facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

মুশফিক চাপেই ভালো খেলেন


১৬ অক্টোবর ২০১৭ সোমবার, ০৩:২২  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


মুশফিক চাপেই ভালো খেলেন

তাঁকে নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন। তিনি উইকেটকিপিংয়ে বিশ্বস্ত নন। ফিল্ডিংয়ে তাঁর হাত গলে বল বেরিয়ে যেতে পারে। অধিনায়ক হিসেবে অদূরদর্শী এবং তিনি অতি আবেগপ্রবণ। প্রতিটি অভিযোগই আলোচনার দাবি রাখে। তবে একটা জায়গায় মুশফিকুর রহিমের সমালোচনা করার লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। ব্যাট হাতে তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা। ডায়মন্ড ওভালে কালকের সেঞ্চুরি সেটির আরেকটি ঘোষণামাত্র।

দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার পর থেকেই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময় পার করছেন মুশফিক। দুই টেস্টেই টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত যদিও দলীয়, তবু সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি তো অধিনায়কই হন। মুশফিক প্রকাশ্যে বোলারদের সমালোচনা করে অপ্রিয় হয়েছেন। টসে হারাটাই ভুল—এমন মন্তব্য করে কারও কারও মতে ক্ষুণ্ন করেছেন দেশের ক্রিকেটের ‘ভাবমূর্তি’। সংবাদ সম্মেলনে সরাসরি বলে দিয়েছেন, অধিনায়ক হওয়া সত্ত্বেও কোচ তাঁকে বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করতে বলেছেন। এই বক্তব্যও মুশফিকের দিকে বুমেরাংয়ের মতো ঘুরে গেছে।

সব মিলিয়ে মুশফিকের টেস্ট অধিনায়কত্বটা পড়ে গেছে সংশয়ে। নতুন অধিনায়ক ঠিক করার আগেই বোর্ডে মোটামুটি সবাই একমত, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের টেস্ট সিরিজে মুশফিককে অধিনায়ক রাখা যাবে না। এসবের সঙ্গে আরও একটা ব্যাপারও মুশফিককে টলমল করে রেখেছিল। সেটা তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি ব্যাটিং। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই টেস্টের চার ইনিংসেই ব্যাট হাতে ভীষণ এলোমেলো মনে হয়েছে মুশফিককে।

তবে কাল তাঁর সেঞ্চুরি জানিয়ে দিল, সেই এলোমেলো ভাব ছিল সাময়িক। এত চাপ আর সমালোচনার মধ্যেও কী দারুণ মাথা তুলে দাঁড়ালেন মুশফিক! ভেতরে জমে থাকা সব রাগ-ক্ষোভ যেন উগরে দিলেন একেকটা শটে। ১১ বাউন্ডারি আর ডেন পেটারসনকে মারা বিশাল দুই ছক্কায় দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সব ধরনের ক্রিকেটেই দেশের হয়ে করে ফেললেন প্রথম সেঞ্চুরি। তাঁর অপরাজিত ১১০ রান বাংলাদেশকেও এনে দিল একটা ‘রেকর্ড’। দক্ষিণ আফ্রিকায় এ পর্যন্ত ১২টি ওয়ানডে খেলে কালকের ২৭৮ রানই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংস।

ওয়ানডেতে মুশফিকের এটি পঞ্চম সেঞ্চুরি। বাংলাদেশ দলে তাঁর চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে শুধু সাকিব (৭টি) ও তামিমের (৯টি)। সেঞ্চুরিতে পিছিয়ে থাকলেও মুশফিকের ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্যটা তাঁর ধারাবাহিকতায়। টেস্টের গত চারটি ইনিংস বাদ দিলে ব্যাট হাতে খুব বেশি নিষ্প্রভ থাকতে দেখা যায় না মুশফিককে। কালও যেভাবে জ্বলে উঠলেন, মনে হলো ডায়মন্ড ওভালের ব্যাটিং উইকেটের ভাষা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র তিনিই বুঝতে পেরেছেন।

মুশফিক অনেকবারই বলেছেন, দায়িত্ব নিয়ে খেললে তাঁর ব্যাটিং ভালো হয়। চাপ তাঁর ভেতর থেকে বের করে আনে আসল খেলা। মাঠে নিজের ভূমিকাটা তাই কখনো ব্যাটসম্যান, কখনো উইকেটকিপার, কখনো–বা অধিনায়ক হিসেবে দেখতেই পছন্দ করেন বেশি। কিন্তু হাথুরুসিংহের আমলে সবকিছুই মুশফিকের প্রতিকূলে। টেস্টে কিপিং গ্লাভস জোড়া এর মধ্যেই লিটন দাসকে খুলে দিতে হয়েছে। ব্যাটিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ায় কাল ওয়ানডেতেও তা-­ই দেখা গেল। আর অধিনায়কত্ব তো প্রশ্নের জাঁতাকলে আছেই। এভাবে একটা একটা করে অন্য সব চাপ মাথার ওপর থেকে সরে গেলে শুধু ব্যাটসম্যান মুশফিক কেমন করেন, সেটা একটা দেখার বিষয় হবে।

তবে আপাতত মুশফিক চাপেই আছেন। বলতে পারেন অনন্ত চাপ। টেস্ট অধিনায়কত্ব হারানোর শঙ্কার সঙ্গে যোগ হয়েছে সাম্প্রতিক সত্যবচনে বোর্ডের অপ্রিয় হয়ে ওঠা। হয়তো এসব চাপই কাল অমন একটা ঝলমলে ইনিংস বের করে আনল তাঁর ব্যাট থেকে। হাওয়া যেদিকেই থাকুক, এটি আবারও প্রমাণিত, মুশফিক চাপেই ভালো খেলেন।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: