ, রিটেইনড আর্নিংস বা রিজার্ভ যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয়, তবে বাড়তি রিজার্ভের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপসহ বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য লভ্যাংশ আয়ের ওপর দ্বৈত কর তুলে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে সিএসই বলছে, এতে বাজারে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

দুপুর সাড়ে ১২টায় মতিঝিলে ডিএসইর কার্যালয়ে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন স্টক এক্সচেঞ্জটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম, স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান, শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. রকিবুর রহমান, শরীফ আতাউর রহমান ও মিনহাজ মান্নান ইমন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর পক্ষ থেকে বাজেটে পুঁজিবাজারসংক্রান্ত প্রণোদনাসহ আর্থিক খাতের সংস্কারে যেসব উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোকে স্বাগত জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি আরো বেশ কিছু বিষয় বিবেচনার জন্য ডিএসইর পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিমিউচুয়ালাইজেশন-পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য পূর্ণ কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদান করা, এসএমই প্লাটফর্মে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ উৎসে কর অব্যাহতি প্রদান করা, স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং প্লাটফর্মের মাধ্যমে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের লেনদেনের ওপর কর অব্যাহতির বিষয়টি সুস্পষ্টকরণ, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করপোরেট আয়কর হারের পার্থক্য ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশে উন্নীত করা, সার্বিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডার কর্তৃক সিকিউরিটিজ লেনদেনের পর উৎসে কর দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ নির্ধারণের পাশাপাশি এ আয়কর কর্তনকে করদাতার চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছে সিএসই।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে তালিকাভুক্ত কোম্পানির রিটেইন আর্নিংস বা রিজার্ভ পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হলে যতটুকু বেশি তার ওপর ১৫ শতাংশ হারে বাজেটে করারোপের বিষয়টি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক, সে বিষয়ে ডিএসইর পর্ষদ সদস্যদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি লক্ষ করা যায়। ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম ও পরিচালক মো. রকিবুর রহমান এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সাময়িক সময়ের জন্য হলেও এটি থাকা উচিত। অন্যদিকে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন এ প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, এতে পুঁজিবাজারের প্রতি কোম্পানিগুলো নিরুৎসাহিত হবে। অবশ্য ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনই ডিএসইর কোনো বক্তব্য নেই। সব পক্ষের জন্য যেটি সুবিধাজনক হবে ডিএসই সেটির পক্ষে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: