facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

দুই বছরে ১৭০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি কেয়া কসমেটিকসের উদ্যোক্তাদের


১৬ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার, ০১:৫৯  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


দুই বছরে ১৭০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি কেয়া কসমেটিকসের উদ্যোক্তাদের

দুই বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের উদ্যোক্তারা প্রায় ১৭০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। এ সময়ে তারা ১৬ কোটি ১৪ লাখ শেয়ার বিক্রি করেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কেয়া কসমেটিকসের শেয়ার বিক্রিতে এগিয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট উদ্যোক্তা কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড। ২০১৬ সালের ৩ মে থেকে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি ৮ কোটি ৯৪ লাখ শেয়ার বিক্রি করেছে। আর চলতি বছর দুই ধাপে কেয়া গ্রুপের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল খালেক পাঠান ৫ কোটি ৫৬ লাখ শেয়ার বিক্রি করেন। এর বাইরে প্রতিষ্ঠানটির অপর দুই উদ্যোক্তা ফিরোজা বেগম চলতি বছর ১ কোটি ৩৫ লাখ ও তানসিন কেয়া ২৯ লাখ শেয়ার বিক্রি করেছেন।

উদ্যোক্তারা ধারাবাহিকভাবে শেয়ার বিক্রি করায় কেয়া কসমেটিকসের শেয়ারধারণ চিত্রে পরিবর্তন এসেছে। ২০১৭ সালের ৩০ জুন এ কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ারের পরিমান ছিল ৬২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ৫৪ দশমিক ৬৭ শতাংশে নেমে আসে। আর চলতি মাসে ৬ কোটি ৭৮ লাখ শেয়ার বিক্রির পর কোম্পানির উদ্যোক্তা অংশ আরো কমে গেছে। কেয়া কসমেটিকসের করপোরেট উদ্যোক্তা কেয়া ইয়ার্ন মিলসের নামে ১১১ কোটি টাকা ঋণ আত্মসাতের মামলা রয়েছে।

২০১৭ সালের ২০ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঋণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কেয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল খালেক পাঠানকে গ্রেফতার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১১১ কোটি ১৪ লাখ টাকার ঋণ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ মামলায় আবদুল খালেক পাঠানের মেয়ে খালেদা পারভীন, তাসকিন কেয়া ও ছেলে মাসুম পাঠানকেও আসামি করা হয়। এছাড়া তার কৃষি ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখার সাবেক এসপিও মো. আবুল হোসেন, গোলাম রসুল, সাবেক এজিএম মো. সারোয়ার হোসেন, সাবেক ডিজিএম ও শাখা ব্যবস্থাপক মো. জুবায়ের মনজুরও এ মামলার আসামি।
দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণের নামে রাষ্টীয় মালিকানাধীন কৃষি ব্যাংকের কাওরানবাজার শাখা থেকে কেয়া গ্রুপের সহযোগী কোম্পানি কেয়া ইয়ার্ন মিলসের নামে ১১১ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এজাহারে আরও বলা হয়, কেয়া ইয়ার্ন মিলসের এমডি আবদুল খালেকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তুলা আমদানির নামে ব্যাংকটির কাওরানবাজার শাখা থেকে ঋণ হিসেবে ১১১ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩১ টাকা গ্রহণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাতটি ফোর্স লোনের বিপরীতে ১০৫ কোটি ৬৪ লাখ ৪০ হাজার ৯১৭ টাকা ও লোন অ্যাগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্টের (এলটিআর) বিপরীতে ৫ কোটি ৫০ লাখ ২৪ হাজার ১১৪ টাকা নেওয়া হয়।
গাজীপুরের কোনাবাড়ির জরুনে কেয়া ইয়ার্ন মিলের কারখানাটি অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি তুলা থেকে সুতা উৎপাদন করে তৈরী পোষাক কারখানায় রফতানি করে। মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদিত সীমার বাইরে গিয়ে কৃষি ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখা কেয়া ইয়ার্নকে একের পর এক ‘ফরেন ডেফার্ড এলসি’র বিলে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বড় অংকের এ ঋণের বিপরীতে কোন জামানত না থাকায়, তা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। আর আমদানী করা কাচামাল দিয়ে উৎপাদিত পন্য ব্যাংকটির মাধ্যমে রফতানি না করে জালিয়াতির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে বলে মামলার এজারে উল্লেখ করা হয়। এ সংক্রান্ত অভিযোগ দুদকে পেশ করা হলে সেটি অনুসন্ধান করে আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে উচ্চ আদালত থেকে কেয়া কসমেটিকসের সঙ্গে কেয়া নিটিং মিলস, কেয়া কটন মিলস ও কেয়া স্পিনিং মিলস লিমিটেড একীভূত হওয়ার অনুমোদন পায়। এর আগে ২০১৩ সালের ২০ অক্টোবর একীভূতকরণের ঘোষণা দেয় কেয়া কসমেটিকস। ২০১১ সালে কেয়া কটন মিলস ও কেয়া স্পিনিং মিলস পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক গনপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন জানায়। তবে উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সিআইবি রিপোর্ট ইতিবাচক না হওয়ায় দুই আইপিও ফেরত নেয় কেয়া গ্রুপ। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে উচ্চ আদালত কতৃক একীভূতকরণ অনুমোদন হওয়ায় কোম্পানির উদ্যোক্তারা কেয়া কসমেটিকসের প্রায় সাড়ে ৮শ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার পান। একই সঙ্গে একীভূত হওয়া তিন কোম্পানির দায় বর্তায় কেয়া কসমেটিকসের উপর। একীভূত হওয়া ওই তিন কোম্পানির মোট ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা।

এর আগে ২০১১ সালের জুন মাসে কেয়া ডিটারজেন্ট একীভূত হয় কেয়া কসমেটিকসের সঙ্গে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কেয়া ডিটারজেন্টের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আগে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৪ টাকা ৩৯ পয়সা। পরবর্তী সমেয় ২০১২ সালে রাইট শেয়ার ইস্যুর পর শেয়ার প্রতি আয় কমে ১ টাকা ৫৫ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। পরবর্তীতে তিন কোম্পানি একীভূত হওয়ার পর কেয়া কসমেটিক্সের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ২০১৫ সালে কোম্পানির ইপিএস নেমে আসে মাত্র ২৯ পয়সায়। তবে পরবর্তীতে কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্যে উন্নতি দেখা যায়। ২০১৭ সালে কেয়া কসমেটিকসের ইপিএস বেড়ে দাঁড়ায় ২ টাকা ১ পয়সায়। চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকের সময় হচ্ছে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। তবে গতকাল পর্যন্ত প্রথমার্ধের প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: