facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

বহু শেয়ার দর হারানোর কারণ


১০ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার, ০৩:২২  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


বহু শেয়ার দর হারানোর কারণ

অব্যাহত দরপতনে শেয়ারবাজারে অনেক কোম্পানির শেয়ার এখন অভিহিত মূল্য বা ফেস ভ্যালু ১০ টাকার চেয়েও কম দরে কেনাবেচা হচ্ছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এমন শেয়ার ৪৪টি, যা এ বাজারে তালিকাভুক্ত মোট শেয়ারের প্রায় ১৪ শতাংশ।

তালিকাভুক্ত মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড বিবেচনায় নিলে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ২১ শতাংশই অভিহিত মূল্যের তুলনায় কমে কেনাবেচা হচ্ছে। ডিএসইতে বর্তমানে তালিকাভুক্ত শেয়ারের সংখ্যা ৩১৯টি।

তালিকাভুক্তির মাত্র তিন বছরের মাথায় ইয়াকিন পলিমার গতকাল বুধবার সাড়ে সাত টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। তালিকাভুক্তির সময় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১ টাকার বেশি। কিন্তু গত বছর তা মাত্র ১৪ পয়সায় নামে। ৩০ জুন ২০১৯ সমাপ্ত হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে মাত্র ১০ পয়সা মুনাফা করার তথ্য দিয়েছে কোম্পানিটি।

সাম্প্রতিক সময়ে অজ্ঞাত কারণে ফান্ডগুলোর বাজার দর অনেকটা বাড়লেও তালিকাভুক্ত মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বেশিরভাগ বহু বছর ধরে অভিহিত মূল্যের নিচে কেনাবেচা হচ্ছে। তালিকাভুক্ত ৩৭ মেয়াদি ফান্ডের মধ্যে বর্তমানে ৩০টিরই দর অভিহিত মূল্যের নিচে।

বাজারসংশ্নিষ্টরা জানান, গত কয়েক বছরে অনেক কোম্পানি মুনাফার মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেয়ারবাজারে আইপিও অনুমোদন নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানিগুলোর প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসছে। এ ছাড়া তালিকাভুক্তির মাধ্যমে নিজেদের শেয়ার ব্যবসা থেকে সুবিধা নিতে অনেক কোম্পানি প্রয়োজনের অতিরিক্ত শেয়ার ইস্যু করে প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় বিক্রি করেছে। এরপর সংশ্নিষ্টরা শেয়ার বিক্রি করে মুনাফাসহ পুঁজি নিয়ে বের হওয়ার পর শেয়ারগুলোর ক্রেতা সংকট দেখা দিচ্ছে।

একদিকে কোম্পানির দুর্বল আর্থিক অবস্থা প্রকাশ হওয়া, অন্যদিকে মালিকপক্ষসহ প্লেসমেন্ট হোল্ডাররা শত শত কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে নিজেরা বের হয়ে যাওয়ার কারণে বাজারে তারল্য সংকটও তৈরি হচ্ছে। এ কারণে বহু শেয়ার দর হারাচ্ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্রমাগত লোকসান করায় বিনিয়োগ কার্যক্রম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। এরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক শেয়ারবাজারে।

অভিহিত মূল্যের কমে কেনাবেচা হওয়া ৪৪ শেয়ারের মধ্যে একক খাত হিসেবে বস্ত্র খাতের সর্বাধিক ১৬ শেয়ার রয়েছে। বস্ত্র খাতে এখন তালিকাভুক্ত মোট শেয়ার ৫৫টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯টি শেয়ার ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের। এ খাতের তালিকাভুক্ত মোট শেয়ার ২৩টি। অভিহিত মূল্যের কমে কেনাবেচা হওয়া তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬ শেয়ার রয়েছে ব্যাংক খাতের। এ ছাড়া প্রকৌশল খাতের ৪টি, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৪টি, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ২টি, বিবিধ খাতের ২টি এবং সিরামিক খাতের ১টি শেয়ার।

বস্ত্র খাতের অভিহিত মূল্যের কমে কেনাবেচা হওয়া শেয়ারগুলো হলো- সিএনএ টেক্সটাইল, তুং-হাই নিটিং, ফ্যামিলি টেক্সটাইল, তাল্লু স্পিনিং, ঢাকা ডাইং, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস, ডেল্টা স্পিনার্স, আরএন স্পিনিং, ম্যাকসন্স স্পিনিং, জাহীন টেক্সটাইল, মেট্রো স্পিনিং, জাহীন স্পিনিং, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, মিথুন নিটিং, মোজাফফর হোসেইন স্পিনিং মিলস ও অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ।

এসব শেয়ারের মধ্যে গতকাল সর্বনিম্ন ২ টাকা ২০ পয়সা দরে কেনাবেচা হয়েছে সিএনএটেক্স ও ৮ টাকা ৮০ পয়সা দরে কেনাবেচা হয়েছে মোজাফফর হোসেইন স্পিনিং মিলসের শেয়ার। বাকিগুলো কেনাবেচা হচ্ছে ২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৭০ পয়সা দরে।

অভিহিত মূল্যের তুলনায় কমে কেনাবেচা হওয়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ৯ শেয়ার হলো- বিআইএফসি (২.৭০ টাকা), ফারইস্ট ফাইন্যান্স (৩ টাকা), ফার্স্ট ফাইন্যান্স (৩.৫০ টাকা), ইন্টারন্যাশনাল লিজিং (৫.৭০ টাকা), প্রিমিয়ার লিজিং (৬ টাকা), এফএএস ফাইন্যান্স (৭ টাকা), ইউনিয়ন ক্যাপিটাল (৭.৪০ টাকা) এবং প্রাইম ফাইন্যান্স (৭.৪০ টাকা)। এছাড়া অবসায়নের প্রক্রিয়ায় থাকা পিপলস লিজিং কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বন্ধের আগে সর্বশেষ ৩ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছিল।

এ তালিকায় থাকা ব্যাংক খাতের ছয় কোম্পানি হলো- আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (৩.৭০ টাকা), ন্যাশনাল ব্যাংক (৭.৭০ টাকা), এবি ব্যাংক (৮.১০ টাকা), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক (৯ টাকা), আইএফআইসি ব্যাংক (৯.৩০ টাকা) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (৯.৫০ টাকা)।

প্রকৌশল খাতের চার কোম্পানি হলো- অ্যাপোলো ইস্পাত (৫ টাকা), ইয়াকিন পলিমার (৭.৫০ টাকা), অলিম্পিক এক্সেসরিজ (৭.৮০ টাকা) এবং গোল্ডেন সন (৮ টাকা)। ওষুধ ও রসায়ন খাতের চার কোম্পানি হলো- বেক্সিমকো সিনথেটিক্স (৪.২০ টাকা), কেয়া কসমেটিক্স (৪.৩০ টাকা), সেন্ট্রাল ফার্মা (৮.৭০ টাকা) ও ফার কেমিক্যাল (৯.৩০ টাকা)। অভিহিত মূল্যের কমে কেনাবেচা হওয়া ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের দুই শেয়ার হলো- ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (১.৫০ টাকা) ও বিডি সার্ভিসেস (৫.২০ টাকা)। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এ মুহূর্তে সবচেয়ে কম মূল্যে কেনাবেচা হওয়া শেয়ার। অবশ্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ার না থাকায় বিডি সার্ভিসেস শেয়ারটি কালেভদ্রে কেনাবেচা হয়। তবে বিবিধ খাতের ন্যাশনাল ফিড মিলস (৮.৪০ টাকা) ও খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ (৯.১০ টাকা) এবং সিরামিক খাতের ফু-ওয়াং সিরামিক (৯.১০ টাকা) সর্বশেষ অভিহিত মূল্যের কমে কেনাবেচা হয়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: