১৮ মার্চ ২০১৮ রবিবার, ০২:২০ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক দরপতনের সময় শেয়ার বিক্রির চাপ আসে শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস থেকে। গত সপ্তাহে প্রথম তিন দিন শীর্ষস্থানীয় কোন কোন ব্রোকারেজ হাউসের মোট লেনদেনের ৮০ শতাংশই আসে শেয়ার বিক্রি থেকে। এতে গত সপ্তাহের প্রথম তিন দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচকটি ২০৪ পয়েন্ট হারায়। অবশ্য পরবর্তি দুই দিনের ঊর্ধ্বগতিতে সপ্তাহ শেষে হারানো সূচক কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়েছে। বাজার পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ডিএসইর মোট লেনদেনের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ আসে পুঁজিবাজারের শীর্ষ ১০ ব্রোকারেজ হাউস থেকে। তাই এসব হাউস থেকে বিক্রিচাপ আসলে তা সামাল দেয়ার সক্ষমতা অবশিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসের নেই। গত সপ্তাহে দরপতন চলাকালীন সময়ে একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মালিকানাধীন সিকিউরিটিজ হাউস কিছু শেয়ার ক্রয় করে বাজারকে সহায়তান দেয়ার চেস্টা করা হয়। তবে চাহিদার তুলনায় আইসিবির সামর্থ্য কম থাকায় পতন রোধ সম্ভব হয়নি। আবার গত সপ্তাহের শেষ দুই দিন সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বগতি থাকায় আইসিবিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত আরো দুটি প্রতিষ্ঠান শেয়ার বিক্রি করে।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষনে দেখা যায়, পুঁজিবাজারের অস্থিরতায় গত ৮ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসের প্রতি দিনই শেয়ার বিক্রির চাপ ছিল জিকিউ সিকিউরিটিজে। উল্লিখিত সময়ে এ সিকিউরিটিজ হাউসের বিনিয়োগকারীরা মোট ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেন, যার ৬৪ শতাংশ আসে শেয়ার বিক্রি থেকে। গত সপ্তাহের প্রথম তিন দিনের দরপতনের দুই দিন লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ থেকেও বিক্রিচাপ আসে। গত ১১ মার্চ এ হাউসের মোট লেনদেনের ৫৯ শতাংশ ও ১৩ মার্চ মোট লেনদেনের ৫৫ শতাংশ আসে শেয়ার বিক্রি থেকে। এককভাবে ডিএসইর লেনদেনের সবচেয়ে বড় অংশের যোগান আসে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ থেকে।
শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস ইবিএল সিকিউরিটিজ থেকে গত সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে শেয়ার বিক্রি বেড়েছে। গত ১১ থেকে ১৪ মার্চ পর্য়ন্ত সময়ে এ প্রতিষ্ঠানটির মোট লেনদেনের ৬১ থেকে ৬৯ শতাংশ পর্যন্ত ছিল শেয়ার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয়। এ সময় ফিনিক্স সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারীরা যে পরিমান শেয়ার ক্রয় করে তার বিপরীতে দ্বিগুন পরিমানের শেয়ার বিক্রি করেছেন। এ প্রতিষ্ঠানটির মোট লেনদেনের ৭০ পর্যন্ত ছিল শেয়ার বিক্রি। এর বাইরে কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ, অগ্রনী ইকুয়িটি থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমানের শেয়ার বিক্রি হয়। আর গত সপ্তাহের শেষ দিন সূচকের উল্লম্ফনে আইসিবি সিকিউরিটিজ শেয়ার বিক্রি করে পরবর্তি বিনিয়োগের জন্য সক্ষমতা বাড়িয়েছে। এর বাইরে ইউনাইটেড ফিনান্স ট্রেডিং কোম্পানি, সিটি ব্রোকারেজ, ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজসহ শীর্ষ ৩০ তালিকায় থাকা কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস থেকেও বিক্রি চাপ ছিল। অবশ্য দরপতনে যেসব ব্রোকারেজ হাউস থেকে বিক্রিচাপ ছিল, এরমধ্যে কোন কোন প্রতিষ্ঠান উর্ধ্বগতির সময়ে শেয়ার ক্রয় করে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ সাইড লাইনে থাকায় লেনদেনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এরফলে আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেন ২৫ শতাংশের বেশি কমে যায়। গত সপ্তাহে ডিএসইর দৈনিক গড় লেনদেন হয় ২৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৩৭১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইতে কেনাবেচা হওয়া ৩৪০টি সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৫৪টির। বিপরীতে কমেছে ২৭০টির ও অপরিবর্তিত ছিল ১৬টি সিকিউরিটিজের।
অধিকাংশ শেয়ারের দর কমায় গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ১০৭ পয়েন্ট কমে ৫৭২০ পয়েন্টে নেমেছে। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি ৪২ পয়েন্ট হারিয়েছেল। গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।