facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

বিপাকে পুঁজিবাজারের ছয় কোম্পানি


২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার, ০২:১০  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


বিপাকে পুঁজিবাজারের ছয় কোম্পানি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা ও শেয়ারহোল্ডাররা ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) সাম্প্রতিক নির্দেশনা নিয়ে জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। 

আর্থিক হিসাব-সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি সম্প্রতি এক সার্কুলারে বলেছে, শেয়ার মানি ডিপোজিটের জন্য নেওয়া টাকায় ছয় মাসের মধ্যে শেয়ার ইস্যু করতে হবে। তাছাড়া হিসাবে যুক্ত হওয়ার পর এ টাকা ফেরত দেওয়াও চলবে না।

জানা যায়, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সরকারি ছয় কোম্পানিতে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসাবে অন্তত ছয় হাজার ৬৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা গচ্ছিত রয়েছে। জমা দেওয়া অর্থের পুরোটাই সরকারের। কোম্পানিগুলো হলো- পাওয়ার গ্রিড, তিতাস গ্যাস, ডেসকো, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, রূপালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস কোম্পানি। বর্তমানে এগুলোর মোট পরিশোধিত মূলধন দুই হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, পরিশোধিত মূলধনের তুলনায় প্রায় আড়াইগুণ অর্থ মূলধনে রূপান্তরের জন্য পড়ে আছে হিসাবে।

কোম্পানিগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের আশঙ্কা, শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপুল এ অর্থ মূলধনে রূপান্তর করা হলে কোম্পানিগুলোর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ব্যাপক হারে কমবে। কারণ শেয়ার মানি ডিপোজিটের টাকা মূলধনে যোগ হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব কোম্পানির নতুন করে আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। কারণ কোম্পানিগুলো এ অর্থ এরই মধ্যে বিনিয়োগ করেছে।

এসব কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার বিভিন্ন সময়ে অর্থায়ন করেছে। এর ৬০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। বাকি অর্থ মূলধন হিসেবে জোগান দেওয়া হয়, যা শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসাবে জমা আছে। বহু বছর ধরে এভাবে টাকা জমেছে। এ অর্থের বিপরীতে শেয়ার ইস্যুর জন্য সরকার বা আইনগত দিক থেকে চাপ ছিল না। ফলে এ নিয়ে এতদিন চিন্তাও করেননি তারা। এফআরসির নতুন সার্কুলারের কারণে এখন বিষয়টি সামনে এসেছে।

অ্যাকাউন্টিংয়ের ভাষায় মালিকানা পেতে অর্থাৎ, শেয়ার কিনতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যখন সংশ্নিষ্ট উভয় পক্ষের সম্মতিতে ওই কোম্পানির হিসাবে যে অর্থ জমা দেয়, তাকে শেয়ার মানি ডিপোজিট বলে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পাওয়ার গ্রিডে শেয়ার মানি ডিপোজিট আছে ৫ হাজার ৭১ কোটি টাকা, যেখানে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৭১২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। রূপালী ব্যাংকে আছে ৬৮০ কোটি টাকা, যেখানে পরিশোধিত মূলধন ৪১৪ কোটি টাকা। তিতাস গ্যাসে আছে ১৫১ কোটি ২১ লাখ টাকা, যেখানে পরিশোধিত মূলধন ৯৮৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস কোম্পানিতে আছে ৭২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যেখানে পরিশোধিত মূলধন ১৬৬ কোটি টাকা। মেঘনা পেট্রোলিয়ামে চার কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যেখানে পরিশোধিত মূলধন ১০৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। ডেসকোতে আছে ৫৬৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যেখানে পরিশোধিত মূলধন ৩৯৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি এ সার্কুলারে বলা হয়েছে, মূলধন খাতে প্রাপ্ত অর্থ, যা শেয়ার মানি ডিপোজিট অন্য কোনো নামে কোম্পানির মূলধনে যোগ করা হলে, তা কোনোভাবে প্রত্যাহার করা যাবে না এবং সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে আইনগতভাবে মূলধনে রূপান্তর করতে হবে। তাছাড়া মূলধনে রূপান্তরের আগ পর্যন্ত প্রাপ্ত শেয়ার মানি ডিপোজিটকে সম্ভাব্য শেয়ার (পোটেনশিয়াল শেয়ার) হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং সে অনুযায়ী শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) গণনা ও প্রকাশ করতে হবে।

এফআরসির কর্মকর্তারা জানান, এ নীতিমালা এখন থেকে দেশের সব সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল-মামুন জানান, এফআরসির সার্কুলারটির বিষয়ে তিনি সেভাবে অবহিত নন। নীতিমালার বিষয়টি পর্ষদে তুলবেন। পর্ষদই এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

শেয়ার মানি ডিপোজিট বিষয়ে পাওয়ার গ্রিডের কোম্পানি সচিব জাহাঙ্গীর আজাদ জানান, ১৯৯৬ সালে কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে মূলধন হিসেবে সরকার যত টাকা দিয়েছে, সেগুলোর বিপরীতে কোনো শেয়ার ইস্যু করা হয়নি। প্রকল্প গঠনের সময় সরকারের সঙ্গে চুক্তি হিসেবে এ টাকা নেওয়া হয়। পাওয়ার গ্রিড এখন কী করবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তারাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

রূপালী ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) শওকত জাহান খান বলেন, রাইট শেয়ার বিক্রি করে মূলধন বাড়াতে সরকারের কাছে অনেক আগেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাব অনুমোদন হলে শেয়ার মানি ডিপোজিট থেকে সরকারের জন্য শেয়ার ইস্যু করা হবে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: