facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪

Walton

বিএনপি ভাঙলে মন্ত্রিত্ব ছাড়বে জাতীয় পার্টি


০৯ আগস্ট ২০১৫ রবিবার, ০৪:০৩  এএম


বিএনপি ভাঙলে মন্ত্রিত্ব ছাড়বে জাতীয় পার্টি

ভাঙন অথবা দ্বিধাবিভক্তিতে পড়ে আরও কাবু হবে বিএনপি। তারপর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে ‘প্রকৃত’ বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নির্বাচনী মাঠে নামবে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটির নীতি–নির্ধারকেরা এ রকম একটি ছক কষে এগোচ্ছেন। জাপার দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে বিএনপিতে কিছু না হওয়া পর্যন্ত সরকারের সঙ্গেই থাকা। দলের তিন সাংসদও ওই সময় পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় থাকবেন। জাপার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মনে করছেন কাছাকাছি সময়ে বিএনপিতে ভাঙন বা সন্দেহ-অবিশ্বাসে দলটিতে একটা কিছু হবে। এমন একটি সময়ের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। জানতে চাইলে দলের এমন সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করেন জাপার গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একজন নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলাম। সামনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হতে পারে। বিশেষ করে, বিএনপি যদি ভেঙে যায় বা দুর্বল হয়, তখনই জাপা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বিএনপি না ভাঙা পর্যন্ত এ ধরনের সম্ভাবনা কম।’ এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণ সম্পর্কে দলীয় সূত্রগুলো জানায়, বিএনপিতে ভাঙন বা দলটিকে আরও দুর্বল করার লক্ষ্যে নানা প্রক্রিয়া চলছে। জাপা ও সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একটি রাজনৈতিক মেরুকরণ না হওয়ার আগে জাপার সদস্যদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা দেবে, যা উভয়ের জন্যই ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সম্প্রতি জাপার সংসদীয় দলের প্রধান ও বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ সরকারের দুজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তাঁরা এ রকম ধারণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও এরশাদ ও রওশন মাঝেমধ্যেই দলীয় সাংসদদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের কথা বলছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের ব্যাপারে আমরা একমত। প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে সময়মতো সিদ্ধান্ত নেব।’ এ বিষয়ে তাঁর স্ত্রী রওশনেরও দ্বিমত নেই বলে জানান তিনি। তবে, সরকারে জাপার থাকা না-থাকার বিষয়ে আলাদা করে রওশন এরশাদের বক্তব্য জানা যায়নি। দলীয় সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভায় থাকা না-থাকার প্রশ্নে জাপায় এরশাদ ও রওশনের দ্বন্দ্ব নতুন সমীকরণ পেয়েছে। সম্প্রতি রওশন সরকার থেকে বের হয়ে ‘প্রকৃত’ বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের আগ্রহ দেখালে এরশাদ পাল্টা অবস্থান নেন। মওকা পেয়ে মন্ত্রীরাও রওশনের পক্ষবদল করেন। দলটির নেতারা বলছেন, অনেক দিন পর মন্ত্রী ও দলের সাংসদদের কাছে টেনে রওশনকে কোণঠাসা অবস্থায় ফেলেছেন এরশাদ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের ‘কর্তৃত্ব’ অনেকটাই রওশনের কবজায় ছিল। রওশনকে ঘিরে জাপায় একটি ‘বলয়’ তৈরি হয়। এ অংশটি এরশাদকে দলে কোণঠাসা করা বা তাঁকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার চেষ্টা চালায়। দেড় বছরের মাথায় ওই বলয় থেকে মন্ত্রী-সাংসদেরা বেরিয়ে এরশাদের দিকে ঝুঁকেছেন।Rowshon_ershad_thereport24 অবশ্য দলের মন্ত্রী-সাংসদদের এই পক্ষবদল সম্পর্কে জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমদের মূল্যায়ন কিছুটা ভিন্ন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান সংসদের যতই মেয়াদ কমবে, ততই দলের গুরুত্ব বাড়বে। এমপিরা চাচ্ছেন দলের স্থানীয় নেতৃত্ব দিতে। মনোনয়ন পেতে স্যারের (এরশাদ) সমর্থন লাগবে। এ কারণে দলের চেয়ারম্যান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন।’ জাপার দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে রওশনের নেতৃত্বে যেসব প্রভাবশালী নেতা ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের বড় একটি অংশ এখন রওশনকে এড়িয়ে চলছেন। তাঁর সঙ্গে দলের মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক (চুন্নু) ও মসিউর রহমানের (রাঙ্গা) কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। নির্বাচন-পরবর্তী দিনগুলোতে মন্ত্রীরা এরশাদকে এড়িয়ে চললেও এখন এরশাদের সঙ্গে তাঁদের ভাব বেড়েছে। জানতে চাইলে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান এ বিষয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। রওশনপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন এখন এরশাদের খুবই আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন। অথচ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট ধরে রাখায় এবং রওশনের নেতৃত্বে জাপাকে নির্বাচনে রাখার ক্ষেত্রে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাও হন তিনি। আবার এরশাদের আস্থাভাজন বলে পরিচিত এ বি এম রুহুল আমিন হওলাদার মহাসচিবের পদ খোয়ানোর পর ঝুঁকেছেন রওশনের দিকে। নেতাদের এই পক্ষবদলকে ‘ব্যক্তিস্বার্থ’ হাসিল এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ‘দুর্বলতা’ বলে মনে করছে জাপার দায়িত্বশীল নেতাদের একটি অংশ। এতে লাভবান হচ্ছে সরকারে থাকা মন্ত্রী, দলের কিছু সাংসদ ও সুবিধাভোগী কিছুসংখ্যক নেতা। তাঁরা এ-ও বলেন, ক্ষমতা ও সরকারি সুযোগ-সুবিধার লোভে এরশাদ ও রওশন দুজনই সরকারের সঙ্গে আছেন। সুযোগ বুঝে মন্ত্রী-সাংসদেরা একবার এরশাদ, একবার রওশনের পক্ষ নিচ্ছেন। এ বিষয়ে জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, চেয়ারম্যানের অনুমোদন বা চিঠি ছাড়া জাপার তিনজন বর্তমান সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন। এটা দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। এ কারণে দলে তাঁদের প্রাথমিক সদস্যপদই থাকে না। তিনি বলেন, মন্ত্রীরা দলের কথা শুনছেন না। কারণ, নিয়ন্ত্রণ এখন পার্টির হাতে নেই। পরোক্ষভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: