facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

যে কারণে ঘুরে দাঁড়ালো ব্যাংক খাত


১৮ নভেম্বর ২০১৭ শনিবার, ০৫:৪৪  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


যে কারণে ঘুরে দাঁড়ালো ব্যাংক খাত

২০১০ সালের ধসের পর দীর্ঘদিন ব্যাংক খাতে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করে। ব্যাংক খাতে নেতিবাচক অবস্থার কারণে সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে মন্দাবস্থা বিরাজ করে।

সাম্প্রতিককালে ব্যাংক খাতে চাঙ্গাভাব ফিরে আসায় শেয়ারবাজারেও তেজিভাব দেখা দিয়েছে। ব্যাংক খাতের হাত ধরে শেয়ারবাজারে সার্বিক পরিস্থিতি এখন ঊর্ধ্বমুখী।

বিদায়ী সপ্তাহে প্রথমদিকে ব্যাংক খাতের শেয়ার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকলেও মাঝখানে সংশোধনে ফিরে যায়। এমনকি সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহ্সপতিবার লেনদেনের শুরুতে ব্যাংক খাতের শেয়ারে দরপতন অব্যাহত থাকতে দেখা যায়। কিন্তু লেনদেনের শেষদিকে ব্যাংক খাতে হঠাৎ চমক দেখা যায়। এক ঘন্টার মধ্যে ব্যাংক খাতের সব কোম্পানির শেয়ার দর এক ঝলকে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফিরে আসে এবং বাজারের লেনদেনের গতিও অনেক বেড়ে যায়। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থার শীর্ষে এখন ব্যাংক খাতের শেয়ার। এ কারণে ঘুরেফিরে ব্যাংক খাতের শেয়ারই তেজিভাবে দেখা দিচ্ছে।


বাজার সংশ্লিষ্টরদের মতে, পাঁচ ইস্যুতে ব্যাংক খাতের শেয়ার আবারও ঘুরে দাঁড়ালো। ইস্যুগুলো হলো-সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ, ব্যাংক খাতে তারল্য প্রবাহ অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় সুদের হার আরও একদফা হ্রাস, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ব্যাংক খাতে আরও কেন্দ্রিভূত, ব্যাংক খাতের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক খাতে প্রত্যাবর্তন।

১. সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ: সঞ্চয়পত্রে উচ্চ সুদ হারের কারণে শেয়ারবাজার ও বন্ড মার্কেট থেকে অনেকে বিনিয়োগ তুলে এনে সঞ্চয়পত্র কিনছে। এতে সামগ্রিক আর্থিক খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অর্থনীতির এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সপ্তাহে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালযে একটি আনুষ্ঠানিক পত্র প্রেরণ করেছে। সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ উদ্যোগের কথা জানাজানি হওয়ার পর সপ্তাহের শেষদিন শেয়ারবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে ব্যাংক খাতের শেয়ারেও এর প্রভাব পড়ে।

২. ব্যাংক খাতে তারল্য প্রবাহ অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় সুদের হার আরও একদফা হ্রাস: সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানোর প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, সঞ্চয়পত্রে উচ্চ সুদহারের কারণে সরকার কম সুদে ব্যাংক থেকে এখন আর ঋণ নিচ্ছে না। এতে ব্যাংকে অলস টাকার পরিমাণ বাড়ছে। অন্যদিকে, ব্যাংকে তারল্য প্রবাহ অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক আর এখন সাধারণ বিনিয়েগকারীদের কাছ থেকে আমানত নিতে আগ্রহী নয়। ফলে ব্যাংক ব্যবস্থার উপর বিরুপ প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তাবে তুলে ধরা হয়। এ খবরে শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব ফিরে এবং ব্যাংক খাতের শেয়ারেও চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা যায়।

৩. প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ব্যাংক খাতে আরও কেন্দ্রিভূত: প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সাম্প্রতিককালে তাদের সিংহভাগ বিনিয়োগ ব্যাংক খাতে কেন্দ্রিভুত করেছে। গত সপ্তাহে ব্যাংক খাতের তাদের বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি করেছে বলে স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়। এছাড়া, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ব্যাংক খাতের লেনদেনে হঠাৎ ঝলক উঠা স্পষ্ঠভাবে বুঝা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সব বিনিয়োগ এখন ব্যাংক খাতে নির্ভর। এ কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক খাতের শেয়ার দরে বড় ধরণের পতন হতে দিচ্ছে না। যদিও কিছু কিছু ব্যাংকের রুটিন মাফিক সংশোধন হচ্ছে।

৪. ব্যাংক খাতের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি: বিদেশি বিনিয়োকারীরা বরাবরাই ব্যাংক খাতের দিকে বেশি মনোযোগি। কারণ শেয়ারবাজারে অন্যান্য খাতের তুলনায় ব্যাংক খাতে আর্থিক স্বচ্চতা অনেক বেশি। এখাতের শেয়ার দরও অন্যান্য খাতের তুলনায় বেশি স্থিতিশীল। অন্যান্য কোম্পানির মতো ঢালাওভাবে এ খাতের শেয়ার দর উত্থান-পতন হয় না। যদিও কয়েক বছর ব্যবসায়িক মন্দার কারণে বেশি মুনাফা দিতে পারেনি এ খাতের কোম্পানিগুলো। তারপরও অন্যান্য খাতের চেয়ে ভালো লভ্যাংশ দেয় এখাতের কোম্পানিগুলো। এছাড়া, বড় বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক খাতের শেয়ারই বেশি উত্তম। এসব কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক খাতের শেয়ারেই বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।

৫. সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক খাতে প্রত্যাবর্তন: দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতের শেয়ারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারী যারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারাও এখন ব্যাংক খাতের অব্যাহত চাঙ্গাভাব দেখে এখাতের শেয়ারে ঝুঁকছেন। তাদের মতে, শেয়ারবাজারের গতি ত্বরান্বিত করতে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি কদর বাড়ছে। অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর কাছে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের প্রতি রয়েছে ব্যাপক আস্থা। যদিও শেয়ারবাজারের মন্দাসময়ে এখাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে আবার এ খাতের শেয়ারের প্রতি ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কারণ শেয়ারবাজারে উন্নয়নের স্বাভাবিক গতি বাড়াতে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। এ খাতের শেয়ার এখনো অনেকটা বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত। তারপরও এখাতের শেয়ারে ভেবেচিন্তে বিনিয়োগের পরামর্শ তাঁদের।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, ‘এ খাতটি হচ্ছে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী খাত। যে কারণে এসব শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা দেখা যাচ্ছে। তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার এখনও বিনিয়োগের পরিবেশ রয়েছে। তবে যেহেতু অন্যান্য খাতের মতো ব্যাংক খাতের শেয়ারের দরও বেড়েছে, সেহেতু বিনিয়োগকারীদের বিচার-বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করতে হবে। তাহলে আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা কম।’

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের বর্তমান লেনদেন অনেকটাই ব্যাংক খাতের উপর নির্ভর করে চলছে। তাঁদের মতে, গত বছরের তুলনায় ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল বেশি হওয়ার কারণে এবছর মুনাফা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। এ কারণে ব্যাংক খাতের শেয়ারের বিনিয়েগাকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। যদিও ব্যাংকের খাতের কোম্পা্নিগুলোর সাম্প্রতিককালের মুনাফার নিয়ে বাজার সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের মতবিরোধ রয়েছে।

এদিকে,বাজার সংশ্লিষ্টরা কেবল ব্যাংক খাতের নির্ভর শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। তাঁদের মতে, এক খাত নির্ভর শেয়ারবাজার কোনভাবেই টেকসই হয় না।। স্থিতিশীল শেয়ারবাজার হতে হলে সব খাত নির্ভর হওয়া বাঞ্চনীয়।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: