facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে নেই


১১ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার, ০৭:৩৮  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে নেই

বাজেটকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকার পর নতুন করে আবার দরপতন শুরু হয়েছে শেয়ারবাজারে। বিশ্নেষকরা মনে করছেন, প্রণোদনার আশায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল তা পূরণ না হওয়ায় হতাশা তৈরি হয়েছে। নতুন করে আশাবাদী হওয়ার মতো কোনো খবর না থাকায় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমছে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের খবর, যা টানা দরপতনকে উসকে দিয়েছে।

বাজার-সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে সক্রিয় নেই। আইপিও আইন সংশোধনসহ নানা ইস্যুতে তারা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এরই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে লেনদেনে।

গতকাল বুধবার পর্যন্ত দুই সপ্তাহের আট কার্য দিবসে ৭০ ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের কারণে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৯৯ পয়েন্ট হারিয়েছে। সূচক পতনের হার ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ সময়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৩ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১০০টির দর বেড়েছে, কমেছে ২৪৮টির। যেগুলোর দর বেড়েছে, তার ৭৬টিই ছিল বীমা খাতের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড। বীমা খাতের ৪৭ কোম্পানির মধ্যে ৩৯টির দর বেড়েছে। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ৩৭ মিউচুয়াল ফান্ডের সবগুলোর বাজারদর গত দুই সপ্তাহে বেড়েছে।

অন্যদিকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন, বস্ত্র, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, সিমেন্ট, সিরামিক, তথ্য ও প্রযুক্তি, সেবা ও নির্মাণ খাতের প্রায় সব শেয়ারের দর কমেছে। এই খাতগুলোর ২৬৭ শেয়ারের মধ্যে গত দুই সপ্তাহে মাত্র ২৪টির বাজারদর বেড়েছে এবং ২৩৯টিই দর হারিয়েছে, অপরিবর্তিত ছিল বাকি পাঁচটির দর।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে মাত্র ১৪ শতাংশ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারদর বৃদ্ধির বিপরীতে ৭৯ শতাংশ দর হারিয়েছে। দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতেও প্রায় ১৫ শতাংশের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৭৮ শতাংশের দরপতন হয়েছে।

বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের কারণে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৫২৩০ পয়েন্টে নেমেছে। সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ৯৮ পয়েন্ট হারিয়ে ৯৭২৭ পয়েন্টে নেমেছে।

গতকাল বীমা খাতের বাইরে মিউচুয়াল ফান্ডসহ অন্য সব খাতের প্রায় সব শেয়ারের দর কমেছে। যেমন ব্যাংক খাতের ৩০ কোম্পানির মধ্যে সাতটির দর বেড়েছে, কমেছে ১৩টির দর। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের ২৩ কোম্পানির মধ্যে ২১টিরই দরপতন হয়েছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ১৯ কোম্পানির সবগুলো, প্রকৌশল খাতের ৩৮ কোম্পানির মধ্যে ৩৫টির, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩২ কোম্পানির মধ্যে ২৬টির, বস্ত্র খাতের ৫৫ কোম্পানির মধ্যে ৪৯টির, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ১৭ কোম্পানির মধ্যে ১৬টির, সিমেন্ট খাতের সাত কোম্পানির ছয়টি, সিরামিক খাতের পাঁচ কোম্পানির সবগুলোর, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের নয় কোম্পানির আটটিরই দরপতন হয়েছে। বাকি সব খাতেও ছিল একই চিত্র।

এমনকি গত প্রায় তিন সপ্তাহে দরবৃদ্ধির পর গতকাল ৩৭টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৩টিরই দরপতন হয়েছে। একমাত্র বীমা খাতে ছিল ঊর্ধ্বমুখী ধারা। এ খাতের ৪৭ কোম্পানির মধ্যে ২৪টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৯টির এবং শেষ পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিল চারটির দর।

পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, গতকাল সিঙ্গার বাংলাদেশ, মারিকো বাংলাদেশ ও রেকিট বেনকিজার ছাড়া তালিকাভুক্ত বাকি ৯ বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। একই চিত্র ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে। লেনদেন হওয়া ১৮ সরকারি কোম্পানির মধ্যে ১৭টিরই দরপতন হয়েছে। শুধু ন্যাশনাল টিউবসের শেয়ারদর ১০ পয়সা বেড়েছে।

এ দরপতন বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের লেনদেন চিত্র বলছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে নেই, উল্টো শেয়ার বিক্রি করছেন। দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও সক্রিয় নেই। তিনি বলেন, নতুন করে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ হওয়ার মতো বিনিয়োগকারীদের সামনে কিছু নেই। বাজেট নিয়েও হতাশ হয়েছেন তারা। বাজেটের আগে ঘটা করে দায়িত্বশীলরা বলেছিলেন বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য এমন প্রণোদনা থাকবে, তারা ভাবতেও পারবেন না। কিন্তু যখন ঘোষণা হলো, দেখা গেল তালিকাভুক্ত কোম্পানির ওপর প্রকারান্তরে কর বাড়ানো হয়েছে। সত্যিকারের বিনিয়োগকারীরা এটিকে ভালোভাবে নেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে লেনদেনে। বাজেট ঘোষণার পর থেকেই এ নেতিবাচক ধারা শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের খবর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক বাড়িয়েছে। এ কারণে গতকাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩ কোম্পানির মধ্যে ২১টির দরপতন হয়েছে। গতকাল পিপলস লিজিং টানা তৃতীয় দিনে ক্রেতাশূন্য ছিল। যদিও সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে কিছু শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব অন্য শেয়ারেও পড়ছে বলে মনে করেন আবু আহমেদ।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: