১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার, ১২:০৬ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে দায়ের করা অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার মামলার বাদী ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক নির্বাহী পরিচালক এমএ রশীদ খান পুঁজিবাজার-বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আকবর আলী শেখের আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। মামলার আসামি আজিজ মোহাম্মদ ভাই পলাতক থাকায় তার অনুপস্থিতিতেই এ মামলার বিচারকাজ চলছে।
বিএসইসির আইনজীবী মাসুদ রানা খান জানান, মামলার বাদী ও বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক এমএ রশিদ খান গতকাল আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হওয়ায় ২৩ সেপ্টেম্বর পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন আহমদের সাক্ষ্য মান্য করেছেন। তাদের এ মামলায় সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালতে উপস্থিত হতে সমন জারি করা হবে।
গতকাল আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে বোরহান উদ্দিন ও মোশাররফ হোসেন কাজল উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ২৯ আগস্ট অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। সেদিন আদালতে হাজির না থাকার কারণে আসামি আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
গত ৭ আগস্ট এ মামলার চার্জ গঠনের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও উভয় পক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ আগস্ট তারিখ নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। এর আগে এ বছরের ২৪ জুলাই ট্রাইব্যুনালে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের কপি দাখিলের মাধ্যমে মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয়। এ মামলার আসামি হচ্ছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং এর উদ্যোক্তা মোহাম্মদ ভাই ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই। এর মধ্যে মোহাম্মদ ভাই চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি মারা গেছেন। গত ২৪ জুলাই আসামিপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন ট্রাইব্যুনালে মোহাম্মদ ভাইয়ের মৃত্যুসনদ দাখিল করেন। এর আলোকে মোহাম্মদ ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদ ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি আদালতকে নিশ্চিত করে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে দায়ের করা অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলাটির কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৩ সাল থেকে স্থগিত ছিল। ২০১৫ সালে মামলাটি পুঁজিবাজার-বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। গত বছরের ৩০ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও শহিদুল করিমের দ্বৈত বেঞ্চ মামলাটির বিচার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ বাতিলের আদেশ দেন। এতে মামলাটি পুনরায় সচল হয়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয় অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ। এক্ষেত্রে ১০০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে ২০০ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে রাইট শেয়ার ইস্যু করে কোম্পানিটি। সে সময় এর শেয়ারের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ২০০টি। কিন্তু ২০০ টাকা প্রিমিয়ামে মাত্র ৩১ হাজার ৫৯০টি রাইট শেয়ারের আবেদন জমা পড়েছিল। বাকি ১ লাখ ৩ হাজার ৬১০টি শেয়ারের বিপরীতে কোনো আবেদন জমা পড়েনি। সে সময় কয়েক দফা বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে শেয়ারের দর বাড়িয়েছিল অলিম্পিক। যেখানে ১৯৯৬ সালের ৩০ জুন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৫৪৯ টাকা, সেটি মাত্র সাড়ে চার মাসের ব্যবধানে একই বছরের ১৬ নভেম্বর ৪ হাজার ৪৭৫ টাকায় দাঁড়ায়। আলোচ্য সময়ে শেয়ারের দাম বেড়েছিল সাড়ে আট গুণ। পরবর্তী সময়ে একই মালিকের কোম্পানি এমবি ফার্মা বেশি দামে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা নিয়ে যায়। এরপর থেকেই কমতে থাকে অলিম্পিকের শেয়ার দর। মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দর কমে ১ হাজার ৪০ টাকায় নেমে আসে। এ ঘটনায় ১৯৯৯ সালে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং এর দুই উদ্যোক্তা মোহাম্মদ ভাই ও আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএসইসি।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।