facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি মুনাফা যে খাতে


০২ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার, ০২:২০  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি মুনাফা যে খাতে

বছরের শুরুটা পুঁজিবাজারের জন্য ছিল বেশ আশাপ্রদ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে মাত্র ১৮ কার্যদিবসে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্টে উঠে যায়। তবে বাজারের এ ঊর্ধ্বমুখিতা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। আর্থিক খাতের তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে যায়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্টেকহোল্ডারদের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজার সংস্কারের দাবি ওঠে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তালিকাবহির্ভূত সিকিউরিটিজে তফসিলি ব্যাংকের বিনিয়োগকে পুঁজিবাজার এক্সপোজারের আওতার বাইরে রাখার ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রাথমিক ও সেকেন্ডারি বাজারসংক্রান্ত বেশকিছু সংস্কারের ঘোষণা দেয়। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে নগদ লভ্যাংশকে উৎসাহিত করতে স্টক লভ্যাংশ ও রিটেইনড আর্নিংসের ওপর শর্তসাপেক্ষে ১০ শতাংশ করারোপ করা হয়।

তবে বছরের প্রথমার্ধে বাজারের এই সার্বিক নিম্নমুখিতার মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল সাধারণ বীমা খাতের কোম্পানিগুলো। এ খাতের বিনিয়োগের বিপরীতে বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ২৪ দশমিক ৭০ শতাংশ রিটার্ন পেয়েছেন। অন্যদিকে এ সময়ে বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি লেনদেন করেছেন বস্ত্র, প্রকৌশল ও ব্যাংকিং খাতের কোম্পাানির শেয়ার। বছরের প্রথমার্ধের বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গেল বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে ডিএসইএক্স বেড়েছে মাত্র ১৬ পয়েন্ট। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ডিএসইতে গড় দৈনিক লেনদেন ছিল ৫৮০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৫৬ কোটি টাকা। এ বছরের প্রথমার্ধে ডিএসইর মোট বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা গেল বছরের প্রথমার্ধে ছিল ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. শাকিল রিজভী বলেন, বছরের প্রথমার্ধে পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক ছিল না। তবে এর মধ্যে বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর জন্য বাজেটে সুখবর আসছে, এমন একটি গুজব ছিল। তাছাড়া বীমা খাতের অনেক কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার কিনেছেন। এসব মিলিয়ে বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট দূর করতে যেসব সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, এগুলো বাস্তবায়ন হলে আশা করছি বছরের শেষার্ধে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি ভালো যাবে। আমরাও সে প্রত্যাশায় রয়েছি।

খাতভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিনিয়োগকারীরা সাধারণ বীমা খাতের পরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বেশি ১৫ দশমিক ২ শতাংশ রিটার্ন পেয়েছেন। এর পরে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন এসেছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে—১৪ দশমিক ৩ শতাংশ, খাদ্য ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ, ওষুধ ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, বিবিধ ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড ৪ শতাংশ, ব্যাংক ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, প্রকৌশল ২ দশমিক ২ শতাংশ ও টেলিযোগযোগ খাতে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে পাট খাতে—১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এর পরে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন কমেছে সিমেন্ট খাতে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ, কাগজ খাতে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, সিরামিক খাতে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, জীবন বীমা খাতে ৫ শতাংশ, চামড়া খাতে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, ভ্রমণ খাতে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, বস্ত্র খাতে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সেবা খাতে রিটার্ন কমেছে ১ শতাংশ।

খাতভিত্তিক লেনদেন পর্যালোচনা দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিনিয়োগকারীরা বস্ত্র খাতের সবচেয়ে বেশি ১৩ দশমিক ১ শতাংশ শেয়ার লেনদেন করেছেন। লেনদেনের দিক থেকে এর পরে ছিল প্রকৌশল, ব্যাংক, ওষুধ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, সাধারণ বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, খাদ্য, বিবিধ ও টেলিযোগাযোগ খাতের শেয়ার।

বাজার মূলধনের দিক দিয়ে চলতি বছরের প্রথমার্ধে সবার উপরে ছিল গ্রামীণফোন। বর্তমানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ৪৯ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৪৯ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা। বাজার মূলধনে শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে আরো ছিল বিএটিবিসি, স্কয়ার ফার্মা, ইউপিজিডিসিএল, রেনাটা, ব্র্যাক ব্যাংক, আইসিবি, বার্জার পেইন্টস, ম্যারিকো ও অলিম্পিক।

চলতি বছরের প্রথমার্ধে দর বাড়ার শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, জেএমআই সিরিঞ্জ, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল পলিমার ও প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স।

অন্যদিকে দর কমার শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে মুন্নু জুট স্টাফলার্স, খুলনা পাওয়ার, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, আলহাজ টেক্সটাইল, সিএনএ টেক্সটাইল, ফাস ফিন্যান্স, মেঘনা পিইটি, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ইফাদ অটোস।

লেনদেনের ভিত্তিতে চলতি বছরের প্রথমার্ধে শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ফরচুন সুজ, স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোন, প্রিমিয়ার ব্যাংক, বিবিএস কেবলস, কেপিসিএল, জেএমআই সিরিঞ্জ, সিঙ্গার বাংলাদেশ, নিউলাইন ক্লদিংস ও রানার অটোমোবাইল।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: