বিআইবিএমের গবেষণা
০৯ নভেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার, ০৪:২৯ পিএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
মোবাইলে হুন্ডি রেমিটেন্স সেবা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। হুন্ডি সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিকাশ, রকেট, এম ক্যাশ, ইউ ক্যাশসহ অন্যান্য এমএফএস সার্ভিসের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রদান করছে। ফলে দ্রুত বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সারাদেশে হুন্ডির এ সিন্ডিকেট কাজ করছে। যার ফলে ব্যাংকিং খাতে রেমিটেন্স প্রবাহে কমে গেছে। বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত” শীর্ষক কর্মশালায় এ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধূরী। কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবিবের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি দল । গবেষণা প্রতিনিধি দলের অন্যন্য সদস্যরা হলেন- বিআইবিএমের অধ্যাপক মো. নেহাল আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাবিশ্বে রেমিটেন্স প্রবাহ কমলেও বাংলাদেশে বেশি কমেছে। কেননা, বিশ্বে আমাদের মার্কেট শেয়ার সবচেয়ে বেশি কমেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স কমার কারণ হিসেবে গবেষণায় ব্যাংকের শাখার দূরত্ব,অর্থ পেতে সময়ক্ষেপণ, ব্যাংকারদের সদাচারণের অভাব, নানা ধরণের জবাবদিহিতা, বিভিন্ন ধরণের কাগজপত্রের।
প্রয়োজনীয়তা,সাপ্তাহিক ছুটি, অবৈধ অভিবাসী ইত্যাদী বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করা হয়েছে।
ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, গত কয়েক বছর ধরে রেমিটেন্স প্রবাহে শ্লথ প্রবৃদ্ধি। তবে গতমাসে ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এটিকে ধরে রাখার জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, এটিকে অস্বীকার কারার উপায় নেই যে, ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে রেমিটেন্সের একটি বড় অংশ অবৈধভাবে দেশে আসছে। হুন্ডি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন উপায়ে এটিকে কমিয়ে আনতে হবে। সে জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ডেপুটি গভর্নর আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে আর্থিক অন্তভ’ক্তির যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে তা বাস্তবায়নে অবৈধ চ্যানেলে লেনদেন বন্ধ করতে হবে।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলি বলেন, অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিটেন্স আসার কারণে জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেল কাজে লাগাতে হবে। গত ৫ বছর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পরিসর অনেক বেড়েছে। রেমিটেন্স আনার ক্ষেত্রে এটিকে কাজে লাগানো হয়নি। এ কারণে দ্রুত মোবাইল ব্যাংকিংকে রেমিটেন্স আনার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে না পারলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ আরও কমে যেতে পারে। অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে যেসব সুবিধা প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনদের দেয়া হয়, সেসব সুবিধা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেওয়া উচিত বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠালে খরচ বেশি। এর প্রভাব পড়ছে রেমিটেন্স প্রবাহে। তাই খরচ কমিয়ে আনতে হবে। এছাড়া ব্যাংকারদেরকে গ্রাহকদের সঙ্গে আরও ভালো আচারণ করতে হবে। কর্মদক্ষতা বাড়াতে হবে।
এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মেহমুদ হোসেন বলেন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে (এমএফএস) কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। তা না হলে হুন্ডি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এমএফএসকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে তদারকি করতে হবে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।