facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে চোরের দুর্নাম চাই না : সোনিয়া


০১ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার, ০৬:২২  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে চোরের দুর্নাম চাই না : সোনিয়া

বাংলাদেশের শীর্ষ নারী তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সোনিয়া বশির কবির। তিনি ডেলের কান্ট্রি ম্যানেজার থেকে অব্যাহতি নিয়ে মাইক্রোসফট বাংলাদেশে যোগদান করেন। বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের বর্তমান পরিস্থিতি, পাইরেটেড সফটওয়্যারের মার্কেট অবস্থা, নকিয়া ফোনের অপারেশন, উইন্ডোজ ফোনের ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তাঁর সাথে কথা হয়।

সোনিয়া বশির কবির- ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী ছিলেন সোনিয়া বশির কবির। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি খেলাধুলোতেও সমান জনপ্রিয়। ভিকির প্রিয়মুখ সোনিয়া এইচএসসিতে সবাইকে চমকে দেন। মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়ে যায়। স্বামী ইহতিশাম কবির যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে চাকরি করতেন। এ সূত্রেই স্বামীর সঙ্গে শুরু হয় তার প্রবাস জীবন। এরপর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উদ্যমে পড়াশোনা শুরু করেন। বিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করে সিলিকন ভ্যালিতেই কাজের হাতেখড়ি। সিলিকন ভ্যালিতে পড়াশোনা এবং প্রশিক্ষণ শেষে ওরাকলে কাজ শুরু করেন সোনিয়া বশির কবির। পরে যোগ দেন সান মাইক্রো সিস্টেমে। ওরাকল এবং সান মাইক্রোসিস্টেমসের মতো কোম্পানিতে কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সোনিয়া কাছে থেকেই দেখেছেন তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বকাঁপানো প্রতিষ্ঠানগুলোর হাল হকিকত। দীর্ঘ ১৫ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০ বছর পর তিনি দেশে ফিরেন ২০০৫ সালে। ২০০৭ সালের শেষের দিকে সোনিয়া যোগ দেন আমরা নেটওয়ার্কে। এরপর ২০০৭ সালে যোগ দেন মাইক্রোসফটের দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসা উন্নয়ন পরিচালক হিসেবে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ডেল বাংলাদেশ গঠিত হলে তিনি কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নেন। প্রায় ৩ বছর এখানে চাকরি করার পর গত ১৫ জুন পুনরায় যোগ দেন মাইক্রোসফটে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থী সোনিয়া ক্রিকেট ও ভলিবল খেলেন। সব ধরনের ক্রীড়াতেই তার সমান আগ্রহ, সমান দক্ষতা। আবাহনীর হয়ে ভলিবলের মাঠ কাঁপিয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড মহিলা শাখা এবং আবাহনীর নারী ক্রীড়া উন্নয়ন বিভাগের সদস্য তিনি। এছাড়া টিআইই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সোনিয়া বশির বাংলাদেশ ওমেন ইন আইটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

বিশ্বে পাইরেটেড সফটওয়্যার মার্কেটে বাংলাদেশকে কেমন দেখছেন?

সোনিয়া বশির কবির: বাংলাদেশের অনেক বড় রিসোর্স হচ্ছে এখানকার জনসংখ্যা। তবে এর ফাউন্ডেশন যদি উইক হয় তাহলে তা দীর্ঘমেয়াদী কীভাবে হবে? এ দেশের ৯০% সফটওয়্যার নকল। নকল সফটওয়্যার দিয়ে কি ইনোভেশন সম্ভব? বহির্বিশ্বে এই নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়। এ দেশের মানুষ হিসেবে এটা আমি মেনে নিতে পারি না। এ ক্ষেত্রে আমার মতামত হচ্ছে, আমরা গরীব হতে পারি কিন্তু চোর না। আমরা দরকার হলে উবুন্তু ব্যবহার করবো কিন্তু পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে চোরের দুর্নাম নিতে চাই না।

মাইক্রোসফটে এসে প্রতিষ্ঠানটিকে কেমন দেখছেন?

সোনিয়া বশির কবির: মাইক্রোসফট এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাকে কেউ অবজ্ঞা করতে পারে না। সবাই এর নাম জানে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাইক্রোসফটের সম্প্রসারণ এবং যৌথভাবে কাজ করার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। আমি সরকারের বিভিন্ন মহলের সাথে কথা বলছি। ব্যাংক ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলছি। সবাই মাইক্রোসফটের ব্যাপারে ভালো রেসপন্স করছেন। আমরা অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম মূল্যে লাইসেন্স সফটওয়্যার বিক্রি করি। কিন্তু এ সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ অনেকেই জানেন না। তাই আমাদের দায়িত্ব হবে মানুষকে এসব বিষয়ে সচেতন করে তোলা।

অনেকেই বলছেন, মাইক্রোসফট লাইসেন্স সফটওয়্যারের দাম কমিয়ে দিলে বাজারে আর পাইরেটেড সফটওয়্যার থাকবে না। আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?

সোনিয়া বশির কবির: মানুষ এখন হাজার টাকা দিয়ে অ্যান্টিভাইরাস কিনতে পারছে। তাহলে আমাদের স্বল্পমূল্যের লাইসেন্স সফটওয়্যার মানুষ কেন কিনবে না? একটি অ্যান্টিভাইরাস তৈরি করতে যে পরিমাণ কোডিং করতে হয় তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি গুণ কোডিং ব্যবহার করা হয় অপারেটিং সিস্টেম বানানোর ক্ষেত্রে। তাই এর কেমন মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন তা সবাই অনুমান করতে পারেন। কিন্তু মাইক্রোসফটের মূল্যের ব্যাপারে যা বলা হয় তার অনেকটাই মনগড়া। আমরা বরং তুলনামূলক অনেক কমমূল্যে সফটওয়্যার বিক্রি করছি। অথচ আমাদের লাইসেন্স সফটওয়্যার টাকা দিয়ে কেনার কথা বললে অনেকে ভয় পান। যারা এতদিন ভয় পেতেন তাদের জন্য সুখবর হচ্ছে, এখন আর খুব বেশি দামি সফটওয়্যার কিনতে হবে না। গ্রাহকবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে ক্লাউডে মাইক্রোসফট রোল আউট করছে। বছরে মাত্র ৪০ ডলার খরচে অফিস ৩৬৫ দিয়ে ক্লাউডে অফার করছি। কিন্তু অনেকেই এ সম্পর্কে জানেন না। আবার দেখুন, কোর ব্যাংকিং, ইআরপি বা এ সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারের কোন পাইরেটেড কপি নেই বলে বাজারে উচ্চমূল্যে এসব সফটওয়্যার বিক্রি হচ্ছে। তখন কিন্তু কেউ উচ্চমূল্যের কথা মুখেও উচ্চারণ করেন না।

পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারে সবচেয়ে বড় ক্ষতি কি হচ্ছে?

সোনিয়া বশির কবির: আপনি নিশ্চয় জানেন, আই-ক্লাউডে সম্প্রতি ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি ফাঁস হওয়া নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা হচ্ছে। একইভাবে আগামীতে আপনি পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার বন্ধ না করলে দেখবেন আপনার কম্পিউটারের সব ডেটা বা বেডরুমের ছবি অন্যত্রে ফাঁস হয়ে গেছে। হ্যাকাররা ইচ্ছা করলে কম্পিউটারের সব তথ্য পাচার বা টাকা ট্র্যান্সফার করে নেওয়ার মতো ক্ষমতা রাখে। তাই সময় থাকতে এখনি সচেতন হতে হবে।

সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জায়গা গুলোতে সফটওয়্যার ব্যবহার কেমন দেখছেন?

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোও পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। ব্যাংক বা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোরা যদি নিজেরাই পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে তাহলে তারা জাতীকে কি শিক্ষা দিচ্ছে? তাদের সন্তানরাই বা কি শিখছে? তবে এ সংখ্যা ক্রমশ কমছে। অনেক ব্যাংকের সাথে আমি কথা বলেছি। তারা তাদের ভুল বুঝতে পারছে এবং তা সমাধানের চেষ্টা করছে। এদিকে সরকারের কোন সফটওয়্যার নকল নেই। বেসিস এবং বিসিএস আমাকে নকল সফটওয়্যারে প্রতিরোধ এবং মানুষকে সচেতন করার ব্যাপারে সহযোগিতা করছে।

পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার বন্ধে আপনারা কি উদ্যোগ নিচ্ছেন?

সোনিয়া বশির কবির: আমি দেখেছি আইডিবিতে অনেকেই পাইরেটেড ও আসল সফটওয়্যারের পার্থক্য বোঝে না। ফলে তারা না জেনেই পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। বিক্রেতারা শিখিয়েছেন কমমূল্যে সফটওয়্যার কিনতে। কিন্তু এর পরিণাম কি হতে পারে তা কেউ শিক্ষা দিচ্ছে না। আমাদের দোষ, আমরা মানুষকে সচেতন করতে পারিনি। পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার বন্ধ করতে আমি নিজেই প্রতি সপ্তাহে ১০ জনের সাথে দেখা করছি এবং তাদেরকে সচেতন করছি। পাইরেটেড সফটওয়্যার বেচাকেনা বন্ধ করতে হলে প্রথমে তাদের ইমোশনের জায়গা জাগিয়ে তুলতে হবে। আমাদের সকলের দায়িত্ব হবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের এ ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক করা। এ জন্য আমরা শিগগির পোস্টারিং করতে যাচ্ছি। যে পোস্টারে শুধুমাত্র একটি বাক্য লেখা থাকবে – “আপনি কি জেনুইন বা পাইরেটেড সফটওয়্যারের পার্থক্য জানেন”? তারপরেও যারা সচেতন হবেন না আগামী জানুয়ারি থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশে নকিয়া ও মাইক্রোসফটের অপারেশন কীভাবে পরিচালিত হবে?

সোনিয়া বশির কবির: নকিয়া একত্রিত হওয়াতে তাদের রেভিনিউ এখন আমাদের রেভিনিউ। এটার সামগ্রিক গ্রোথ অনেক ভালো হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে রয়েছে। মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সত্য নাদেলা বাংলাদেশকে টপটেন দেশের তালিকায় রেখেছেন। নকিয়া ফোনের নাম পরিবর্তন হয়ে তা হচ্ছে “মাইক্রোসফট লুমিয়া”। আমরা বাংলাদেশে উইন্ডোজ ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি লক্ষ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের স্থানীয় হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ড সিম্ফনি এবং ওয়াল্টনের সাথে এ ব্যাপারে কাজ করছি।

বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের লাইসেন্স সফটওয়্যারের মূলত গ্রাহক কারা?

সোনিয়া বশির কবির: বাংলাদেশে আমাদের লাইসেন্স সফটওয়্যার ব্যবহার করে মূলত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, সরকার, অ্যাগ্রিমেন্টেড প্রতিষ্ঠান এবং এখন ব্যাংকও এদিকে ধাবিত হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে আপনারা কি কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন?

সোনিয়া বশির কবির: হ্যাঁ, নিশ্চয়। আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যাথের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে লাইসেন্স সফটওয়্যার দিচ্ছি। তাদের নানান বিষয়ে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করাচ্ছি। ইমাজিং কাপে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সাফল্যময় অর্জনের কথা সবার জানা। আমরা যতটা সম্ভব তাদেরকে আমাদের সাথে রাখার চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশে উইন্ডোজ ফোনে আপনারা কতটা সফল হবে বলে আশা করছেন?

সোনিয়া বশির কবির: আমরা পিসি ও ডেক্সটপে উইন্ডোজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৯৯ শতাংশ সফল। কিন্তু ট্যাবলেট এবং মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে আমাদের এতদিন কাজ করা হয়নি। আমরা আমাদের গ্রাহকদের বলবো, পিসিতে উইন্ডোজ আবার ফোনেও উইন্ডোজ থাকার কারণে আপনি মোবাইল ফোন থেকেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নেই কিন্তু উইন্ডোজ ফোনে সে ধরণের কোন সমস্যা নেই। আবার কোন সময় ফোন হারিয়ে গেলে মুহূর্তেই পিসি থেকে মোবাইল লক, রিসেট, ফরম্যাট, ভাইব্রেট বা রিংটোন বাজাতে পারবেন। এতদিন আমরা বিজনেস টু কাস্টমার (বিটুসি) হ্যান্ডেলিং করেছি এখন বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি)-এর ব্যাপারে সকল ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ফলে আমরা আশাবাদী আমরা আরও অনেক ভালো করতে পারবো।

আপনার গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে কোন ম্যাসেজ থাকলে বলুন –

সোনিয়া বশির কবির: মাইক্রোসফটের ক্লাউডের চাহিদা ক্রমশ বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। যার ফলশ্রুতিতে শেষ প্রান্তিকে মাইক্রোসফটের রাজস্ব অনেকাংশই বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে চিন্তা করতে অনুরোধ করছি। আর সবশেষে গ্রাহকদের জন্য আমার একটিই ম্যাসেজ – বি জেনুইন বাই জেনুইন।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

নারী ও নারী উদ্যোক্তা -এর সর্বশেষ