facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

ঝুঁকি এড়াতে যে মৌলভিত্তির শেয়ারও কিনতে নিষেধ করলেন রকিবুর


০৪ জুন ২০১৭ রবিবার, ০৯:৫২  এএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


ঝুঁকি এড়াতে যে মৌলভিত্তির শেয়ারও কিনতে নিষেধ করলেন রকিবুর

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বর্তমান পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নিজ প্রতিষ্ঠান মিডওয়ে সিকিউরিটিজের। দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে থাকা এই ব্যক্তিত্ব সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হন। এতে উঠে আসে পুঁজিবাজারের বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার নানা প্রসঙ্গ।

প্রশ্ন: বাজার-সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, দীর্ঘদিন পর পুঁজিবাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। আপনি কি এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত?

রকিবুর রহমান: হ্যাঁ, আমি তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করছি। পুঁজিবাজার আগের চেয়ে স্থিতিশীল যারা এমন ভাবছেন, তাদের ধারণা ঠিক। একটু লক্ষ করলে দেখবেন এখন কিন্তু অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ক্রয়যোগ্য রয়েছে। অতিমূল্যায়িত শেয়ার এখন নেই বললেই চলে। আমি মনে করি, এই বাজারে দেখেশুনে বিনিয়োগ করলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

প্রশ্ন: কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ দরপতনে ধাক্কা খেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এদের অনেকে ভাবছেন, বাজারে আবার ধারাবাহিক পতন নেমে আসতে পারে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য…

রকিবুর রহমান: বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতে পারি, পুঁজিবাজারে আবারও ধারাবাহিক পতন নেমে আসবে এমন শঙ্কা নেই। কারণ বাজার পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে। কিছুদিন আগে বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল; তখন কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এটা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। যখন শেয়ারদর কিছুটা কমছে, তখনই কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। তাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, বাজারের যেমন উত্থান রয়েছে, তেমনি পতনও রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত, বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা। পুঁজিবাজার ধৈর্যের জায়গা, এটা ভুলে গেলে চলবে না।

প্রশ্ন: বাজার স্বাভাবিক বললেও এর মধ্যে কিছু দুর্বল কোম্পানির দর বাড়তে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি কিছু ভালো কোম্পানির শেয়ারদরও বাড়ছে সন্দেহজনক হারে। আপনার কী মনে হয়?

রকিবুর রহমান: বিনিয়োগকারীদের আগে বহুবার বলেছি দুর্বল কোম্পানির শেয়ার থেকে দূরে থাকতে। বলেছি, এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ লাভের চেয়ে ঝুঁকির শঙ্কা বেশি থাকে। কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেননি। কেউ যদি কথা না শোনেন, তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই। তবে এ কথা ঠিক, অতিমূল্যায়িত না হলেও কিছু ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারদর চোখে পড়ার মতো হারে বাড়ছে। আমি মনে করি, বিনিয়োগকারীদের এসব কোম্পানি থেকেও দূরে থাকা উচিত। কারণ এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। জেনে-বুঝে এমন ভুল করা উচিত নয়।

প্রশ্ন: দীর্ঘদিন পর আবারও ব্যাংকের শেয়ারে ঝুঁকেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এর প্রধান কারণ কী?

রকিবুর রহমান: ব্যাংকিং খাত হচ্ছে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী খাত। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন অনেকে। ফলে শেয়ারদরও তলানিতে চলে যায়। এখন সে পরিস্থিতি পাল্টেছে। তাছাড়া বর্তমানে মুনাফায় রয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক। খাতটির গড় মুনাফার হারও আগের চেয়ে বেড়েছে। সে কারণে এ খাতে ঝুঁকেছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থতি ভালো থাকায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংকিং খাতে। সব মিলে এ খাতের অবস্থা সন্তোষজনক।

প্রশ্ন: পুঁজিবাজারে সব সময় বিভিন্ন কোম্পানি নিয়ে নানা গুজব থাকে। যেটাকে অনেকে সংবেদনশীল তথ্য মনে করেন। আর এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করতে দুবার ভাবেন না। এভাবে বিনিয়োগ কতটা যৌক্তিক?

রকিবুর রহমান: এ কথা ঠিক, আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে সব সময় নানান গুজব ভেসে বেড়ায়। আর এটাকে সংবেদনশীল তথ্য মনে করেন কিছু বিনিয়োগকারী। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, কোম্পানি যখন লিগ্যালি কোনো ঘোষণা না দেয়, তখন পর্যন্ত কোনো তথ্যই সংবেদনশীল তথ্য হতে পারে না। ফলে অন্যের কাছে পাওয়া কোনো তথ্যই সংবেদনশীল তথ্য হতে পারে না। তাই কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দেখে বিনিয়োগ করা উচিত। কথা হচ্ছে, যার পুঁজির নিরাপত্তা তাকেই দিতে হবে।

প্রশ্ন: পুঁজিবাজারে কিছু কোম্পানি রয়েছে, যাদের পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকার কম। প্রতিষ্ঠানগুলো মূলধন বাড়ানোরও কোনো চিন্তাভাবনা করছে না। এসব কোম্পানি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন…

রকিবুর রহমান: আপনারা জানেন, স্বল্প পুঁজির কোম্পানি নিয়ে আলাদা মার্কেট তৈরি প্রক্রিয়াধীন। এ মার্কেট হলে সেখানে স্বল্প পুঁজির মূলধনের কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে পারবে। অন্যদিকে যে প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তালিকাভুক্ত, তাদের পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। অচিরেই তা নিয়ে বিএসইসি এবং কোম্পানি সচিবের সঙ্গে আলোচনা করবো। তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকার কম হতে পারবে না।

প্রশ্ন: সম্প্রতি পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে। গত তিন মাসে প্রায় ৩০ হাজার বিনিয়োগকারী এসেছেন। অনেকে বলছেন, ব্যাংকে আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় পুঁজিবাজারে আসছেন। আপনার কী মনে হয়?

রকিবুর রহমান: পুঁজিবাজারে এখনও অধিকাংশ কোম্পানিতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সে সঙ্গে স্থিতিশীল পরিবেশ বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করছে। যে কারণে বাড়ছে বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা। অন্যদিকে ব্যাংকে আমানতে সুদহার অনেক কমে যাওয়ায় জনগণ পুঁজিবাজারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমি মনে করি, দেখে-শুনে বিনিয়োগ করলে পুঁজিবাজার থেকে ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত মত।

প্রশ্ন: নতুন বিনিয়োগকারীদের প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য কেমন?

রকিবুর রহমান: আমি মনে করি, পুঁজিবাজারে নতুন-পুরোনো সব বিনিয়োগকারীরই মৌলভিত্তির কোম্পানিতে থাকা উচিত। তবে নতুনদের এ ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক থাকা দরকার। তাদের উচিত, বিনিয়োগের আগে পুঁজিবাজার নিয়ে ভালো ধারণা নেওয়া। এর জন্য পড়াশোনাসহ কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানা দরকার। একজন নতুন বিনিয়োগকারী যদি জেনে-বুঝে ভালো ধারণা নিয়ে পুঁজিবাজারে আসেন, তাহলে পুরোনোদের চেয়েও ভালো করার সুযোগ থাকে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: