facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪

Walton

পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে বাজেটে একগুচ্ছ প্রস্তাব


১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সোমবার, ০৯:৩১  এএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে বাজেটে একগুচ্ছ প্রস্তাব

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। গতকাল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সমন্বিত বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতি অনুষ্ঠানে নিজেদের সুপারিশগুলো তুলে ধরেন দেশের মার্চেন্ট ব্যাংকারদের প্রতিনিধিরা।

রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত ‘আগামী জাতীয় বাজেটে বিভিন্ন ব্যবসা খাতের সুপারিশমালা সমন্বয় ও পাঁচ বছরের ব্যবসা উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এফবিসিসিআইয়ের সমন্বিত প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত হতে যাওয়া বাজেট প্রস্তাবে বিএমবিএ ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের বার্ষিক লভ্যাংশ আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে। দেশের সাধারণ মানুষকে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে বিএমবিএ সভাপতি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, লভ্যাংশ আয় স্থিতিশীল দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুফল। সাধারণ মানুষের সঞ্চিত অর্থ ভালো মৌলভিত্তির তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ করলে সেখান থেকে তারা বছর বছর ভালো লভ্যাংশ পান। বর্তমানে এক বছরে ২৫ হাজার টাকার বেশি লভ্যাংশ আয় হলেই তাদের কাছ থেকে কর আদায় করা হয়। দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এ সীমাটি অনেক কম বলে মনে করছি আমরা। এটি বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা হলে আরো বেশি মানুষ স্থিতিশীল বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। বাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লে সরকারের রাজস্বও বাড়বে।

একই সঙ্গে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে তাদের মূলধনি মুনাফার ওপর আরোপিত কর ১০ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনারও প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। এ প্রসঙ্গে বিএমবিএ নেতারা বলেন, বাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের মূলধনি মুনাফা করমুক্ত হলেও প্রতিষ্ঠানের মূলধনি মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপিত রয়েছে। এটি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হলে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে, যা বাজারের লেনদেন ও গভীরতা বাড়াবে। মূলধনি মুনাফার ওপর সামান্য কর ছাড় দিলে শেষ পর্যন্ত সরকারের রাজস্ব না কমে বরং অনেক বাড়বে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে আরো বেশি নগদ লভ্যাংশ বিতরণে উৎসাহ দিতে বছরে ২০ শতাংশ বা তার বেশি নগদ লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানিকে কমপক্ষে ১০ শতাংশ কর ছাড় দেয়ার প্রস্তাব করেছে বিএমবিএ। মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রস্তাবটি গৃহীত হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বেশি পরিমাণে নগদ লভ্যাংশ দিতে উৎসাহিত হবে। বিনিয়োগকারীরা বেশি লভ্যাংশ পেলে সেখান থেকেও সরকারের রাজস্ব বাড়বে। আবার বাজারের গতিশীলতা বাড়লে সরকারও আরো বেশি রাজস্ব পাবে।

দেশের দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগ ব্যাংকিং ও পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট সেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কার্যক্রমে গতি আনা দরকার উল্লেখ করে বিএমবিএ সভাপতি বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে ইন্টারমিডিয়ারি হিসেবে মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলো কাজ করছে। এর মধ্যে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকেই সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হয়। ব্রোকারেজ হাউজগুলো দিচ্ছে ৩৫ শতাংশ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কাছ থেকে বছরে করপোরেট কর নেয়া হচ্ছে ১৫ শতাংশ হারে। ইস্যু ব্যবস্থাপনা ও আন্ডাররাইটিং সেবার মাধ্যমে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজার থেকে উদ্যোক্তাদের মূলধন উত্তোলনে সহযোগিতা করছে, করপোরেট অ্যাডভাইজরির মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে কাজ করছে, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের পেশাদার সেবা দিচ্ছে। প্রতিটিই দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। অথচ অন্য ইন্টারমিডিয়ারিগুলোর চেয়ে বেশি করপোরেট কর দিতে হচ্ছে তাদের। এ অসম করহারে সামঞ্জস্য আনার প্রস্তাব করেছি আমরা। সার্বিক প্রভাব বিবেচনা করলে শেষ পর্যন্ত এটিও সরকারের রাজস্ব অনেক বাড়াবে বলে মনে করছি আমরা।

ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের বিদ্যমান ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ট্যাক্স চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচনার দাবি জানিয়ে সর্বশেষ প্রস্তাবনায় বিএমবিএ বলছে, ব্যক্তিবিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ বিরতণের সময় ১০ শতাংশ হারে ডিভিডেন্ড ট্যাক্স কেটে রাখে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। লভ্যাংশ থেকে পাওয়া আয়কে বিনিয়োগকারী তার ব্যক্তিগত রিটার্নে প্রদর্শনের সময় আয়কর আইন অনুযায়ী তাকে আবার কর দিতে হয়। আইন অনুযায়ী ব্যক্তির আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ আয়কর ধার্য হলে প্রাপ্ত লভ্যাংশ আয়ে তাকে অবশিষ্ট ২০ শতাংশ কর পরিশোধ করতে হয়। ফলে লভ্যাংশ আয়ে ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ট্যাক্সের কথা বলা হলেও তার সুবিধা পান না বিনিয়োগকারী। আইনটি সংশোধন করে ৩০ শতাংশের পরিবর্তে লভ্যাংশ আয়ে ১০ শতাংশকেই চূড়ান্ত কর নির্ধারণ করা দরকার।

একই অনুষ্ঠানে বিএমবিএর দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)। এর সঙ্গে নতুন করে একটি প্রস্তাব যোগ করে সংগঠনটির সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজারকে গতিশীল করতে বিএমবির প্রস্তাবগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি লেনদেনের ওপর কর কমানো না হলে বাজারের চলমান স্থিতাবস্থা কাটবে না। ২০১০ সালের আগে লেনদেনের ক্ষেত্রে দশমিক ১২৫ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ টাকায় সাড়ে ১২ টাকা ট্রেডিং ট্যাক্স কাটা হতো। পরবর্তী সময়ে এটিকে দশমিক ৫০ শতাংশ বা প্রতি লাখে ৫০ টাকা করা হয়। কিন্তু বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি অবশ্যই কমানো দরকার। আমাদের প্রস্তাব হলো ট্রেডিং ট্যাক্স দশমিক ৫০ থেকে কমিয়ে দশমিক ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। অর্থাৎ ১ লাখ টাকা লেনদেনে আমরা সরকারকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা ট্রেডিং ট্যাক্স দিতে চাই। এতে লেনদেন বেড়ে সরকারের রাজস্ব আহরণও বাড়বে।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: