০৯ জুন ২০১৮ শনিবার, ০১:৪৬ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বৃহস্পতিবার (৭ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী কিছু পণ্যের দাম বাড়ানো ও কিছু পণ্যের দাম কমানোর প্রস্তাব করেন। এবারের বাজেটের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি। বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
দাম বাড়বে : স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ব্যবহার হ্রাস করার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এনার্জি ড্রিংকের উপর ২৫ শতাংশের সম্পুরক শুল্কের পরিবর্তে ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে আগামি অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। এ কারণে এ পণ্যটির দাম বাড়বে।
এছাড়া, প্রসাধনী সামগ্রী বিশেষ করে সানস্ক্রিন বা সান সামগ্রী, হাত নক বা পায়ের প্রসাধনী সামগ্রীর উপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কারোপ রয়েছে। বাণিজ্য সমতা বিধানের লক্ষ্যে সমজাতীয় অন্যান্য সামগ্রীর উপরও ১০ শতাংশ শুল্কারোপর প্রস্তাব করা হয়েছে।
শেভ করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সামগ্রী, শরীরের দূর্গন্ধ এবং ঘাম দূরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী সুগন্ধযুক্ত বাথসল্ট এবং অন্যান্য গোসলের সামগ্রী, কক্ষের দুর্গন্ধ দূরীকরণে ব্যবহৃত অন্যান্য সুগন্ধি সামগ্রী, ও সমজাতীয় পণ্যের ব্যবহার সীমিত করার লক্ষ্যে সম্পূরক শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যখাতের ঝুঁকি বিবেচনায় ফিল্টারযুক্ত বিড়ি, জর্দা, গুল, সিগারেটের পেপার ও বিড়ি পেপার আমদানির উপর শুল্কারোপ ২০ শতাংশ এর পরিবর্তে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিরামিকের বাথটাব ও জিকুজি, শাওয়ার, ট্রের উপর সম্পুরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিদ্যুত্ ব্যবহার হ্রাস কল্পে আলট্রা ভায়োলেট বা ইনফ্রা-রেড ল্যাম্প ব্যতীত অন্যান্য ফিলামেন্ট ল্যাম্পের ব্যবহার কমানোর জন্য ১০ শতাংশ সম্পুরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাটের ব্যবহার বাড়ানো ও পলিথিনের ব্যবহার কমানোর জন্য ৫ শতাংশ সসম্পুরক শুল্কারোপ করা হয়েছে।
গম, আলু, কাসাভা ও অন্যান্য স্ট্রার্চের মূল্য বৃদ্ধির জন্য নিয়ন্ত্রণমুলক শুল্কারোপ করা হয়েছে প্রস্তাবি (২০১৮-২০১৯) অর্থ বছরের বাজেটে। এসব পণ্যের আগে কোনো নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ছিল না। বর্তমানে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে পণ্যগুলোর দাম বাড়বে।
এছাড়া বিভিন্ন পণ্যের উপর শুল্কারোপ করায় সেগুলোর দাম বাড়বে। বাজারে যেসব পণ্যের দাম বাড়বে সেগুলো হচ্ছ প্রাকৃতিক মধু, আমদানিকৃত নারকেল, বাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট, বিভিন্ন ধরণের কফি, গ্রিন টি, সুগার কনফেকশনারী, সাদা চকলেট, কোকোয়া, কোয়াযুক্ত চকলেট, তৈরি চকলেটের উপর শুল্কারোপ করা হয়েছে। কাজেই এসব পণ্যের দাম বাড়বে।
আমদানিকৃত ব্যাটারির মূল্য বৃদ্ধি পাবে, মোবাইল ব্যাটারি চার্জার, ইউপিএস বা আইপিএস ও ভোল্টেজ স্যাবিলাইজারের শুল্ক ১৫ শতাংশ, অটোমেটিকস সার্কিট ব্রেকারের শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বাইসাইকেল তৈরির ব্রেকস, স্যাডডের উপর শুল্কারোপর প্রস্তাব করা হয়েছে। কাজেই এসব পণ্যের দাম বাড়বে।
দাম কমবে : কৃষিজমির রেজিস্ট্রেশন ফি, রড, সিমেন্ট, হাইব্রিড মোটরকার, ক্যানসারের ওষুধ, টায়ার-টিউব তৈরির কাচামাল, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ, ডে কেয়ার হোম সার্ভিস, দেশি মোটর সাইকেল, আমদানি পল্ট্রি খাদ্য, দেশীয় রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার, গুঁড়ো দুধ, পাউরুটি।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের পঞ্চম বাজেটটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে মন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবিত বাজেটে সম্মতিসূচক স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
আগের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরও সংশোধন করা হয়েছে বাজেটের আকার। ২৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা কমিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের সংশোধিত আকার ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। এ থেকে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বড় বাজেট দিতে যাচ্ছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। আয় কাঠামোর মধ্যে রাজস্ব খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা ও করবহির্ভূত ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি ঋণনির্ভরতাও বাড়ছে এবারের বাজেটে। ঘাটতি বাজেটের অর্থসংস্থানে ঋণের দিকে ঝুঁকছে সরকার।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।