facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

জীবন বীমা কোম্পানির লভ্যাংশ কমার আশঙ্কা


২০ মে ২০১৭ শনিবার, ০৬:০৭  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


জীবন বীমা কোম্পানির লভ্যাংশ কমার আশঙ্কা

অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের নীতিমালা চূড়ান্ত না হলেও এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা গত এপ্রিলে জারি করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সংস্থাটির এ নতুন নির্দেশনায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের পাশাপাশি বীমাগ্রহীতাদের অংশের বোনাসও কমে আসবে উল্লেখযোগ্য হারে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বীমা খাতে। মূলত এমন আশঙ্কায় অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন-সংক্রান্ত নির্দেশনাটি বাতিলের সুপারিশ করেছেন জীবন বীমা খাতের প্রধান নির্বাহীরা।

এরই মধ্যে বীমা খাতের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ) অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন নিয়ে নতুন নির্দেশনা বাতিলের সুপারিশ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে আইডিআরএতে। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট বিএম ইউসুফ আলী বণিক বার্তাকে বলেন, অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের নীতিমালা তৈরি না হলেও এ-সংক্রান্ত কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যে পদ্ধতিতে ভ্যালুয়েশন করতে বলা হয়েছে, তাতে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে জীবন বীমা খাতের লভ্যাংশ ও বোনাস। বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকরা মুখ ফিরিয়ে নিলে তা হবে খাতটির জন্য ভয়াবহ। তাই নতুন এ নির্দেশনা বাতিলের জন্য আমরা আইডিআরএতে সুপারিশ জানিয়েছি।

জানা যায়, নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানির অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন করা হবে নিট প্রিমিয়াম মেথডে। এছাড়া বীমাগ্রহীতাদের কাছ থেকে যে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করা হবে, তার একটি বার্ষিক হিসাব তৈরি করবে কোম্পানির নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাকচুয়ারি। প্রবিধানে আরো বলা হয়েছে, বীমাগ্রহীতা থেকে সংগৃহীত অর্থ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করা যাবে না। একই সঙ্গে এখান থেকে কোনো ধরনের বোনাস বা অন্য যেকোনো ধরনের চার্জ ধার্যে নিষেধাজ্ঞা রেখেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল মোহাম্মদ আবু নাসের বলেন, নিট প্রিমিয়াম মেথডে অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন করতে বলা হয়েছে। এর ফলে আমরা ধারণা করছি, বীমা খাতে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীর লাভ কমে গেলে তারা বীমা থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই নতুন এ নির্দেশনা পরিপালনের আগে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা উচিত বলে আমরা মনে করছি।

আইডিআরএ সূত্র জানায়, বীমা গ্রাহকদের দাবি পরিশোধে কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা নিরূপণের অন্যতম মাপকাঠি সলভেন্সি মার্জিন। ২০১১ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠিত হওয়ার পরই এ-সংক্রান্ত প্রবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন প্রতিবেদন তৈরির নীতিমালা না থাকায় তা প্রণয়ন করা যাচ্ছিল না। মূলত সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালা প্রণয়নের প্রথম ধাপ হিসেবে অ্যাকচুরিয়াল ভ্যালুয়েশনের এ নির্দেশনা জারি করেছে আইডিআরএ।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্স্যুরেন্স সুপারভাইজরসের (আইএআইএস) মতে, বীমা কোম্পানির ঝুঁকিভিত্তিক মূলধনের পর্যাপ্ততা অর্জনের জন্য সলভেন্সি-১ এর পাশাপাশি সুষ্ঠু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য সলভেন্সি-২ এর শর্তগুলো মেনে চলাও জরুরি। সলভেন্সি-১ এর শর্ত অনুযায়ী, বীমা ব্যবসায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য এ খাতের কোম্পানিগুলোর পর্যাপ্ত মূলধন থাকতে হবে। এতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের কারণে গ্রাহকের বীমা দাবি বেড়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম হবে। এদিকে সলভেন্সি-২ এ বলা হয়েছে, এ ঝুঁকি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে বীমা বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উদ্ধৃতপত্র তৈরি, ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন সংরক্ষণ, নিজ ঝুঁকি ও সক্ষমতার মূল্যায়ন এবং উচ্চপর্যায়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান থাকতে হবে।

জানা যায়, বীমা কোম্পানির ঝুঁকি নিরূপণ, আর্থিক ভিত্তি, সম্পদ ও দায় মূল্যায়নের কাজটি শুধু ডিগ্রিধারী অ্যাকচুয়ারিরাই করতে পারেন। বলা যায়, বীমা কোম্পানির ব্যবসায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকেন অ্যাকচুয়ারিরা। লাইফ, নন-লাইফ মিলিয়ে দেশে বর্তমানে বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৭৬। অথচ তাদের ঝুঁকি-সম্পদ-দায় নিরূপণের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত অ্যাকচুয়ারি আছেন মাত্র একজন। দেশে অ্যাকচুয়ারিয়াল সংকট দূর করতে ২০০৪ সালে ইনস্টিটিউট অব অ্যাকচুয়ারিস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ বীমা একাডেমি (বিআইএ)। তবে চুক্তির ১২ বছরেও কোনো অ্যাকচুয়ারি তৈরি করতে পারেনি বিআইএ।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে তিনজন অ্যাকচুয়ারি আছেন। এদের মধ্যে অ্যাকচুয়ারি এম শেফাক আহমেদ আইডিআরএর সাবেক চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় জন প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাকচুয়ারি জাফর হালিম। এছাড়া অন্য আরেকজন অ্যাকচুয়ারি হিসেবে আছেন সাধারণ বীমা করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সোহরাব উদ্দিন। প্রথম দুজন এ পেশায় না থাকার কারণে শুধু সোহরাব উদ্দীন দেশীয় বীমা কোম্পানিগুলোর অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের কাজটি করছেন বলে জানা যায়।

এদিকে আইডিআরএ গঠিত হওয়ার পর বিদেশী অ্যাকচুয়ারি নিয়োগে কিছু শর্তারোপ করায় বাংলাদেশে কাজ করা ছেড়ে দিয়েছেন আরেক প্রবাসী অ্যাকচুয়ারি আফসার উদ্দিন আহমেদ। বিদেশে থাকলেও আগে তিনি বাংলাদেশী বীমা কোম্পানিগুলোকে ভ্যালুয়েশন সেবা দিচ্ছিলেন। জানা গেছে, বাংলাদেশে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে এখন পর্যন্ত তিনি আইডিআরএতে কোনো আবেদন করেননি।

কোম্পানিগুলো জানায়, বিদেশী অ্যাকচুয়ারি নিয়োগে আরোপিত বিধি-নিষেধের কারণে অ্যাকচুয়ারিয়াল সেবা বিকল্প উত্সও কার্যত বন্ধ রয়েছে কোম্পানিগুলোর জন্য। ২০১১ সালে বিদেশী অ্যাকচুয়ারি নিয়োগের ওপর বেশকিছু শর্ত জুড়ে দেয় আইডিআরএ। শর্তগুলো হলো, (১) বিদেশী কোনো অ্যাকচুয়ারি দ্বারা নিরীক্ষাকার্য সম্পন্ন করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। (২) বেতন-ভাতা ও অন্য আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। (৩) সম্পদ ও ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাকচুয়ারিকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। (৪) প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় অ্যাকচুয়ারিকে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। (৫) প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর কোনো কারণে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তলব করা মাত্রই অ্যাকচুয়ারিকে হাজির হতে হবে। (৬) ভবিষ্যতে আর্থিক অবস্থা নিয়ে অ্যাকচুয়ারি তার নিজস্ব মতামত কোম্পানির ব্যবস্থাপনার কাছে তুলে ধরবে এবং প্রতিবেদনটি আইডিআরএর কাছে জমা দিতে হবে। (৭) কোম্পানির প্রশাসনিক ভূমিকায় কাজ করার জন্য অ্যাকচুয়ারিকে কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি নিতে হবে।

জানা গেছে, আইডিআরএ বীমার আধুনিকায়নে প্রতিটি কোম্পানিতে অ্যাকচুয়ারি বিভাগ খোলার নির্দেশ দেয় ২০১৩ সালে। কিন্তু কার্যত এখনো এর পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: