facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪

Walton

দরপতনের বাজারে ফের কারসাজি চক্রের তথ্য ফাঁস!


১৬ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার, ১০:২১  এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


দরপতনের বাজারে ফের কারসাজি চক্রের তথ্য ফাঁস!

দরপতনের ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। সর্বশেষ আট কার্যদিবসের মধ্যে সাত দিনই বড় দরপতন হয়েছে। সোমবারও প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৭৬ শতাংশ এবং অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৭৩ শতাংশ শেয়ারের দর কমেছে। এতে উভয় বাজারের প্রধান সূচক কমেছে প্রায় ১ শতাংশ হারে।

এ অবস্থায় সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীর মধ্যে `দরপতন দীর্ঘায়িত হবে`- এমন ধারণা ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের এ ধারণা উস্কে দিতে কারসাজিকারকদের কয়েকটি চক্র প্রায় প্রতিদিনই লেনদেনের শুরুতে শেয়ার বিক্রি করছে বলে বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, ব্যক্তিগত পর্যায়ে বড় আকারের বিনিয়োগ তহবিল ব্যবস্থাপনাকারী কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারাও নিজের শেয়ার বিক্রির পাশাপাশি গ্রাহকদেরও শেয়ার বিক্রি করতে উৎসাহিত করে পতনকে ত্বরান্বিত করছেন।

ব্যাংকের ঋণ-আমানত রেশিও কমানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক নীতিগত সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাবকে বড় করে তুলতে এসব চক্র নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবিও কয়েকটি ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ সমন্বয়ের জন্য বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করছে। এ তথ্যকেও অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হচ্ছে। তবে আইসিবির এমডি কাজী ছানাউল হক জানিয়েছেন, এ তথ্য সত্য নয়। তারা কয়েক দিন ধরে সাধ্যানুযায়ী শেয়ার কিনছে বলে দাবি করেন তিনি।

তবে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা মুনাফায় রয়েছেন, তারা শেয়ার বিক্রি করছেন। এমনকি স্বল্প লোকসানে থাকা বিনিয়োগকারীদেরও কেউ কেউ শেয়ার বিক্রি করে টাকা হাতে রাখছেন। এ ধারায় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও শেয়ার বিক্রি করছে। তবে এমন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির সংখ্যা কমছে, যে কারণে লেনদেনও কমছে। গত কয়েক দিনের দরপতনের কারণ খুঁজতে বিভিন্ন শ্রেণির বিনিয়োগকারী ও বাজার-সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

আলাপকালে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আরও জানান, বাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের সবাই নিষ্ফ্ক্রিয়। ফলে শেয়ার কেনার চাপ খুবই কম। যেসব প্রতিষ্ঠান শেয়ার কিনে বিক্রির চাপ সামাল দিতে পারত, তারাও হাত গুটিয়ে রেখেছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে, অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। তবে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএ ও ডিএসইর ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সংগঠন ডিবিএর নেতারা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডি রেশিও) কমানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত সিদ্ধান্ত দরপতনকে উস্কে দিয়েছে। এ অবস্থায় আসন্ন মুদ্রানীতি নিয়ে শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্টদের মধ্যে ভীতি রয়েছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে তারা উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।

বিএমবিএর সভাপতি ও লংকাবাংলার শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্ট বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শেয়ারবাজার সংবেদনশীলতা বিবেচনায় রেখে আসন্ন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার জন্য সময় চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার (আজ) ডিবিএর সঙ্গে বৈঠক হবে। পরিস্থিতি উন্নয়নে করণীয় নির্ধারণে আলোচনা হবে। বাজার

কারসাজিকারকরা দরপতনকে উস্কে দিতে কাজ করছে- এমন তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন বলেন, কেউ বাজারকে নেতিবাচক প্রবণতার দিকে নিতে চাইলে বিএসইসির উচিত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। কমিশনের সার্ভিল্যান্স এখন অনেক উন্নত। কারা কী করছে, তা অজানা থাকার কথা নয়।

এ বিষয়ে কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বেশ কিছু নেতিবাচক লেনদেন তারা শনাক্ত করেছেন। এরই মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রয়োজনে অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান জানান, খারাপ পরিস্থিতির ফায়দা তোলার লোকের অভাব কখনই হয় না। কমিশন সার্বক্ষণিক লেনদেন পর্যবেক্ষণ করছে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেকে এডি রেশিও পরিবর্তনকে চলমান দরপতনের বড় কারণ বলে মনে করছেন। তবে এ কারণে শেয়ারবাজারে অর্থপ্রবাহে বড় ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হবে না। বিনিয়োগকারীরা অযথাই ভয় পাচ্ছেন।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: