facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

বখাটের প্রেম বাসনা, না রাখায় খুন হুমায়রা


১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ সোমবার, ০৮:০০  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


বখাটের প্রেম বাসনা, না রাখায় খুন হুমায়রা

আজকাল সংবাদমাধ্যমের শিরোনামের খুব পরিচিত বিষয় ‘প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বখাটের হাতে খুন...।’ এ কেমন প্রেম, কেমন ভালোবাসা? ‘মেয়েটির’ ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতা এতই তীব্র_ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বখাটে পশুরা স্বরূপ দেখায়। এই পশুরা কখনো প্রেমিক হতে পারে না। এটা তাদের বাসনা।

১৬ ডিসেম্বর শনিবার সুনামগঞ্জে ঘটলো এমনই এক ঘটনা।

ঘোষণা দিয়ে হুমায়রা আক্তার মুন্নীকে হত্যা করলেন বখাটে ইয়াহিয়া (২২)। প্রেমের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে দিনের পর দিন হুমায়রাকে উত্ত্যক্ত করছিলেন ইয়াহিয়া। শনিবার রাতে ঘরে ঢুকে পড়ার টেবিলেই তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান ইয়াহিয়া। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে।

হুমায়রা ছিল দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। মা রাহেলা বেগম ও ছোট ভাই মাহিদ আহমদের (৮) সঙ্গে থাকত সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহরের মাদানী মহল্লার ভাড়া বাসায়। হুমায়রার বাবা ইতালিতে আছেন ছয় বছর ধরে। দিরাইয়ের কুলঞ্জ ইউনিয়নের নদগীপুরে তাদের গ্রামের বাড়ি। আর বখাটে ইয়াহিয়ার বাড়ি করিমপুর ইউনিয়নের সাকিতপুর গ্রামে। সপরিবারে তারা আত্মগোপন করেছেন।

পুলিশ, হুমায়রার স্বজন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বছর ধরেই বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার সময় হুমায়রাকে উত্ত্যক্ত করছিলেন ইয়াহিয়া। পরিবার বিষয়টি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানালে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ও প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে গত ২৬ অক্টোবর দুই পরিবারের লোকদের নিয়ে বিদ্যালয়ে বৈঠক হয়। সেখানে হুমায়রাকে আর উত্ত্যক্ত করবেন না বলে ইয়াহিয়া লিখিত মুচলেকা দেন। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে আবার তাকে উত্ত্যক্ত করছিলেন তিনি।

দিরাই বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাফর ইকবাল বলেন, ‘ইয়াহিয়া আর কখনো এ কাজ করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করে যায়। আমরাও মনে করেছিলাম সে এ পথ থেকে সরে যাবে। কিন্তু এ রকম জঘন্য কাজ করে বসল।’

হুমায়রার মামা মাহমুদুল হাসান বলেন, গত বুধবার বিকেলে বাড়ির সামনে এসে ইয়াহিয়া হুমায়রাকে ডাকতে থাকে। চিৎকার করে বলে, ‘তোকে মারব, আমিও মরব।’ কিন্তু এ বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়নি।

ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু হেনা বলেন, ‘আমাদের আশা ছিল, হুমায়রা এসএসসিতেও ভালো ফল করবে। আমরা ইয়াহিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

প্রাথমিকে বৃত্তি পাওয়া হুমায়রা জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষায় বসার কথা ছিল তার। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবে। সে জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছিল বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী হুমায়রা আক্তার।

ইতালিপ্রবাসী বাবা হিফজুর রহমান মেয়ের পড়ার সুবিধার জন্য দুর্গম হাওরের গ্রাম থেকে পরিবারকে দিরাই সদরে বাসা ভাড়া করে দিয়েছেন। কিন্তু মা-বাবার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে বখাটে ইয়াহিয়ার ছুরিকাঘাতে।

গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান। তিনি ইয়াহিয়াকে গ্রেপ্তারে এলাকাবাসীর সহযোগিতা চান। এরপর দিরাই বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পুলিশ সুপার বলেন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ইয়াহিয়াকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: