facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

নানা সংকটে ২০ ব্যাংক: ভালো লভ্যাংশ দেওয়া নিয়ে সংশয়


২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার, ১০:২৯  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


নানা সংকটে ২০ ব্যাংক: ভালো লভ্যাংশ দেওয়া নিয়ে সংশয়

খেলাপি ঋণ বাড়ায় ব্যাপক সমস্যায় পড়ছে ২০টি ব্যাংক। এদের অধিকাংশই খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে পারছে না। একইভাবে এদের অধিকাংশই প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণও করতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সমস্যায় থাকা ব্যাংকগুলো হল- রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, বেসিক, রূপালী, অগ্রণী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)। এ তালিকায় রয়েছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের নামও। তালিকায় আরো রয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের নাম।

এ ব্যাংকগুলো থেকে বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানির নামে জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। ওইসব ঋণ এখন আদায় না হওয়ায় খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, অর্থ সংকটের কারণে খেলাপির বিপরীতে মান অনুযায়ী প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) রাখতে পারছে না সরকারি-বেসরকারি ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এই তালিকায় সরকারি খাতের চারটি ও বেসরকারি খাতের আটটি ব্যাংকের নাম রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রভিশন ঘাটতির কারণে শুধু ব্যাংকই যে বিপাকে পড়ছে তা নয়, আমানতকারী ও শেয়ার হোল্ডারদের জন্যও বিপদ। সাধারণত কোনও ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিলে মূলধনেও টান পড়ে। আর মূলধন ঘাটতিতে পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ওই ব্যাংক বছর শেষে সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশও দিতে পারে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, মূলধন মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না জনতা, বেসিক, রূপালী, অগ্রণী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, এই বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হয়েছে ১৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি ছয় ব্যাংকেরই ঘাটতি রয়েছে ১৭ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। এসব ব্যাংকের দক্ষতা না বাড়িয়ে জনগণের করের টাকায় বারবার মূলধন জোগান দেওয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, গত সেপ্টেম্বর শেষে মূলধন ঘাটতির শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৯৩২ কোটি। বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২৮৬ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৬৬২ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ৬৬৯ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি এক হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হয়েছে ৩০৮ কোটি টাকা। এছাড়া এসআইবিএলের ঘাটতি ৩৫ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, মূলধন ঘাটতি ব্যাংকিং খাতে একটা বড় সমস্যা। এটা হয়, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে। আর খেলাপি বেড়ে গেলে প্রভিশন ঘাটতিও বেড়ে যায়। মূলধন ঘাটতিতে পড়লে ব্যাংক বছর শেষে শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রভিশন সংরক্ষণে ঘাটতির শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫৪৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এরপরই রয়েছে সোনালী ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে এই ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫৪৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি এক হাজার ৩৫২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৬৬ কোটি ৮১ লাখ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে ঋণের শ্রেণিমান বিবেচনায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয় নির্ধারিত হারে। আর প্রভিশন সংরক্ষণ করতে না পারলে কোনও ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পরিমাণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ এখন জনতা ব্যাংকে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ব্যাংকটিতে খেলাপি হয়েছে ১৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণ বিতরণের ৩১.৩১ শতাংশ। একই সময়ে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণ বিতরণের ৩৪.০৪ শতাংশ। রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ৯ হাজার ১৪৪ কোটি টাকাই এখন খেলাপি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, শতাংশ হিসাবে খেলাপি ঋণে সবার শীর্ষে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা । এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণ বিতরণের ৯৪. ৩০ শতাংশ।

শতাংশ হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ খেলাপি হওয়া ব্যাংকটি হলো আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৮৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৭০৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮৩. ৯২ শতাংশ।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: