facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

ব্যাংকে জমা বেড়ে ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা


১২ ডিসেম্বর ২০১৮ বুধবার, ০৫:৩৪  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


ব্যাংকে জমা বেড়ে ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা

দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণের অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা সমালোচনা করলেও এ খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত ১০ বছরে অনেক প্রসারিত হয়েছে ব্যাংকিং খাত। এই সময়ে বেড়েছে ব্যাংক ও শাখার সংখ্যা, বেড়েছে আমানত ও ঋণের হারও।

‘সরকারের সাফল্যের ১০ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এসব দাবি করা হয়েছে। বিশেষ এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষণা বিভাগ।

বিশেষ এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে যেখানে জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা, সেখানে ২০১৮ সালের জুনে তা বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত ১০ বছরে ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। ১০ বছরে ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা, আর ঋণ বেড়েছে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, উল্লিখিত সময়ে আমানত ও ঋণ বেড়েছে ৪ গুণেরও বেশি।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির সীমানা আরও বাড়াতে বিভিন্ন গাইড লাইন ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতিবেদনে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের সার্বিক চিত্র ও বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৮ সালে দেশে ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ৪৭টি, কিন্তু গত ১০ বছরে ব্যাংকের সংখ্যা আরও ১১টি বেড়ে মোট ৫৮টি হয়েছে। এছাড়া, ১০ বছরে ব্যাংকের মোট শাখা বেড়েছে ৩ হাজার ২২৮টি। ২০০৮ সালে শাখা ছিল ৬ হাজার ৬৮৬টি। এই শাখাগুলোতে সর্বমোট ৯ কোটি ২১ লাখ সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাম এবং শহর মিলে বর্তমানে ব্যাংকের মোট শাখা ১০ হাজার ১১৪টি। এর মধ্যে শহরে রয়েছে ৫ হাজার ২২৪টি এবং গ্রামে ৪ হাজার ৮৯০টি। শাখা বৃদ্ধির ফলে গত ১০ বছরে ব্যাংকের মোট হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ২১ লাখে। এর বিপরীতে সঞ্চয় বা আমানতের পরিমাণ ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৬ কোটি থেকে ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রচেষ্টায় গত ১০ বছরে দেশের আর্থিক খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ সাধারণ জনগোষ্ঠীকেও আর্থিক সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এখন ঋণ গ্রহণ, হিসাব খোলা, টাকা জমা রাখা, ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা লেনদেনসহ ব্যাংকের সব ধরনের সেবা পাচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫৮০ কোটি ডলার থেকে প্রায় ৬ গুণ বেড়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরের শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেখানে ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল, সেখানে ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের সময় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি রিজার্ভ ছিল ৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ১০ বছরে কৃষিখাতে ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা, শিল্প খাতে ৩৬ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে দেড় লাখ কোটি টাকা, রফতানি ও বাণিজ্যিক ঋণ ৬৪ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা এবং চলতি মূলধন খাতে ঋণ ৩৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত ১০ বছরে অন্তর্ভুক্তিমূলক মুদ্রানীতিও প্রণয়ন করা হয়েছে। ফলে উচ্চপ্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সুদহারও ক্রমেই কমে এসেছে। আর্থিক খাতে সংস্কার, ডিজিটাইজেশন, মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে— অনলাইন সেবা, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা।

নতুন নতুন উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে স্বল্প সুদে ঋণ দিতে ৮ থেকে ১০টি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। এসব তহবিল থেকে তরুণ ও নারী উদ্যোক্তারা স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়তে পারছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুদ্রা ও আর্থিক বাজার সংস্কার, আর্থিক খাতে ডিজিটাইজেশন আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও ডিজিটাইজেশন আনা হয়েছে। পুরো ব্যাংকিং খাতে ডিজিটাইজেশন আনা হয়েছে। এর মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে— অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউজ, বাংলাদেশ অটোমেটেড চেক প্রসেসিং সিস্টেম, ইলেক্ট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক, আরটিজিএস, ই-কমার্স, এম কমার্স, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা, অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে, বিজনেস প্রোসেস আউটসোর্সিং সেবা, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ। ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো সিআইবি সেবা অনলাইন করা হয়েছে। জালিয়াতি রোধে গড়ে তোলা হয়েছে ইলেক্ট্রনিক ড্যাশবোর্ড। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আর্থিক গ্রামীণ জনসাধারণকে আর্থিক সেবায় আনতে মোবাইল ব্যাংকিং, স্কুল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের আর্থিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংকুলানধর্মী ও অর্ন্তভুক্তিমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে আসছে। এর ফলে বিগত অর্থবছরগুলোতে একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় মাত্রার মধ্যে সীমিত রাখা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে, প্রকৃত দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার সাত শতাংশের ঘর অতিক্রম করে বর্তমানে প্রায় ৮ শতাংশে পৌঁছানোর পর্যায়ে রয়েছে।

আর্থিক খাত সংস্কার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের আর্থিক খাতকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ বছর মেয়াদী (২০১৫-২০১৯) কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক উন্নয়ন ও পরিবর্তনের লক্ষ্যে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সেগুলো পরিপালনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশোধিত ভিশন ও মিশনসহ মোট ১৪টি স্ট্র্যাটেজি, ১০৫টি অবজেক্টিভস এবং ৩২০ অ্যাকশন প্ল্যান ও ৩৯৫টি কী পারফরমেন্স ইনডিকেটরস চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ব্যাংককে সংস্কার করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আর্থিক বাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের সক্ষমতা বৃদ্ধি, উৎপাদনশীল খাতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন সুবিধা দেওয়ার জন্য আর্থিক বাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। প্রবিধি ও তত্ত্বাবধান সক্ষমতা জোরদার ও আইনগত সংস্কার আনা হচ্ছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: