facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

ব্যাংক খাতের কারণেই দরপতন দীর্ঘায়িত


১৪ মার্চ ২০১৮ বুধবার, ০৩:১৩  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


ব্যাংক খাতের কারণেই দরপতন দীর্ঘায়িত

দেশের শেয়ারবাজারে মঙ্গলবারও ব্যাপক দরপতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রায় ৮৭ শতাংশ শেয়ার দর হারিয়েছে। অপর শেয়ারবাজার সিএসইতেও ছিল একই অবস্থা। পরিস্থিতি এতটাই করুণ ছিল, ডিএসইতে গতকাল লেনদেন শুরু হওয়া কুইন সাউথ টেক্সটাইল ছাড়া লেনদেন হওয়া বাকি ৩৩৫ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সবগুলোই দর হারিয়েছিল। যদিও ক্লোজিং প্রাইসের হিসাবে ১৮টির এবং সর্বশেষ মূল্যের হিসাবে ৩৮টির দর সামান্য বেড়ে লেনদেন শেষ হয়।

ব্যাপক দরপতনের মুখে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৮২ পয়েন্ট হারিয়ে ৫৬২৩ পয়েন্টে নেমেছে। সূচক পতনের হার প্রায় দেড় শতাংশ। এই পতনের ফলে সূচকটি গত বছরের ২৮ জুনের আগের অবস্থানে চলে গেছে। একইভাবে সিএসইর প্রধান মূল্যসূচক সিএসসিএক্স ১৫৬ পয়েন্ট বা দেড় শতাংশ হারিয়ে ১০৪৯৮ পয়েন্টের নিচে নেমেছে। শুধু সূচক নয়, সাম্প্রতিক সময়ে লেনদেনের অবস্থা আরও করুণ হয়েছে। লেনদেন কমতে কমতে ২০০ কোটির ঘরে নেমেছে। গতকাল দুই বাজার মিলে ৩০৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

টানা দরপতনের মুখে কিছু বিনিয়োগকারী গতকাল মতিঝিলে ডিএসই কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। তারা বাজারের পতন ঠেকাতে বিএসইসি কার্যত কোনো ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে অর্থবাজারের তারল্য সংকট সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ী করে স্লোগান দেন।

এদিকে দরপতনের কারণ হিসেবে ব্যাংক খাতের মাত্রাতিরিক্ত তারল্য সংকটকে দায়ী করছেন বাজার-সংশ্নিষ্টরা। শীর্ষ ব্রোকারদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক শেষে ডিএসই ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। মতিঝিলের ডিএসই কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে আইসিবির এমডি ছানাউল হকও অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএ সভাপতি ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ক্যাপিটাল মার্কেট অপারেশনের প্রধান নাসির উদ্দিন আহমেদ। এ নিয়ে তিন মাসের মধ্যে চার দফা এমন বৈঠক করল বাজার-সংশ্নিষ্ট এসব সংগঠন। তবে পরিস্থিতির মোটেই উন্নতি হয়নি।

ডিবিএ সভাপতি বলেন, ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের ব্যাপক সংকট আছে। এডিআর (ঋণ-আমানত অনুপাত) সমন্বয় করতে গিয়ে ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হারানোর কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত সীমার অনেক নিচে থাকলেও তারাও অর্থ ছাড়ছে না। তারল্যের অভাবে বড় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এতে শেয়ারের ক্রেতা কমেছে, দরপতন দীর্ঘায়িত হয়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও আস্থা হারিয়ে ফেলছেন।

ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটের সমাধান করা গেলে শেয়ারবাজারের দরপতন ঠেকানো যাবে বলে মনে করেন বিএমবিএ সভাপতি। তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অর্থ সংকট মেটাতে এখনই নগদ সংরক্ষণ নীতিতে ছাড় দেওয়া প্রয়োজন। সবার স্বার্থে সিআরআর বিদ্যমান ৬ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ কমানোর অর্থাৎ ৫ শতাংশ করার অনুরোধ করেন তিনি। অন্ততপক্ষে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ করার দাবি তার।

নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে থাকার কারণে এবং এডিআর সমন্বয় করতে গিয়ে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। এ কারণে শেয়ারবাজারমুখী বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। সরকারি ব্যাংক এবং সেগুলোর ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্য আছে। তাদেরই উচিত এগিয়ে আসা।

বিএমবিএ সভাপতি আরও জানান, সার্বিক তারল্য সংকটের মধ্যেও অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার মতো অর্থ আছে। তবে বিদ্যমান বাজার মূল্যে ব্যাংকগুলো এক্সপোজার (শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হিসাব) করায় নির্ধারিত সীমার কাছাকাছিতে অবস্থান করছে অনেকের বিনিয়োগ। এ কারণে চাইলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা বিনিয়োগ করতে পারছে না।

তিনি জানান, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে তারা সংকট উত্তরণে ভূমিকা রাখতে চান। এজন্য বাজার মূল্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এক্সপোজার হিসাব না করে ক্রয়মূল্যে বিনিয়োগ হিসাব করার দাবি আবারও তোলেন তিনি। একই সঙ্গে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর এক্সপোজার হিসাব না করে শুধু ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার হিসাব করারও দাবি জানান তারা।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: