facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগুচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা


২৯ জুন ২০১৮ শুক্রবার, ১১:৫২  এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগুচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা

আঁকাআঁকি পছন্দ ছিল ছেলেবেলা থেকেই। তবে পারিবারিক সমর্থন না থাকায় এটা নিয়ে বেশি কিছু করতে পারেননি শাহনাজ সুলতানা সোমা। অ্যাকাউন্টিংয়ে পড়াশোনা শেষে দেশের বাইরে বিষয়ভিত্তিক ডিপ্লোমা করেন। এরপর শুরু হয় চাকরি জীবন। কিন্তু অফিসের ধরাবাঁধা নিয়ম তার ভালো লাগতো না। চাইনিজ এক কোম্পানিতে চাকরির সময় অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর তার চাকরি চলে যায়। এরপর যোগ দেন খুলনার ইপিজেডে।

সোমা জানান, মেয়ের জন্মের পর ৯ মাসের একটা বিরতি ছিল। ওই সময় তিনি ছেলেবেলার পছন্দের কাজটি আবার শুরু করেন। রঙ নিয়ে আঁকাআঁকি শুরু করেন শাড়ি, পাঞ্জাবিতে। পরিচিতজনদের সেগুলো উপহারও দেন। এক সময় তাদেরই পরামর্শে যোগ দেন অনলাইনভিত্তিক সংগঠন `মেয়ে নেটওয়ার্ক`-এ।

সোমা বলেন, `ওই সংগঠনের মাধ্যমে অনেক নারী উদ্যোক্তার কাছ থেকে মানসিক সমর্থন পেয়ে নিজের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ তৈরি হয় । শুরু হয় ব্যবসার উদ্দেশে বিভিন্ন হ্যান্ডপেইন্টের কাজ। এরপর `হুটহাট` নামে এক ফেসবুক পেজে সেগুলো আপলোড করি। দ্রুত সাড়া পেতে শুরু করি। ২০১৪ সালে `রঙধনু ক্রিয়েশন` নামে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি।`

এখন পুরোদস্তর একজন ব্যবসায়ী তিনি। সোমা জানান, তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে বেশ কয়েকজন কর্মরত রয়েছেন। দেশীয় কাপড়ের তৈরি শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, কুর্তা, কাপ্তানে হ্যান্ডপেইন্টের কাজ করেন তিনি। সারা বছরই এই পোশাকগুলোর চাহিদা থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা তৈরি হয় পহেলা বৈশাখে। এছাড়া তার তৈরি ক্যানভাসেরও বেশ চাহিদা রয়েছে।

সোমা বলেন, `দুই বছর আগেও আমার প্রতিষ্ঠানকে কেউ চিনতো না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে।` তার মতে, অন্যান্য সবক্ষেত্রের মতো ব্যবসা ক্ষেত্রেও নারীদের অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিশেষ করে ব্যবসা করতে চাইলে বেশিরভাগ নারী পারিবারিক সমর্থন পান না। এরপরই থাকে পুঁজির সমস্যা।

তবে সোমার ভাষায়, নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে গেলে বাঁধা আসবেই। থেমে গেলে চলবে না। শুরুতে ছোটো কোনো ব্যবসা দিয়ে শুরু করতে পারলে ভালো। আজকে ব্যবসা শুরু করলে লাভ হবে এমনটা ভাবা ঠিক নয়। লাভের জন্য সময় দিতে হবে।

শুধু সোমা নয়, বতর্মানে তৃণমূল থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির নারী নিজস্ব ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭ ভাগ নারী উদ্যোক্তা আছেন। সেই হিসেবে প্রায় ৮০ লাখ নারী উদ্যোক্তা ইতিমধ্যে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছেন। গত ১০ বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।

নারীদের ব্যবসার দিকে ঝোঁকার কারণ প্রসঙ্গে `ফিনারি` নামে একটি অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ড চিং চিং মারমা বলেন, `মাস্টার্স শেষে চাকরি খুঁজতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনেক কিছু মাথায়ও রাখতে হয়েছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা, কোথাও চাকরিতে টাকা দিয়ে ঢোকা— এসব জিনিস বিবেচনা করে এক সময় ব্যবসার কথাই মনে হলো।`

ব্যবসা করতে গিয়ে কি ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন জানতে চাইলে চিং চিং বলেন, `প্রথমেই পুঁজির সমস্যায় পড়েছিলাম। মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। জিনিস তৈরির পর পরিচিতির জন্য প্রথম এক বছর লস প্রজেক্ট ধরেই এগিয়েছি। ব্যবসা করলে লস দিতে হবে এটা মাথায় ছিল।`

তিনি জানান, দেশের ঐতিহ্য এবং আদিবাসী অলঙ্কারের ধারণা নিয়ে `ফিনারি`র যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে। প্রথমে এখান থেকে তৈরি সামগ্রীগুলো পরিচিতি করানোর দরকার ছিল। এজন্য বেসরকারি অনেকগুলো মেলায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেখানে ৮০ ভাগই লোকসান করেছেন। তারপরও লাভ হয়েছে একটাই। সেটা হলো, এখন অনেকেই জানে `ফিনারি` সম্পর্কে। তার ভাষায়, ব্যবসার জন্য পরিচিতিটা খুব দরকার।

ব্যবসার ক্ষেত্রে নারীদের প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে ড চিং চিং বলেন, মেয়েরা ব্যবসা করবে— এখনও এই বিষয়টি অনেক পরিবার সহজভাবে নিতে পারে না। তাছাড়া যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করেন তারা কারিগরি এবং উপকরণ নিয়েও সমস্যায় পড়েন। এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিনি নারীদের মানসিকতা দৃঢ় করার পরামর্শ দিয়েছেন।

তার ভাষায়, ব্যতিক্রমী কিছু করতে গেলে কথা শুনতে হবে। এজন্য থেমে গেলে চলবে না। লেগে থাকলে সফলতা একদিন আসবেই। নতুন যারা ব্যবসায় নামবেন তাদের জন্য কিছু পরামর্শও দিয়েছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা।

চিং চিং বলেন, যারা ব্যবসা করতে চান প্রথমেই নিজের একটা ব্যাংক একাউন্ট করা উচিত। সঙ্গে সঙ্গে নিজের ট্রেড লাইসেন্সটাও করে ফেলতে হবে। অ্যাকাউন্ট একটু পুরনো না হলে ক্ষুদ্র ঋণ পেতে ঝামেলায় পড়তে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এসএমই ঋণের ক্ষেত্রে নারীরা সহজ শর্তে ঋণ পেয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ১৫ শতাংশ নারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর এ ঋণের জন্য সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করা আছে। এক্ষেত্রে একজন গ্যারান্টার লাগে। তবে সুবিধা একটাই, এসব জায়গায় জামানত ছাড়াই ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে নিজের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকাটা জরুরি। এছাড়া ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে।

দেশে নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এসএমই ফাউন্ডেশনের নারী উদ্যোক্তা বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার নাজমা খাতুন বলেন, উদ্যোক্তা হতে গেলে এখনো নারীরা যে সমস্যায় পড়েন তা হলো ঠিক মতো তথ্য না পাওয়া। কীভাবে তিনি একজন উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারেন সেটার খোঁজ তারা পান না।

তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তারা দ্বিতীয়ত সমস্যায় পড়েন অর্থনৈতিকভাবে। পারিবারিকভাবে তারা অর্থনৈতিক সহযোগিতা খুব কম পান। এর পরে আছে পারিপার্শ্বিক সমস্যা। একজন নারী হিসেবে কর্মী কিংবা ব্যবসার উপাদান জোগাড় করা বেশ কঠিন। একজন পুরুষ যেভাবে জিনিসগুলো গুছিয়ে করতে পারেন একজন নারী তা পারেন না সামাজিক সীমাবদ্ধতার কারণে। তাকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়।

নাজমা খাতুন জানান, দেশে নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা কত বা তারা কতভাগ সফল তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে আশার কথা হলো, দিন দিন নারীদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

 

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

নারী ও নারী উদ্যোক্তা -এর সর্বশেষ