facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

নির্বাচন সামনে রেখে শেয়ারবাজারে সুখবর


১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শুক্রবার, ১০:০৪  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


নির্বাচন সামনে রেখে শেয়ারবাজারে সুখবর

নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, শেয়ারবাজারের লেনদেনের গতিও তত বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত ১১ জুলাইয়ের পর এটিই ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন। বাজারে লেনদেন বৃদ্ধির পেছনে অর্থনৈতিক ছাড়াও রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এমনিতে দেশের শেয়ারবাজারে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বড় দুটি কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। একটি ১৯৯৬, অন্যটি ২০১০ সালে। যদিও এসব কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার হয়নি। সর্বশেষ ২০১০ সালের যে কেলেঙ্কারি, তার ক্ষতি এখনো অনেক বিনিয়োগকারী কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এ অবস্থায় নির্বাচনের আগে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ যাতে আর না বাড়ে, সে জন্য সরকার বাজারকে ভালো অবস্থায় রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের দিক থেকে বাজার ভালো রাখার একটা চেষ্টা রয়েছে। এ কারণে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগ বাড়ছে। এ ছাড়া ডিএসইর মালিকানার সঙ্গে চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের জোটের অন্তর্ভুক্তিও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি জুনের আর্থিক বছর শেষে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো শেয়ারধারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করতে শুরু করেছে। অনেক কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা হবে, এ কারণেও এ সময়ে এসে বাজারে বিনিয়োগ বাড়ছে।

বাজারে লেনদেন বাড়লেও সূচকে বড় ধরনের কোনো উত্থান-পতন নেই। বেশ কিছুদিন ধরে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্টকে ঘিরে ঘুরপাক খাচ্ছে। গতকাল দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫০০ পয়েন্টে। সূচকের উত্থান-পতনে প্রভাব ফেলতে পারে, এমন কোম্পানির শেয়ারের দাম খুব বেশি না বাড়ার কারণে সূচক একটি গণ্ডির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকেরা। অন্যদিকে কিছু স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর শুরুর মাসে গত ২ জুলাই ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫ হাজার ৩২২ পয়েন্ট। গতকাল দিন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫০০ পয়েন্টে। সেই হিসাবে প্রায় আড়াই মাসে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়েছে ১৭৮ পয়েন্ট। গত জুলাইতে ঢাকার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭৮৫ কোটি টাকা। গতকাল দিন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৫ কোটি টাকায়। গত ১১ জুলাইয়ের পর এটিই ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন। সর্বশেষ ১১ জুলাই ডিএসইতে ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

৪ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএসইর মালিকানার অংশীদার হয়েছে চীনের সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের জোট। এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর চীনের জোটটি শেয়ারের মূল্য বাবদ প্রায় হাজার কোটি টাকা জমা দেয় ডিএসইর ব্যাংক হিসাবে। গত বুধবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) রজতজয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, চীনের জোটের কাছে শেয়ার বিক্রি করে পাওয়া অর্থ তিন বছর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হলে তার বিপরীতে ১০ শতাংশ কর ছাড় দেওয়া হবে। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। এ ঘোষণার পরদিনই বাজারের লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক কমিশনার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, চীনের জোটের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে কর ছাড়ের যে ঘোষণা অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন, তাতে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় শেয়ারবাজারকে ভালো করার চেষ্টা সরকারের রয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে শেয়ারবাজার ভালো হবে, এ ধরনের একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও। তাই বাজারে লেনদেনের গতি দেখা যাচ্ছে।

নির্বাচন সামনে রেখে লেনদেন বাড়লেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। গত মে মাস থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ধারাবাহিকভাবে শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করছেন বেশি। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১৭৬ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন। তার বিপরীতে বিক্রি করেছেন ১৮২ কোটি টাকার শেয়ার। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ তুলে নিলেও বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি, কারণ দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ এখনো কম।

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ তুলে নিলেও স্থানীয় প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগ বাড়ছে বাজারে। আর ব্যাংক খাতে আমানতের সুদের হার কমে যাওয়ার কারণেই সেটি হচ্ছে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতের অবস্থা খুব খারাপ। মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় নিলে ব্যাংকে আমানতের প্রকৃত সুদহার ঋণাত্মক। এ অবস্থায় অনেকে ব্যাংকে টাকা না রেখে শেয়ারবাজারমুখী হচ্ছেন।

ডিএসইর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত এক-দুই মাসে ভালো শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের অংশ বেড়েছে। ডিএসইর বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস ৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত ৩০ কোম্পানির মধ্যে ১৯ টিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে। ১০ টিতে কমেছে। আর অপরিবর্তিত ছিল ১ টিতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ হেলাল বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে বাজার স্থিতিশীল থাকুক, নিয়ন্ত্রক সংস্থাও তাই চায়। এ কারণে কিছু কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হলেও কঠোর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। যাতে বাজারে হিতে বিপরীত না ঘটে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কারসাজিকারকেরা নিজেদের ইচ্ছেমতো তাঁদের হাতে থাকা শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটাতে পারছেন।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে জেড শ্রেণিভুক্ত ও মানহীন স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশে চারটি কোম্পানির এখনো স্পট মার্কেট বা নগদ লেনদেনের বাজারে লেনদেন হচ্ছে। কোম্পানিগুলো হলো আজিজ পাইপস, মুন্নু সিরামিকস, স্টাইল ক্র্যাফট ও কেঅ্যান্ডকিউ। মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে কোম্পানিগুলোকে স্পট মার্কেটে পাঠানো হলেও দামের অস্বাভাবিক উত্থান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দরপতনের দিনেও ডিএসইতে মুন্নু সিরামিকের দাম ১৮ টাকা, স্টাইল ক্র্যাফটের দাম ১৪৫ টাকা, কেঅ্যান্ডকিউর দাম সাড়ে ৬ টাকা এবং আজিজ পাইপসের দাম ৩০ পয়সা বেড়েছে।

গতকাল ঢাকার বাজারে মূল্যবৃদ্ধির দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল মাত্র সাড়ে ১৩ কোটি টাকা মূলধনের মানহীন কোম্পানি ফাইন ফুডস। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় আড়াই টাকা বা ১০ শতাংশ বেড়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: