facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

নওগাঁর ঐতিহ্য ‘প্যারা সন্দেশ’


২০ জুন ২০১৭ মঙ্গলবার, ০২:৩৮  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


নওগাঁর ঐতিহ্য ‘প্যারা সন্দেশ’

নওগাঁর প্যারা সন্দেশের সুখ্যাতি এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। শুরুতে পূজামণ্ডপের দেব-দেবীর উপাসনার জন্য এই সন্দেশ তৈরি করা হতো। সময়ের স্রোতে এখন তা অতিথি আপ্যায়ন, আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে পাঠানো বা নিয়ে যাওয়া মর্যাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নওগাঁর এই ঐতিহ্যবাহী সন্দেশ এখন দেশের বাইরেও সুনাম অর্জন করছে।

বিশেষ কিছু বৈশিষ্টের কারণে মিষ্টান্ন জগতের অনেক বড় একটি জায়গা দখল করে আছে এই প্যারা সন্দেশ। দেশের বিভিন্ন স্থানে এই সন্দেশ তৈরি হলেও প্রথম তৈরি শুরু হয় নওগাঁ শহরে।

নওগাঁ শহরের বেশ কয়েকজন মিষ্টি কারিগর জানান, নওগাঁ শহরের কালীতলা পূজামণ্ডপের প্রধান গেট সংলগ্ন এলাকায় ছোট ছোট কয়েকটি মিষ্টান্নের দোকান রয়েছে। এগুলোকে বলা হয় ভোগের দাকান। দেবীর আরাধনায় মিষ্টান্নর প্রয়োজনেই প্রায় শত বছর আগে এ দোকানিরাই প্রথম তৈরি করেন বিখ্যাত প্যারা সন্দেশ। পরবর্তীতে এই সন্দেশ শুধু দেবীর আরাধনার মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকেনি। সুস্বাদু আর পুষ্টিগুনের কারণে এই সন্দেশ এখন বিখ্যাত।

স্থানীয়রা জানান, নওগাঁ শহরের কালিতলার মহেন্দ্রী দাস নামে এক ব্যক্তি প্রথমে প্যারা সন্দেশ তৈরি শুরু করেন। তখন কালীতলা এলাকায় জনবসতি ছিল না বললেই চলে। মহেন্দ্রীর পর তার ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ দাস দোকানের দায়িত্ব পান। সেই সময় বিমল মহন্ত নামে মিষ্টি তৈরির এক কারিগরের কাছ থেকেই প্যারা সন্দেসের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

ধীরেন্দ্রনাথ দাস প্রায় ৩০ বছর ব্যাবসার পর দোকানটি সুরেস চন্দ্র মহন্তের কাছে বিক্রি করে দিয়ে অন্যত্র চলে যান।

এরপর সুরেস চন্দ্র মহন্ত দোকানে নতুন মিষ্টির কারিগর নারায়ণ চন্দ্র প্রামানিককে আনেন। সেই থেকে তিনি প্যারা সন্দেশ তৈরি করে আসছেন। এরপর আবারও ওই দোকানের মালিকানা পরিবর্তন হয়। বর্তমানে দোকানের মালিক বৈদ্য রতন দাস। তবে মিষ্টির কারিগর রয়েছেন সেই নারায়ণ চন্দ্র দাসই।

নওগাঁ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক নাজমুল হক বলেন, ‘প্যারা সন্দেশ তৈরির প্রথম ধাপে তরল দুধের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে জ্বাল করে তৈরি করা হয় ক্ষীর। ক্ষীর যখন হাতায় জড়িয়ে আসে তখন তা দুই হাতের তালু দিয়ে রোল করে সামান্য চাপ দিলেই তৈরি হয়ে যায় হালকা খয়েরি রংয়ের প্যারা সন্দেশ।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিটি প্যারা সন্দেশ প্রায় আধা ইঞ্চি চওড়া ও দুই ইঞ্চি লম্বা হয়। ৭৫ থেকে ৮০ পিসে এক কেজি হয়। এক কেজি সন্দেশ তৈরি করতে দরকার হয় ৭ লিটার তরল দুধ। দুধ আর চিনি ছাড়া অন্য কোনো উপকরণ না থাকায় এই সন্দেশ রাখা যায় ১০ থেকে ১৫ দিন। আর কৃত্রিম উপায়ে ভালো রাখা যায় এক মাসেরও বেশি সময়। তাই বাইরের দেশে নিয়ে যেতে সমস্যা হয় না। নষ্ট হওয়ারও সম্ভাবনা নেই।

সন্দেশ কিনতে আসা ক্রেতা আবজাল হোসেন জানান, তার মেয়ে কুয়েতে থাকে। এই ঈদে তার মেয়ের জন্য নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী প্যারা সন্দেশ কিনে পাঠাচ্ছেন। তার নাতিরা তাকে ফোন করে প্যারা সন্দেশ পাঠানোর কথা বলেছেন।

অপর ক্রেতা রোজিয়া জানান, ঈদে বিভিন্ন স্থান থেকে আত্মীয় স্বজনরা ঈদ করতে আসেন বাড়িতে। তাদের প্রথম পছন্দ নওগাঁর প্যারা সন্দেশ। আর এই সন্দেশ এমনিতেই ১০ থেতে ১৫ দিন রাখা যায় তাই বেশি করে কিনে রাখলে সমস্যা হয় না।

তিনি আরো জানান, অনেক জায়গার মিষ্টি খেয়েছি কিন্তু নওগাঁর প্যারা সন্দেশের সঙ্গে কারও তুলনা হয় না।

নওগাঁ শহরের কালীতলা এলাকার প্যারা সন্দেশ দোকানের পরিচালক সৈকত দাস বলেন, ‘বংশ পরম্পরায় এখানকার মিষ্টি কারিগররা নওগাঁর বিখ্যাত প্যারা সন্দেশ নিরবচ্ছিন্নভাবে তৈরি ও সরবরাহ করে যাচ্ছেন। দেশের মধ্যে পূজা, ঈদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেই শুধু নয় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এই সন্দেশ।’

তিনি বলেন, ‘ভারত, কুয়েত, সৌদি আরব, তুরস্ক,মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের ক্রেতারা প্যারা সন্দেশ নিয়ে যাচ্ছেন। এই সন্দেশ খেয়ে শুধু রসনা তৃপ্তরাই সন্তুষ্ট নন, ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টান্ন বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন বিক্রেতারও। তারা প্রতি কেজি সন্দেশের দাম নিচ্ছেন ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। আর স্বাদ ও মানের দিক থেকে এই প্যারা সন্দেশ অতুলনীয়।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: