facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

বাতিল হচ্ছে ৫০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের শর্ত


৩০ জুন ২০১৯ রবিবার, ০২:৪৬  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


বাতিল হচ্ছে ৫০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের শর্ত

 

পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা হলে এতদিন দেশি সব কোম্পানির শেয়ারবাজারে আসা বাধ্যতামূলক ছিল। এই বাধ্যবাধকতা এখন আর থাকছে না। ১৩ বছর আগের এ সংক্রান্ত আইনি বিধান তুলে নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সম্প্রতি এক নির্দেশনায় এ বিষয়ক আগের নির্দেশনাটি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সংস্থাটি।

পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা হলেই দেশি বা বিদেশি সব কোম্পানিকে আইপিও আবেদন করতে হবে- এমন বাধ্যবাধকতা আরোপ করে ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ক নির্দেশনাটি জারি করেছিল বিএসইসি। তখন সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। ২০১০ সালের ৫ মে নির্দেশনাটির সামান্য সংশোধন করা হয়। এ সিদ্ধান্ত বাতিলের বিষয়ে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিধানটি কেন বিএসইসি তুলে নিচ্ছে, সেটির যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না।

শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্ট ও বিশ্নেষকরা কমিশনের এ সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, কমিশন এমন সময় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন সরকার চাচ্ছে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক ঋণনির্ভরতা কমাতে কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারমুখী হোক। কয়েক বছর আগেও সরকারের মনোভাব এমন ছিল না। এখন যখন সরকার ইতিবাচক, তখন কমিশন কেন উল্টো পথ ধরেছে তা বোধগম্য নয়।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন এখন থেকে কমিশন দেবে না। এ জন্য সংশ্নিষ্ট সব নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ নির্দেশনাটিও একই রকম হওয়ায় তা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিএসইসি কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে এ বিধানটি কার্যকর করতে ৪০ কোটি টাকার বেশি বা ৫০ কোটি টাকার বেশি পরিশোধিত মূলধনের তালিকা চেয়ে যৌথ মূলধনী কোম্পানিগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছিল বিএসইসি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে তখন পর্যন্ত ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় এ তথ্য দিতে পারেনি। এর পরের কোনো কমিশন নির্দেশনাটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করেনি।

উল্টো ২০১৬ সালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (তৎকালীন বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড) সুপারিশে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে ছাড় দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছিল, কোনো বিদেশি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা হলে আইপিও আবেদন করতে হবে। তবে এ সিদ্ধান্তও মানা হয়নি।

জানতে চাইলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যবসায় অনুষদ বিভাগের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মূসা বলেন, প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর অনুমোদনের সঙ্গে এ বিধানের কোনো সংযোগ নেই। এটা আইপিও বিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত।

বিএসইসির শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, বিধানটি দীর্ঘ ১৩ বছরেও কার্যকর করা না হওয়ার কারণে তা তুলে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, যে আইন কার্যকর করা যাচ্ছে না, তা রেখে লাভ কী। তবে বিধানটি এত বছর কার্যকর করতে না পারার বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পারেননি তিনি।

বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, কোন কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা বা ৫০ কোটি টাকার বেশি সে তালিকা বিএসইসির কাছে নেই। এ তথ্য জানতে আরজেএসসিকে একাধিক দফায় চিঠি দেওয়া হলেও তথ্য মেলেনি। তাই কোনো উদ্যোগও নেওয়া যায়নি।

১৩ বছর আগে বিধানটি করার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানান, তালিকাভুক্ত হলে তুলনামূলকভাবে কোম্পানি পরিচালনায় সুশাসন বাড়ে, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। তাছাড়া কর ফাঁকিরও সুযোগ কমে যায়। ফলে সরকারও বেশি কর পায়। অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার স্বার্থে বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সুশাসন বাড়ানো জরুরি। এ লক্ষ্যেই বিধানটি করা হয়েছিল।

এ ছাড়া দেশের বৃহৎ শিল্পের পুঁজির সংস্থানে ভারসাম্য আনাও এ বিধানের লক্ষ্য ছিল বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, দেশের কোম্পানিগুলো অর্থায়নের জন্য এখনও ব্যাংকনির্ভর। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী বলছেন, স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করায় ব্যাংক ব্যবস্থা সংকটে পড়েছে। বড় কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারমুখী করা গেলে এ সংকট হতো না। তাই বিধানটি একেবারে তুলে না নিয়ে প্রয়োজনে ৫০ কোটি টাকার পরিবর্তে সীমা কিছুটা বাড়িয়ে সংশোধনের পরামর্শ দেন তিনি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: