facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

পুঁজি সরবরাহ বন্ধ: ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্প-প্রতিষ্ঠানে ধসের শঙ্কা


০৬ নভেম্বর ২০১৯ বুধবার, ০৫:১০  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


পুঁজি সরবরাহ বন্ধ: ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্প-প্রতিষ্ঠানে ধসের শঙ্কা

শেয়ারবাজার থেকে গত সাত মাস ধরে পুঁজি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে ধস নামার শঙ্কা করছেন উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়াতে ঝক্কি-ঝামেলা থাকায় শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে থাকেন শিল্প উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে শিল্প প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক বাজারে ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ে। এ কারণে দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানও শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে থাকেন।

সম্প্রতি দেশের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের কারণে ও অল্প কিছু দুর্বল কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) স্থির মূল্য পদ্ধতি ও বুক বিল্ডিং পদ্ধতি উভয়ভাবেই প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। নিয়ম অনুযায়ী শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে কাজ করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। এছাড়া নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের পাশাপাশি গ্রাহকদের পক্ষে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা এবং আন্ডার রাইটিংয়ের কাজও করে থাকে। আইপিও বন্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো এখন তাদের কর্মীদের বেতন ও অফিস খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে। এমনিতেই আইনের নানা বেড়াজালে অনেক মার্চেন্ট ব্যাংক বাজারে ইস্যু আনতে ব্যর্থ হয়। তার উপর চলমান অবস্থায় পড়ে তারা আরো বেকায়দায় পড়েছে।

বিএসইসিতে আইপিও অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা ২৬টি কোম্পানি এখন কোন নিয়মে অনুমোদন পাবে; তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা পড়েছে। একদিকে কয়েক মাস ধরে আইপিও অনুমোদন বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানিগুলোকে সংশোধিত পাবলিক ইস্যু রুলসে আবেদন করতে হবে কি না তাও নিশ্চিত নয়। এতে বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে। পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আইপিও প্রক্রিয়াতেও স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। গত মার্চ মাস থেকে আইপিও আবেদন গ্রহণ আপাতত বন্ধ রেখেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তবে এর আগে ২৬টি কোম্পানি আইপিওর জন্য আবেদন করে। এর মধ্যে ৯ কোম্পানি বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে এবং বাকি ১৭টি কোম্পানি স্থির মূল্য পদ্ধতিতে আসতে আগ্রহী।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, সংশোধিত পাবলিক ইস্যু রুলস অনুযায় কোম্পানিগুলোকে সংশোধিত নিয়মেই অনুমোদন দিতে হবে। এতে কোম্পানিগুলোকে নতুন করে আবেদন করতে হবে। এর আগে গত ৩০ এপ্রিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সিদ্ধান্ত নেয় যে, এখন থেকে আর কোনো নতুন কোম্পানির প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন গ্রহণ করা হবে না। কারণ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস, ২০১৫ এর সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই সংশোধন হওয়ার আগ পর্যন্ত ২৯ এপ্রিল, ২০১৯ তারিখ থেকে আইপিও সংক্রান্ত নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না। তবে ইতিমধ্যে যেসব কোম্পানির আইপিও আবেদন জমা পড়ে আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ আইপিওর জন্য আবেদন দাখিল করা কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে আগের নিয়মেই অনুমোদন দেওয়া হবে।

বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওতে আসতে আগ্রহী কোম্পানিগুলো হলো– ডেল্টা হসপিটাল ৫০ কোটি টাকা, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন ১৪৯ কোটি ৮৬ টাকা, স্টার সিরামিকস ৬০ কোটি টাকা, বারাকা পতেঙ্গা ২২৫ কোটি টাকা, লুব-রেফ বাংলাদেশ ১৫০ কোটি টাকা, আমান টেক্স ২০০ কোটি টাকা, মীর আখতার হোসেন লিমিটেড ১২৫ কোটি টাকা, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ ১০০ কোটি টাকা তুলবে, ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ৫০ কোটি টাকা, বুক বিল্ডিংয়ে বিডিং প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরো ২ কোম্পানি।।

স্থির মূল্য পদ্ধতিতে আইপিওতে আসতে আগ্রহী কোম্পানিগুলো হলো– এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স ২৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ইলেক্ট্রো ব্যাটারি কোম্পানি সাড়ে ২২ কোটি টাকা, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি টাকা, ক্রিস্টল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ১৬ কোটি টাকা, আল- ফারুক ব্যাগস ৩০ কোটি টাকা, বিডি পেইন্টস ২০ কোটি টাকা, ই জেনারেশন ১৫ কোটি টাকা, এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ ১৮ কোটি টাকা, বনিতো অ্যাক্সেসরিজ ইন্ড্রাস্ট্রিজ ৩০ কোটি টাকা,।পিইবি স্টিল অ্যালায়েন্স ১৫ কোটি টাকা, আসিয়া সি ফুড ২০ কোটি টাকা, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ১৯ কোটি টাকা, বিডি থাই ফুড অ্যান্ড বিভারেজ ১৫ কোটি টাকা, এএফসি হেল্থ ১৭ কোটি টাকা, ওরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ২৫ কোটি টাকা, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন ১৫ কোটি টাকা এবং গার্ডেনিয়া ওয়ার্স লিমিটেড ২০ কোটি টাকা তুলবে।

এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী পাইপলাইনে থাকা কোম্পানির আইপিও অনুমোদনে আরো কঠোর হচ্ছে বিএসইসি। কোম্পানির প্রসপেক্টাসগুলো গভীরভাবে দেখার জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) নতুন করে এক্সপার্ট প্যানেল গঠনের পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি। এক্সপার্টের প্যানেলের প্রতিবেদন দেখে সন্তুষ্ট হলেই নতুন করে আইপিওর অনুমোদন দেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে কমিশন।

দেশের আইপিও প্রক্রিয়ায় অনেক সময় ব্যয় হওয়ায় ও নানা ঝামেলা পোহাতে হয় বলে এমনিতেই নতুন কোম্পানি পুঁজিাবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় না । তার উপর সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর অবস্থানের কারণে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে গত কয়েক বছর ধরে যেসব প্রতিষ্ঠান সময় ও অর্থ ব্যয় করেছেন সেসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারাও এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন।

আইপিওর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে ব্যবসা সম্প্রসারণ করার আশায় থাকা কয়েকটি কোম্পানির উদ্যোক্তরা বলেন, পুঁজিাবারে তালিকাভুক্ত হতে আমাদের এরই মধ্যে অনেক অর্থ ব্যয় হয়ে গেছে। আর ব্যবসা করার জন্য আমার যে টার্গেটে অর্থ উত্তোলন করার চিন্তা করেছি। এখন যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে করে আমাদের সেই চিন্তা থেকে দূরে সরে যেতে হবে। কয়েক বছর ধরে আইপিও অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকার পর এখন যদি আরো দেরি হয় তবে আমার যাব কোথায়। কোম্পানি চালানোই আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়বে। কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উৎপাদন খরচ চালানোই এখন দায় হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোম্পানির আইপিও অনুমোদন বন্ধ রাখলে এর ফলাফল কখনোই ভালো না। কারণ বাজারে সরবরাহ বন্ধ থাকলে একসময় দুর্বল শেয়ারের দাম বেড়ে যাবে। এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারে। পুঁজিবাজারে কোম্পানির আইপিও বন্ধ রাখার কারণেই তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে বাজারে। তাই বাজারকে তার মতো চলতে না দিলে এই বাজার কখনই স্থির হবে না।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএল) সেক্রেটারি জেনারেল খায়রুল বাশার বলেন, গত সাত মাস ধরে আইপিও বন্ধের প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ শিল্প প্রতিষ্ঠানে। এর ফলে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। নতুন ইস্যু আনতে যারা কাজ করে বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো পড়েছে বড় ক্ষতির মুখে। একই সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান আইপিও আবেদন করে বছর ধরে অপেক্ষা করছে তারা হতাশ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ চান তিনি।

ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাহিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, আইপিও বন্ধের প্রভাব শুধু শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিই হচ্ছে না। ব্রোকারেজ হাউজসহ যারা আইপিও মার্কেটে বিনিয়োগ করে তারাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেক আইপিও বিনিয়োগকারীই এখন হতাশ। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে।

তবে আইপিও বন্ধের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট জবাব পাওয়া যায়নি বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমানের কাছে। তিনি বলেন, আগের নিয়মে আইপিও আবেদন করা কোম্পানিগুলো শুধু ক্যাপিটেল রেইজ করতে পারবে।

 

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: