facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪

Walton

ব্যবস্থাপনা বদলাচ্ছে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের


৩০ জুলাই ২০১৭ রবিবার, ০৮:০৪  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


ব্যবস্থাপনা বদলাচ্ছে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের

সংকটগ্রস্ত প্রকৌশল খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ পরিচালনার ভার শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান ও তুহিন রেজাদের হাতেই যাচ্ছে। আড়াই বছর আগে তারা এ কোম্পানির নেতৃত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তবে এবার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে কারখানা চালু রাখতে না পারার কারণ দেখিয়ে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ মাহমুদুল হাসানের মালিকানাধীন ইউরোদেশ গ্রুপের কাছে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হক সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, আগামী এক মাসের মধ্যে কোম্পানির নেতৃত্ব ইউরোদেশের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। তারাই নতুন পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেবে। ইউরোদেশ গ্রুপের একমাত্র কোম্পানি ইউরোদেশ ফিড মিলস টাঙ্গাইলে স্থাপিত কোম্পানির কারখানায় পোলট্রি ও ফিশফিড উৎপাদন করা হয়। আর সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ ওষুধ শিল্পের অত্যাবশ্যক উপাদান পিভিসি ফ্লিম উৎপাদন করে, যা ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলের মোড়কে ব্যবহার হয়।

আড়াই বছর আগে ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর লোকবল নিয়ে বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাহমুদুল হাসান ও তুহিন রেজা নিজেদের কোম্পানির পরিচালক ঘোষণা করেন। ওই দিন তুহিন রেজাকে চেয়ারম্যান করা হয়। পরে স্বঘোষিত পর্ষদ তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হককে বরখাস্ত করে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে মাহমুদুল হাসানকে নিয়োগ দেয়। অবশ্য কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেওয়ার দাবি করলেও প্রধান কার্যালয় ও কারখানার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি তারা। এ নিয়ে উভয় গ্রুপ নিজেদের নেতৃত্ব দাবি করে স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসিকে চিঠি দেয়। পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও করে উভয় গ্রুপ। এমনকি বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তাতে হেরে যান মাহমুদুল হাসানরা।

এর পর এতদিন সুহৃদের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে পারলেও এর উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ হন আনিস আহমেদ ও জাহেদুল হকের নেতৃত্ব। ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হক বলেন, সরকারের নানা পর্যায়ে ধরনা দিয়েও বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট সমস্যার সমাধান করা যায়নি। এ কারণে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে কোম্পানিটিকে ইউরোদেশ গ্রুপের ব্যবস্থাপনাধীন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্ষদ। এ জন্য চুক্তির খসড়াও গত বৃহস্পতিবারের পর্ষদ সভায় অনুমোদিত হয়েছে।

পুনর্গঠিত নেতৃত্বে বর্তমানরা থাকবেন কি-না, এমন প্রশ্নে জাহেদুল হক বলেন, এটা এখনই বলা সম্ভব নয়। রোববার (আজ) এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের পর বলা যাবে। নতুন ব্যবস্থাপনা সুহৃদকে পুনরায় ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনতে পারবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ভবিষ্যৎই বলবে। তবে আমরা আশাবাদী। ইউরোদেশের মালিক পক্ষের কাছে সুহৃদের প্রায় পাঁচ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। যোগাযোগ করা হলে তুহিন রেজা জানান, তাদের গ্রুপের কয়েকজনের কাছে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের প্রায় ২২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। পুনর্গঠিত পর্ষদে তিনিই চেয়ারম্যান হবেন বলে আশা করছেন। তুহিন রেজা বলেন, দায়িত্ব পেলে প্রথমত কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে এ বছরই কোম্পানিকে লাভজনক করা যায়।

তুহিন রেজা বলেন, বিদ্যুৎ সংকট থাকলেও কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার মতো বড় জেনারেটর রয়েছে। তারপরও বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করা হবে। উৎপাদন বাড়িয়ে বিদেশে রফতানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে শেয়ারটির সর্বশেষ লেনদেন মূল্য ছিল ১৩ টাকা। ৫২ কোটি ১৫ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৪ সালের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কোম্পানিটি যথাক্রমে নিট ১৭ লাখ টাকা ও প্রায় ২২ লাখ টাকা লোকসান করে। গত ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসে মোট ১৯ লাখ টাকা লোকসান করেছে। অবশ্য এখনও পুঞ্জিভূত মুনাফা রয়েছে ১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

এদিকে মালিকানার দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্ব সংকটের প্রেক্ষাপটে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমেছে। এক বছর আগে ২০১৬ সালের জুনে তাদের সম্মিলিত শেয়ার ছিল মোট শেয়ারের ৩২ দশমিক ৬২ শতাংশ। তবে গত জুন শেষে তা কমে ৯ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমেছে। বাকি ৯০ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

তালিকাভুক্তির দিনে ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সুহৃদের শেয়ার ৫৫ টাকায় কেনাবেচা হয়েছিল। মাঝে শেয়ারটির দর কমলেও এজিএমের আগে ওই বছরের ৬ নভেম্বর পুনরায় ৫৫ টাকায় কেনাবেচা হয়। এরপর ক্রমাগত কমছে শেয়ারটির দর। তবে গত মে মাসে শেয়ারটি ৮ টাকা দরে কেনাবেচা হলেও সম্প্রতি দাম বাড়ে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গাজীপুরের কোনাবাড়ির প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থাপিত সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়িকভাবে সফল হওয়া নিয়ে শুরু থেকেই সন্দিহান ছিল ডিএসই। আইপিওতে আসার আগে স্টক এক্সচেঞ্জের একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে গিয়ে দেখে, মাত্র দেড় হাজার বর্গফুটের স্থাপনা নিয়ে কারখানাটি স্থাপিত। বড় ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানোর মতো অবস্থা ছিল না। এ কারণে কোম্পানিটিকে আইপিও প্রক্রিয়ায় মূলধন উত্তোলন প্রস্তাবের বিপক্ষে মত দিয়েছিল ডিএসই। ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১০ বছরে সবচেয়ে বাজে যে ক`টি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে, তার একটি সুহৃদ।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

শেয়ারবাজার -এর সর্বশেষ