facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

ছয় কোম্পানির শেয়ারদরে ধস


১৮ জুন ২০১৮ সোমবার, ১২:০২  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


ছয় কোম্পানির শেয়ারদরে ধস

ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে এসেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নতুন ৬ কোম্পানির শেয়ার দর। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করার পর কাঙ্ক্ষিত হারে মুনাফা অর্জন এবং লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে মুনাফা বাড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ কোম্পানির মুনাফা বরং কমেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আইপিওর আগে কৃত্রিমভাবে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজার থেকে অধিক দরে টাকা উত্তোলন করেছিল। টাকা সংগ্রহের পর কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমছে। অর্থাৎ প্রকৃত আর্থিক অবস্থা এখন ফুটে উঠছে। মুনাফা কমে যাওয়ায় এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

সর্বশেষ ১২ জুনের দর অনুযায়ী প্রস্তাবিত ৩০ টাকার দ্য পেনিনসুলা চট্টগ্রামের শেয়ার দর ২৩.৯০ টাকা, ২৭ টাকার ফার ইস্ট নিটিং এন্ড ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর ১৫.২০ টাকা, ২২ টাকার অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্সের শেয়ার দর ১২.৪০ টাকা, ৬০ টাকার ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার দর ৪০.৮০ টাকা, ৩৫ টাকার আরগন ডেনিমসের শেয়ার দর ২৫.৯০ টাকা ও ৩৫ টাকার হামিদ ফেব্রিকস লিমিটেডের শেয়ার দর ২৬.১০ টাকায় অবস্থান করছে। এ ছাড়া মতিন স্পিনিংয়ের শেয়ার দর ইস্যু মূল্যের কাছাকাছি অবস্থান করছে।

দ্য পেনিনসুলা চট্টগ্রাম : ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ২০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৩০ টাকা দরে ২০১৪ সালে টাকা উত্তোলন করে পেনিনসুলা। শেয়ারবাজারে সাড়ে ৫ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১৬৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। হোটেল সম্প্রসারণ এবং চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টের সন্নিকটে আরেকটি নতুন হোটেল নির্মাণসহ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে এই টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। ২০১৪ সালের জুনে লেনদেন শুরু হওয়া কোম্পানির সর্বোচ্চ ৩৮ টাকা দর উঠে। ২০১৩ সালের ৩০ জুনের ২.৪৯ টাকা শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দেখিয়ে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে আসে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয় ০.৫৩ টাকা এবং শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ২০১৭ হতে মার্চ ২০১৮) কোম্পানটির ইপিএস হয়েছে ০.৪৭ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ০.৫৭ টাকা।

ফারইস্ট নিটিং এন্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ : ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ১৭ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৭ টাকা মূল্যে ২০১৪ সালে টাকা উত্তোলন করে। ২ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানি। বিএমআরই, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের কাজে ব্যয় করার জন্য এই টাকা উত্তোলন করে কোম্পানিটি। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে লেনদেন শুরু হওয়া কোম্পানির শেয়ার দর সর্বোচ্চ ৪৫.৪ টাকা হয় ওই মাসে। কোম্পানিটি ২০১৩ সালের ৩০ জুনে ২.৫৪ টাকা শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দেখিয়ে পুঁজিবাজারে আসে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয় ২.১৬ টাকা এবং শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ২০১৭ হতে মার্চ ২০১৮) কোম্পানটির ইপিএস হয়েছে ০.৯৭ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ১.১৮ টাকা।

অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স : অভিহিত মূল্য ১০ টাকার সঙ্গে ১২ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২২ টাকা দরে ২০১৩ সালে টাকা উত্তোলন করে অ্যাপোলো। আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি ২২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও নতুন ইউনিট স্থাপনে ব্যয় করার জন্য এই টাকা সংগ্রহ করে তারা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে লেনদেন শুরু হওয়া কোম্পানির শেয়ার দর সর্বোচ্চ হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ৪০.৮ টাকা। কিন্তু বর্তমান দর নেমে এসেছে ইস্যু মূল্যের অর্ধেকে। কোম্পানিটি ২০১২ সালের ৩০ জুনের ২.২৭ টাকা শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) নিয়ে পুঁজিবাজারে আসে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয় ১.৩৫ টাকা এবং শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ২০১৭ হতে মার্চ ২০১৮) কোম্পানটির ইপিএস হয়েছে ০.১৩ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ১.৩০ টাকা।

ওরিয়ন ফার্মা : ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ৫০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৬০ টাকা দরে ২০১৩ সালে বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে ওরিয়ন। কোম্পানিটি বাজারে মোট ৪ কোটি শেয়ার ছেড়ে ২৪০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। কোম্পানিটি ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে (তৃতীয় প্রান্তিকে) ৫ টাকা শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দেখিয়ে পুঁজিবাজারে আসে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয় ৩.৪০ টাকা এবং শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ২০১৭ হতে মার্চ ২০১৮) কোম্পানটির ইপিএস হয়েছে ২.৭৬ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৩.০২ টাকা।

আরগন ডেনিমস : ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ২৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৩৫ টাকা দরে ২০১৩ সালে টাকা উত্তোলন করে। বাজার থেকে প্রায় ১০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য এই অর্থ সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। ২০১৩ সালের মে মাসে লেনদেন শুরু হওয়া কোম্পানির সর্বোচ্চ ৯৯.৭ টাকা দর উঠে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে। কোম্পানিটি ২০১১ সালে ৫.৪৬ টাকা শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দেখিয়ে পুঁজিবাজারে আসে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয় ৩.০৬ টাকা এবং শেয়ারহোল্ডারদের ১২.৫০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনা্স লভ্যাংশ প্রদান করে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ২০১৭ হতে মার্চ ২০১৮) কোম্পানটির ইপিএস হয়েছে ২.৮৮ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ২.৫৭ টাকা।

হামিদ ফেব্রিক্স : ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ২৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৩৫ টাকা করে ২০১৪ সালে টাকা উত্তোলন করে। ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ঋণ পরিশোধ, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও আইপিও খাতে ব্যয় করার জন্য এই টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে লেনদেন শুরু হওয়া কোম্পানিটির শেয়ার দর প্রথম দিনে সর্বোচ্চ হয় ৫৬ টাকা। কোম্পানিটি ২০১৪ সালের ৩০ জুনে ৫.৫৮ টাকা শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দেখিয়ে পুঁজিবাজারে আসে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয় ০.৭৯ টাকা এবং শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ২০১৭ হতে মার্চ ২০১৮) কোম্পানটির ইপিএস হয়েছে ১.৫৪ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ০.৭৭ টাকা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ইস্যু ম্যানেজারদের সহযোগিতায় কোম্পানিগুলো কৃত্রিমভাবে মুনাফা বেশি করে দেখিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নীরব ভূমিকা পালন করছে। প্রকৃত মুনাফা জানতে বিএসইসি কোম্পানিগুলোর প্রদত্ত টেক্সের তথ্য যাছাই করতে পারে। টেক্সের তথ্য যাছাই করলে কোম্পানিগুলো মিথ্যা মুনাফা দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করতে পারবে না।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য কোম্পানির বেশি মুনাফা দেখানোর এক ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। তবে একটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলে মুনাফা বাড়বে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এ ছাড়া দেশের নিরীক্ষার মান (অডিটিং কোয়ালিটি) অনেক ক্ষেত্রেই ভালো না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালো আছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: