০১ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার, ০১:৪৮ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
চার মাসের প্রায় লাগাতার দরপতনের ধারা থেকে গত বৃহস্পতিবার বের হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে শেয়ারবাজার। ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট কাটানোর উদ্যোগসহ কয়েকটি ইতিবাচক খবর এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তবে এর আগে টানা দরপতনে ৭৯ শতাংশ শেয়ারের দরপতন হয়েছে। তবে অন্য সব খাতের তুলনায় বেশি দর হারিয়েছে আর্থিক খাতের শেয়ার।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ২৬ নভেম্বরের পর থেকে শুরু হওয়া দরপতনে তালিকাভুক্ত ৩০৩ কোম্পানির মধ্যে ২৬৩টি দর হারিয়েছে। বেড়েছে মাত্র ৬৭টির ও অপরিবর্তিত থেকেছে ৯টির দর। গত ২৬ নভেম্বর ও গত বৃহস্পতিবারের ক্লোজিং প্রাইস তুলনা করে এ তথ্য মিলেছে।
খাতওয়ারি দরপতন :পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবারের দরবৃদ্ধি আমলে নিলেও এ সময়ে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের সব শেয়ারের দর কমেছে। দরপতনে এ খাতের ২৩ কোম্পানির সার্বিক দরপতন হয়েছে সোয়া ২২ শতাংশ, যা ছিল খাতওয়ারী দরপতনের সর্বোচ্চ।
এর পরের অবস্থানে ছিল ব্যাংক খাত। এ খাতের ৩০ কোম্পানির সবগুলো দর হারানোয় সার্বিক দরপতন হয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ। এ ছাড়া সেবা ও নির্মাণ খাতের চার কোম্পানি গড়ে সোয়া ১৫ শতাংশ, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের সাত কোম্পানি ১০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতের সাত কোম্পানি ৯ শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ১৮ কোম্পানি গড়ে ৭ শতাংশ দর হারিয়েছে। অন্য খাতগুলোও কমবেশি ৩ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এবি ব্যাংকের সর্বাধিক ৩৭ শতাংশ দরপতন হয়েছে। এরপরের অবস্থানে ছিল ঢাকা ও উত্তরা ব্যাংক। উভয় ব্যাংকের যথাক্রমে ৩৩ ও ৩১ শতাংশ দর কমেছে।
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের দরপতনের শীর্ষে ছিল লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। কোম্পানিটির দরপতন হয়েছে ৫৮ শতাংশ। ৩০ থেকে ৪১ শতাংশ দর হারিয়ে এর পরের অবস্থানে ছিল জিএসপি ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ও আইসিবি।
বীমা খাতের সর্বাধিক দরপতন হয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের। শেয়ারটি সর্বশেষ ১৫ টাকা ১০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। এ খাতের ফেডারেল, পূরবী, ইসলামিক ও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স ২০ থেকে ২৪ শতাংশ দর হারিয়ে ছিল দরপতনের শীর্ষে। তবে এ খাতের ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর ৩৩ শতাংশ বেড়ে সাড়ে ৩৩ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। এছাড়া
পপুলার লাইফ ও রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বাজারদর ২৩ থেকে ৩৩ শতাংশ বেড়ে যথাক্রমে ৮৯ টাকা ও ৪৬ টাকা ছাড়িয়েছে।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের শাহজিবাজার পাওয়ার সর্বাধিক ৩৫ শতাংশ দর হারিয়ে ছিল এ খাতের দরপতনের শীর্ষে। শেয়ারটি সর্বশেষ ৯০ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। এ খাতের জিবিবি পাওয়ার, খুলনা পাওয়ারের শেয়ারদর যথাক্রমে ২৭ ও ২০ শতাংশ কমেছে। অবশ্য এ খাতের সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের দর ১০ শতাংশ বেড়েছে।
প্রকৌশল খাতের ওইম্যাক্স ৪৩ শতাংশ দর হারিয়ে ৪২ টাকায় নেমেছে। এর পরের অবস্থানে থাকা বিবিএস কেবলসের ৪২ শতাংশ ও ওয়েস্টিন মেরিনের শেয়ারদর ৩৮ শতাংশ কমেছে। তবে কেঅ্যান্ডকিউ, মুন্নু স্ট্যাফেলার্স ও সুহৃদের শেয়ারদর ১৯ শতাংশ করে বেড়েছে।
বস্ত্র খাতের আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ছিল দরপতনের শীর্ষে। কোম্পানিটি গত চার মাস আগের তুলনায় ৫৭ শতাংশ দর হারিয়ে ১১ টাকা ৩০ পয়সায় নেমেছে। তুংহাই, রিজেন্ট টেক্স ও জাহিন স্পিনিং ৩১ থেকে ৩৫ শতাংশ দর হারিয়ে দরপতনে এরপরের অবস্থানে ছিল। তবে এ খাতের দুলামিয়া কটনের শেয়ারদর দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ৪৪ টাকায় উঠেছে। এছাড়া সোনারগাঁ টেক্সটাইলের দরও ৪৬ শতাংশ ও মেট্রো স্পিনিংয়ে দর ১৯ শতাংশ বেড়েছে।
ওষুধ ও রসায়ন খাতে দরপতনের শীর্ষে ছিল কেয়া কসমেটিক্স। শেয়ারটি ৩৮ শতাংশ দর হারিয়ে ১০ টাকার নিচে নেমেছে। সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ারদর ৩১ শতাংশ হারিয়ে ১৫ টাকায় এবং এএফসি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারদর ২৭ শতাংশ হারিয়ে ৩৫ টাকার নিচে নেমেছে। তবে এ খাতের ওয়াটা কেমিক্যালের শেয়ারদর ৭৬ শতাংশ বেড়ে ৩৪৩ টাকা ছাড়িয়েছে। ফার্মা এইডসের শেয়ারদর ৩৬ শতাংশ ও বেক্সিমকো সিনথেটিক্সের দর ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের আরডি ফুড সোয়া ২৫ শতাংশ দর হারিয়ে এ সময়ে ছিল এ খাতের সর্বাধিক দর হারানো কোম্পানি। সর্বশেষ এর শেয়ার ১৪ টাকা ৮০ পয়সায় কেনাবেচা হয়। ২৫ শতাংশ দর হারিয়ে এরপরের অবস্থানে ছিল ঝিলবাংলা সুগার। তবে অন্য সব খাতের তুলনায় এ খাতের অবস্থান ছিল অনেকটাই ভিন্ন। খাতটির ১৮ কোম্পানির মধ্যে ৮টির দর কমেছে। বিপরীতে বেড়েছে ১০টির দর। প্রায় সোয়া দ্বিগুণ দর বেড়ে বঙ্গজ লিমিটেড ছিল এ খাতের দরবৃদ্ধির শীর্ষে। শেয়ারটি সর্বশেষ ২৬৫ টাকায় কেনাবেচা হয়।
দরপতনের শীর্ষ ১০ :এ সময়ে দরপতনের শীর্ষে ছিল লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। গত চার মাসে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর প্রায় ৫৮ শতাংশ কমেছে। যদিও গত বৃহস্পতিবার শেয়ারটির দর সোয়া ৭ শতাংশ বেড়েছে। অবশ্য এ দরপতনের মধ্যে রাইট শেয়ার ইস্যুর কারণে দর সংশোধনও রয়েছে।
দরপতনে এরপরের অবস্থানে ছিল বস্ত্র খাতের আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। শেয়ারটির দর ৫৭ শতাংশ কমে ১১ টাকা ৩০ পয়সায় নেমেছে। প্রকৌশল খাতের ওইম্যাক্স ইলেক্ট্রোডের দর শুরুর তুলনায় ৪৩ শতাংশ হারিয়ে ৪২ টাকায় নেমেছে। একই খাতের বিবিএস কেবলস ৪২ শতাংশ হারিয়ে ৭৪ টাকায় নেমেছে। এ ছাড়া এ সময়ে জিএসপি ফাইন্যান্স ৪১ শতাংশ, কেয়া কসমেটিক্স ৩৮ শতাংশ, ওয়েস্টিন মেরিন শিপইয়ার্ড ৩৮ শতাংশ, এবি ব্যাংক ৩৭ শতাংশ, জাহিন স্পিনিং ৩৬ শতাংশ ও এফএএস ফাইন্যান্স প্রায় ৩৬ শতাংশ দর হারিয়ে ছিল দরপতনের শীর্ষ দশে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।