০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ শুক্রবার, ০২:১৩ পিএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
বুক বিল্ডিং পদ্ধতির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) বিডিংয়ের মাধ্যমে কাট অফ প্রাইস নির্ধারণকারী যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (ইআই) যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে সাম্প্রতিক কয়েকটি অতিমূল্যায়ন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির পর আরো কার্যকর দর নির্ধারণ নিশ্চিত করতেই এ পরিকল্পনা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কমিশন কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি হলে বিডিংয়ে আরো দায়িত্বশীল হবে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলো।
বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় বিডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ারদর নির্ধারণে ইআইরা মূল নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে থাকে। পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫ অনুযায়ী, বিডিংয়ের ক্ষেত্রে শেয়ারদরের সর্বোচ্চ সীমা নেই। এক্ষেত্রে কোম্পানির ব্র্যান্ড ইমেজ, মার্কেট শেয়ার, ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি, ব্যবসার পরিধি, অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা, প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর, পণ্যের বৈচিত্র্য ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল্যায়নের ভিত্তিতে শেয়ারদর নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি দর নির্ধারণে কোম্পানির হিস্টোরিক্যাল কস্ট এনএভি, আর্নিং বেজড ভ্যালুয়েশন, প্রজেক্টেড আর্নিং বেজড ভ্যালুয়েশন, ডিসকাউন্ট ক্যাশ ফ্লো মেথডও বিবেচনা করা হয়।
বিএসইসির পর্যবেক্ষণ অনুসারে, এ বছরের জুলাইয়ে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের পর কয়েকটি কোম্পানির বিডিং পর্যবেক্ষণে ইআইদের মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ দর নির্ধারণের পরিবর্তে অতিমূল্যায়নের ঘটনাই বেশি ঘটছে। এমনকি কোম্পানি ও ইস্যু ব্যবস্থাপকের নিজস্ব ভ্যালুয়েশনের চেয়েও অনেক বেশি দর নির্ধারিত হচ্ছে বিডিংগুলোয়। এক্ষেত্রে ইআইদের আচরণে পেশাদারিত্বের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
বর্তমান পাবলিক ইস্যু রুলসে কোন ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান ইআই হিসেবে বিবেচিত হবে, সেটি নির্ধারিত থাকলেও ইআইদের সক্ষমতা ও যোগ্যতার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ নেই। তাই কমিশন মনে করছে, ইআইদের কোম্পানির শেয়ারদর নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ও টেকনিক্যাল যোগ্যতা থাকা বাঞ্ছনীয়। যেসব প্রতিষ্ঠানে শেয়ারের যৌক্তিক দর নির্ধারণের মতো পেশাদার ও দক্ষ জনবল রয়েছে, তারাই শুধু বিডিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। বিদ্যমান আইনে এ বিষয়টি সংযোজিত হলে শুধু ক্যাটাগরিভুক্ত প্রতিষ্ঠান হলেই আর বিডিংয়ে অংশ নেয়া সম্ভব হবে না। বরং ক্যাটাগরিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যাদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও দক্ষতা রয়েছে, কেবল তারাই বিডিং করতে পারবে। এতে শেয়ারদর নির্ধারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
বিএসইসির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান যোগ্য ইআইদের অধিকাংশেরই শেয়ারদর নির্ধারণ করার মতো ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নেই। তাই এবার তাদের যোগ্যতার দিকে গুরুত্ব দিতে চাইছে কমিশন। ইআইদের প্রাতিষ্ঠানিক ও কারিগরি দক্ষতা ও যোগ্যতা নিশ্চিত করা গেলে বিডিংয়ে শেয়ারদরের অতিমূল্যায়ন প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, সাম্প্রতিক কয়েকটি আইপিওর বিডিং পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এগুলোর শেয়ারদর অনেক বেশি অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে। এ ধরনের প্রবণতা রোধে বিএসইসি দুই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আমি মনে করি। প্রথমত. বিডিংয়ে যে কাট অফ প্রাইসই নির্ধারণ করা হোক না কেন, যদি প্রকৃত মূল্যের তুলনায় অতিমূল্যায়ন করা হয়ে থাকে, তাহলে বিডিং বাতিল করতে পারে। দ্বিতীয়ত. লক ইনের মেয়াদ প্রসপেক্টাস ইস্যুর পরিবর্তে লেনদেন শুরুর তারিখ থেকে নির্ধারণ করতে হবে। এতে করে ইআইরা নিজেদের স্বার্থেই বিডিংয়ে শেয়ারদর অতিমূল্যায়ন করা থেকে বিরত থাকবে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে সফলভাবে বুক বিল্ডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশে বারবার পদ্ধতিটি বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছে। সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে আইপিওর বুক বিল্ডিং পদ্ধতির প্রবর্তন করে বিএসইসি। কিন্তু এ পদ্ধতিতে তালিকাভুক্তির শুরু থেকেই শেয়ারদর কারসাজির অভিযোগ ওঠে। এ কারণে ২০১০ সালের বাজারধসের পরে বুক বিল্ডিংয়ে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া প্রায় চার বছর বন্ধ থাকে। এরপর আবারো এ প্রক্রিয়া শুরু হলেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। বুক বিল্ডিংকে আরো যুগোপযোগী করতে ২০১৫ সালে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধন করা হয়। তবে সংশোধিত আইনের আওতায়ও শেয়ারদর নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আবারো দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে আইন সংশোধনের দাবি জানানো হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুলাইয়ে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের পরেও শেয়ারদর নির্ধারণে অতিমূল্যায়নের প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হয়নি।
এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পেশাগত সক্ষমতা ও দায়িত্ববোধ আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।