facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

মিথ্যা মামলায় যৌবন হারালেন বাবুল!


১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ বুধবার, ১০:১৭  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


মিথ্যা মামলায় যৌবন হারালেন বাবুল!

মো. বাবুল কারাগারেই আছেন ২৫ বছর ধরে। অথচ তার বিরুদ্ধে যে অপরাধ, তার সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর। তবে বুধবার ঢাকার একটি আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। খালাস পাওয়া মো. বাবুলের বাড়ি কুমিল্লায়। তাকে ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ১৯৯২ সালে।

খালাস আদেশের পর বাবুল বলেন, ২৫ বছর আগে ১৯৯২ সালে ডেমরা থেকে সিআইডি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৫ বছর। তখন তিনি পুলিশকে বলেছিলেন, তিনি নির্দোষ। এরপর থেকে বারবারই পুলিশ, আইনজীবী ও আদালতকে বলেছিলেন, তিনি নির্দোষ। তার কথা কেউ শোনেননি। বুধবার প্রমাণিত হলো, তার কথাই ঠিক ছিল।

বাবুল যখন তার জীবনের কাহিনি শোনাচ্ছিলেন, তখন তার চোখে ছিল পানি। বাবুল বললেন, ‘আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে। কেউ কি আমার যৌবন ফিরিয়ে দিতে পারবে?’

বুধবার বাবুলসহ পাঁচজনকে খালাস দিয়েছেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। মামলার নথিতে দেখা গেছে, ১৯৯২ সালের ২১ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে গুলিস্তান থেকে কুমিল্লাগামী একটি বাস ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড়ে পৌঁছালে তিন সদস্যের অজ্ঞাত ডাকাতদল বাসে ডাকাতি করে। যাত্রীদের কাছে থেকে নয় হাজার টাকা ডাকাতি করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই বাসের কর্মচারী নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্ত করে ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর বাবুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন ডেমরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ আলী সিকদার। আদালত অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়ে বাবুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালের ৪ জুলাই বিচার শুরু করেন। বিচার শুরুর ২৪ বছরে মামলার ১১ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র চারজন সাক্ষী আদালতে হাজির করে পুলিশ। তবে মামলার বাদী নজরুল কিংবা তদন্ত কর্মকর্তা আশরাফ কখনই আদালতে হাজির হননি। মামলার তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন তৎকালীন মহানগর হাকিম ফারুক আহমেদ খান। তাঁর বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও তাঁকেও আদালতে হাজির করেনি পুলিশ।

আদালত বাবুলের খালাসের রায়ে বলেছেন, ‘মামলার বাদী, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডকারী বিচারকসহ অন্য সাক্ষীদের আদালতে হাজির করানোর জন্য আদেশের কপি পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো পক্ষই মামলার বাদী, তদন্ত কর্মকর্তা ও জবানবন্দি রেকর্ডকারী বিচারককে আদালতে হাজির করানোর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।’

বাবুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি বলে আদালত তাঁর রায়ে উল্লেখ করেছেন।

বাবুল তাঁকে গ্রেপ্তারের কাহিনি তুলে ধরে বললেন, মা-বাবার সঙ্গে তিনি থাকতেন ডেমরার দোলাইরপাড় (এখন যাত্রাবাড়ী থানার মধ্যে) এলাকায়। সেদিন তিনি ফতুল্লায় যাচ্ছিলেন বন্ধুর কাছে। ডেমরা সেতুর ওপর ট্যাক্সির ভেতরে ছিলেন। হঠাৎ পুলিশ তাকে ধরে। পরে রিমান্ডেও নিয়েছিল পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর প্রথম প্রথম মা-বাবা তার সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে আসতেন। এরপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তারা।

বাবুলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বাঞ্ছারামপুরের বাহার নগর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আনোয়ার হোসেন। মা নিলুফা বেগম। তাঁরা সাত ভাই ও দুই বোন। বাবুলের ভাষ্য, তাঁর বাবা বিমানবাহিনীতে চাকরি করতেন। তাঁর গ্রেপ্তারের পর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বাবা। ১৯৯৫ সালে মারা যান মা। এরপর থেকে আর কোনো দিন ভাই কিংবা বোনকে দেখেননি তিনি। বাবুল ঘুরেফিরে তাঁর মা-বাবার গল্পই বলছিলেন।

বাবুলের বয়স ৪৫ বছর হতে চলল। বিয়ে করেননি। জীবনে কোনো দিন কোনো অপরাধ করেননি দাবি করে বাবুল বললেন, আর কারও জীবন যেন তাঁর মতো না হয়। মিথ্যা মামলায় যেন যুগের পর যুগ বিনা বিচারে কারাগারে না থাকতে হয়। বহুবার তিনি বলেছেন, তিনি নির্দোষ।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: