facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

মূল্যসংবেদনশীল তথ্য ফাঁসে খোদ কোম্পানি জড়িত!


২৬ এপ্রিল ২০১৭ বুধবার, ০৮:৫৬  এএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


মূল্যসংবেদনশীল তথ্য ফাঁসে খোদ কোম্পানি জড়িত!

শেয়ারবাজারে সবচেয়ে মূল্যবান উপাদান হলো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। কিন্তু এ তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এ তথ্য সবার আগে ডিএসই, সিএসই ও বিএসইসির কাছে আসার কথা থাকলেও তাদের কাছে আসছে সব শেষে। ফলে একটি সুযোগসন্ধানী চক্র ফায়দা লুটছে। নষ্ট হচ্ছে বাজারের পরিবেশ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী।

জানা গেছে, কোম্পানির লাভ-লোকসান, শেয়ারপ্রতি আয়, নতুন বিনিয়োগ, মালিকানা বদল, কেনাকাটাসহ বাজারের জন্য মূল্য সংবেদনশীল সব তথ্য ফাঁস করছেন কোম্পানির শেয়ার ডিভিশনের লোকজন। ইতিবাচক খবর হলে তারা শেয়ার কিনে তারপর বন্ধু-বান্ধবদের মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আর নেতিবাচক হলে শেয়ার বিক্রি করে খবর ছড়িয়ে দিচ্ছেন। বিষয়টি ডিএসইসি, সিএসইসি ও বিএসইসি আমলে না নেওয়ায় এসব ঘটনা ঘটছে অহরহ। আর খবর আগে যারা পান, তারা লাভবান হচ্ছেন। যারা আগে পাচ্ছেন না, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সম্প্রতি কয়েকটি কোম্পানির সংবেদনশীল তথ্যের কথা উল্লেখ করে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বলেন, এসব কোম্পানি যখন অফিসিয়ালি তথ্য প্রকাশ করেছে, এর আগেই তাদের কাছে এ তথ্য ছিল। তারা জানান, আইএফআইসি ব্যাংকের রাইট অনুমোদন হচ্ছে এটা তাদের আগেই জানা ছিল। অনুরূপভাবে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) কাছে সিটি ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির চুক্তির কথা আগে থেকে জানা ছিল অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর। অন্যদিকে আলিফ গ্রুপ বস্ত্র খাতের সিএমসি কামালের শেয়ার কিনে নিচ্ছে এমন খবরও অনেক আগেই বিনিয়োগকারীরা জেনে যান। একই গ্রুপ সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ার কিনে নেবে এ তথ্য আগেই ফাঁস হয়। এদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিএসসির শেয়ারের লট ভাঙার খবর বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে। একইভাবে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ওটিসি মার্কেট থেকে মূল বাজারে ফিরে আসবে এ খবরটিও অনেক আগে ফাঁস হয়ে গেছে। এর আগে লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট ও ইউসিবিএলএর ক্যাটাগরি পরিবর্তন হবে এ তথ্যটিও আগেই জেনে যান বিনিয়োগকারীরা। আরএন স্পিনিংয়ের মামলায় জেতার খবরটিও আগাম পান কিছু বিনিয়োগকারী।

ফলে সর্বশেষ যখন এসব প্রতিষ্ঠানের খবর বাজারে আসে, তা কাজে দেয়নি। এ বিষয়ে হাসান মাহমুদ নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, শুধু এসব খবরই নয়, কোন প্রতিষ্ঠানের ইপিএসই কেমন হবে বা আর্থিক হিসাব কেমন হবে সেসব খবরও আগে থেকেই মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও প্রথমে তা কিছু লোকের মধ্যে সীমাবন্ধ থাকে এবং তারা বেশি লাভবান হন। তিনি বলেন, কোনোভাবেই যেন এসব তথ্য ফাঁস না হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া দরকার।

সমর্থিত সূত্রমতে, যারা আগে থেকে সংবেদনশীল তথ্য পান, তারা সঙ্গে সঙ্গে এটা কাজে লাগাতে শুরু করেন। শেয়ারদর বাড়বে এমন খবর এলে তারা ক্রেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ফলে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের জন্য বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বেশি দেখা যায়। ক্রমে এই শেয়ারের দর বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে তার হাউজগুলো নিজেদের লোক দিয়ে শেয়ারদর বাড়বে এমন গুজব ছড়িয়ে দেয়। যার প্রভাবে শেয়ারদর দ্রুত বাড়তে থাকে। সর্বশেষ যখন এটা স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে আসে, তখন আর ওই শেয়ারের দর বাড়ার সুযোগ থাকে না। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা না বুঝে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বেশি দরে এ শেয়ার ক্রয় করেন। এ সুযোগেই আগে যারা তথ্য পেয়েছিলেন, তারা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। এতে ফল ভোগ করতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। বেশিরভাগ সময়ই যার শিকার হন বাজারে নতুন আসা বিনিয়োগকারীরা। পক্ষান্তরে যখন কোনো কোম্পানির নেতিবাচক খবর আসে, সে খবরও আগে আগেই ফাঁস হয়। সে সময় নানা গুজব ছড়িয়ে কাক্সিক্ষত দরে শেয়ার বিক্রি করেন সুযোগসন্ধানীরা। পরে যখন খবর পান, তখন আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কিছু করার থাকে না। কারণ তিনি আগেই ফাঁদে পা দিয়ে আছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বাজার-সংশ্লিষ্টসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলেন, আগে থেকে তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে তা প্রকাশ করে লাভ নেই। এ তথ্য বিনিয়োগকারীদের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। তারা এর জন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ডিএসই, সিএসইসহ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করেন। এ সংস্থাগুলো চাইলে সহজেই তথ্য ফাঁস বন্ধ করতে পারে বলে তারা মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে মো. শহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, তথ্য পাচার বন্ধ করতে হলে কোম্পানি, ডিএসই, বিএসইসি সবাইকেই কঠিন হতে হবে। তারা যদি কঠিন হয়, তবে আর তথ্য ফাঁস হওয়ার শঙ্কা থাকে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ভূত তাড়ানো তেলের মধ্যেই ভূতের জন্ম হয়েছে! আমার মনে হয়, তথ্য ফাঁসের পেছনে এসব প্রতিষ্ঠানের ইন্ধন রয়েছে। কোনো না কোনোভাবে তারা এখান থেকে লাভবান হচ্ছে। ফলে তারা তথ্য ফাঁস বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, মূলত কোম্পানি থেকেই এসব তথ্য ফাঁস হয়। তাই সবার আগে এসব কোম্পানির দায়িত্বশীলদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। তারা যদি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেন, তাহলে কিছুতেই এটা রোধ সম্ভব নয়।

ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, কোনো কোম্পানি এভাবে তথ্য ফাঁস করছে এমনটি আমার জানা নেই। তবে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন করে এবং প্রমাণ হয়, তবে অবশ্যই নিয়মানুযায়ী তার শাস্তি হবে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: