facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ পর্ষদ পুনর্গঠনে বিএসইসির চিঠি


০১ এপ্রিল ২০১৭ শনিবার, ০৬:২৬  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ পর্ষদ পুনর্গঠনে বিএসইসির চিঠি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির এক বছরের মাথায় লোকসান গুনতে শুরু করে প্রকৌশল খাতের সুহৃদ  ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করেছেন একজন শেয়ারহোল্ডার। ওই আবেদনে পরিচালকরা কোম্পানির সব সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন এমন আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন তিনি। অভিযোগ আমলে নিয়ে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে সুহৃদ  ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে বিএসইসি।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, নাজমুন নাহার সানজিদা নামক সুহৃদ  ইন্ডাস্ট্রিজের একজন শেয়ারহোল্ডার কোম্পানিটির বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ তুলে এর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি বিএসইসি বরাবর চিঠি দিয়েছেন। গত ১৫ মার্চ সংস্থাটির এসআরএমআইসি বিভাগের এক বৈঠকে এ অভিযোগ আমলে নিয়ে সুহৃদ  ইন্ডাস্ট্রিজকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এ ধারাবাহিকতায় পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে নাজমুন নাহার সানজিদার চিঠির ব্যাখ্যা চেয়ে সুহৃদ  ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল হক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল হক চিঠিতে উল্লিখিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের উৎপাদন কার্যক্রম সঠিকভাবে চলছে। একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সব আইন মেনেই আমরা কোম্পানি চালাচ্ছি।’

বিএসইসিতে পাঠানো নাজমুন নাহার সানজিদার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সুহৃদ  ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারমূল্য ধারাবাহিকভাবে পতনের মূল কারণ, পরিচালকরা মাত্র নয় শতাংশ শেয়ার ধারণ করছে। কোম্পানিটি লোকসানে চলছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। ফলে এক বছরের বেশি সময় ধরে জেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে। আইপিওর টাকা দিয়ে মেশিন ও বিল্ডিং করার কথা থাকলেও তা না করে শর্ট টার্ম লোন পরিশোধ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

জানা গেছে, শেয়ারের দর পতনের সঙ্গে সঙ্গে নামমাত্র শেয়ার হাতে রেখে অবশিষ্ট পুরো শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন কোম্পানির বর্তমান পরিচালকরা। ২০১৫ সালের ৩০ জুন কোম্পানির পরিচালকদের হাতে ৩২ দশমিক ৬২ শতাংশ শেয়ার ছিল। বিক্রির পর এখন তাদের হাতে শেয়ার রয়েছে মাত্র নয় দশমিক ৪১ শতাংশ। বাকি ৯০ দশমিক ৫৯ শতাংশ শেয়ারই রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

‘কোম্পানিটিকে লাভজনক করতে পর্ষদের কোনো পরিকল্পনাও নেই’ উল্লেখ করে তিনি অভিযোগপত্রে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে বর্তমান পর্ষদ কোম্পানিটির সব সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে পালিয়ে যাবে। শেয়ারহোল্ডাররা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এ অবস্থায় ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার থেকে কোম্পানিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে উত্তরণের জন্য বর্তমান পর্ষদ ভেঙে দিয়ে আইনানুযায়ী পর্ষদ পুনর্গঠন ও চেয়ারম্যানকে অযোগ্য ঘোষণার দাবি জানান তিনি।

এদিকে সম্প্রতি গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে সুহৃদ  ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা ঘুরে দেখা যায়, উৎপাদন কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। চারটি ইউনিটে আগে তিন শিফটে কাজ চললেও এখন চলছে এক শিফটে। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ-গ্যাস না পাওয়ার কারণে উৎপাদন কার্যক্রমে ধীরগতি বলে দাবি করেছেন কারখানা ইনচার্জ আলমগীর হোসেন।

কারখানার শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৫ সালের দিকে কারখানায় দুই শতাধিক শ্রমিক কাজ করলেও বর্তমানে শতাধিকের কম লোক কাজ করছেন। মালিকপক্ষের দ্বন্দ্ব ও অর্থের অভাবে ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না বলে জানান তারা।

২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে সুহৃদ  ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার লেনদেন শুরু হয়। এর আগের অর্থবছরে (২০১৩-১৪) কোম্পানিটি ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। এরপরের দুই বছর লোকসানে থাকায় ‘নো’ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। একদিকে কোম্পানির লোকসান, অন্যদিকে শেয়ারদর কমে যাওয়ায় উভয় দিক দিয়ে লোকসানে পড়ে চরম হতাশায় কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) মহামান্য হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত থাকায় ব্যাংক থেকে লোন পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রায় ১০ মাস কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। একইসঙ্গে গাজীপুরে কারখানায় পর্যাপ্ত গ্যাস-বিদ্যুৎ না পাওয়ায় ডিজেলে উৎপাদন কার্যক্রম চালানো হয়।

কোম্পানিটি পাইপ, প্লাস্টিকের কাপ উৎপাদন করে। নতুন করে পিভিসি পাইপ উৎপাদন  কার্যক্রম চালু করার কথা থাকলেও এখনও শুরু করতে পারেনি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি এক দশমিক ৬৪ টাকা মুনাফা করলেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দশমিক শূন্য তিন টাকা লোকসান করেছে। এ লোকসানের পরিমাণ বেড়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে হয়েছে দশমিক শূন্য ৪ টাকা।

সহদ ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ারপ্রতি এক দশমিক শূন্য ৯ টাকা আয় ও ১৪ দশমিক ১১ টাকার সম্পদ দেখিয়ে ২০১৪ সালে বাজার থেকে ১৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ২০১৬ সালের ৩০ জুন কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক শূন্য আট টাকা। ১০ টাকা মূল্যে এক কোটি ৪০ লাখ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে এ টাকা সংগ্রহ করা হয়। এক্ষেত্রে ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: