facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪

Walton

চিহ্নিত কোম্পানির শেয়ারদর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে


১১ মার্চ ২০১৮ রবিবার, ০৩:৫৬  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


চিহ্নিত কোম্পানির শেয়ারদর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে

বাজারে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার প্রক্রিয়া সব সময়ই দেখা যায়। ‘জেড’ ক্যাটাগরির বেশিরভাগ কোম্পানিই হলো জুয়ার ইন্সট্রুমেন্ট। এগুলো নিয়ে অনেকে জুয়া খেলে। এগুলো শেয়ারবাজারকে প্রতিনিধিত্ব করে না - দেশের শেয়ারবাজার চলছে উল্টোপথে। মৌলভিত্তির ভালো শেয়ারের দরপতন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর বিপরীতে দুর্বল মৌলভিত্তিক বা দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে যাচ্ছে হু-হু করে। প্রায় আড়াই মাস ধরে এই প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এতে বাজারে আগামীতে আরও বড় ধরনের সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, বাজারের এই অবস্থা দ্রুত থামানো উচিত। অন্যথায় বাজারে আবার ধস নামতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বাজারের এমন আচরণকে অস্বাভাবিক হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন, এর পেছনে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যেসব কোম্পানি কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। শেয়ারপ্রতি আয় নেতিবাচক। সেগুলোর দাম বাড়ার কোনো যুক্তি নেই।

প্রায় এক মাস ধরে পুঁজিবাজারে তীব্র তারল্য সংকট, রাজনৈতিক গুমট পরিস্থিতি এবং ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার নিয়ে টানোপড়েন চলছে। এ কারণে বাজারে অব্যাহত দরপতন চলছে। কিন্তু বাজারে জাং শেয়ার নামে অভিহিত জেড ক্যাটাগরির দুর্বল শেয়ারের দাম নিয়মিত লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। কোম্পানির শেয়ারের দাম তাদের মৌলভিত্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে বুঝতে হবে এখানে কোনো কারসাজি আছে। এসব শেয়ারের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি তদন্ত করে বিএসইসিকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের ৩০ নভেম্বর জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শেয়ারের মূল্য ছিল ১৩ টাকা। গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২২ টাকা ৭০ পয়সা দরে। গত ৩০ অক্টোবর দুলামিঞা কটনের প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪ টাকায়, সেটি গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে ৪৭ টাকা ২০ পয়সা দরে। বীচ হ্যাচারির শেয়ার ১৫ অক্টোবর ১৩ টাকায় লেনদেন হলেও সর্বশেষ বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে ১৭ টাকা ৬০ পয়সা করে। ৩০ অক্টোবর মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ১২ টাকা করে। গত বৃহস্পতিবার এই কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৩ টাকা ৮০ পয়সা দরে। মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার গত অক্টোবরে ১১ টাকা করে লেনদেন হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৬ টাকা করে। ২৫ নভেম্বর শ্যামপুর সুগার মিলের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১ টাকা করে। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৪ টাকা করে। ঝিল বাংলা সুগার মিলের শেয়ার গত ১৩ নভেম্বর ৫৬ টাকায় লেনদেন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এর দাম বেড়ে লেনদেন হয়েছে ৬৭ টাকা করে।

একইভাবে শেয়ারবাজারে লোকসানি এবং লভ্যাংশ দেয় না এমন চিহ্নিত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যাচ্ছে। এসব কোম্পনির বেশিরভাগই লোকসানি। পুঁজিবাজারের জেড ক্যাটাগরির লোকসানি কিছু কোম্পানির ডিসেম্বর শেষে শেয়ারপ্রতি লোকসানের চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো। সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শেয়ারপ্রতি লোকসান ০.৭৪ টাকা, দুলামিঞা কটনের লোকসান ২.০৭ টাকা, বীচ হ্যাচারির লোকসান ২ টাকা, মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের লোকসান ৪.৬২ টাকা, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের লোকসান ২.৪৮ টাকা, শ্যামপুর সুগার মিলের লোকসান ৪০.৮৫ টাকা, ঝিল বাংলা সুগার মিরের লোকসান ২৯.৭২ টাকা, বঙ্গজের লোকসান ০.২৮ টাকা, তাল্লু স্পিনিং মিলসের লোকসান ০.৬১ টাকা, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের লোকসান ৩.০৪ টাকা, ঢাকা ডায়িংয়ের লোকসান ১.৫৭ টাকা।

বাজার বিশ্লেষকরা জানান, এসব কোম্পানির শেয়ারের শক্তিশালী কোনো আর্থিক ভিত্তি নেই, অথচ লাগামহীনভাবে বাড়ছে দাম। শেয়ারবাজারে মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম যখন পড়ছে তখন কোনো কারণ ছাড়াই পতনমুখী বাজারে এসব দুর্বল শেয়ারের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, যা অস্বাভাবিক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ধারণা করা হচ্ছে, এসব কোম্পানিকে ঘিরে একটি শক্তিশালী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে, লাভ হলেই বিক্রি করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। প্রসঙ্গত, যেসব কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ কিংবা যেসব কোম্পানি লভ্যাংশ দিতে পারে না কিংবা বছরে একটি এজিএমও (বার্ষিক সাধারণ সভা) করতে পারে না সেসব কোম্পানিকে দুর্বল কোম্পানি হিসেবে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করা হয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুর্বল এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম যেভাবে বাড়ছে, তা সন্দেহজনক। কারা এসব কোম্পানির শেয়ার কিনছে, তা খতিয়ে দেখে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিএসইসি বলছে, বিষয়টি তাদের নজরদারিতে রয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত এসব বিষয় তদারকি করছেন। ক্ষেত্রবিশেষে নির্দেশনাও দিচ্ছেন। বাজারে অচিরেই এই প্রবণতা কমে আসবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার এ প্রক্রিয়া সব সময়ই বাজারে দেখা যায়। আসলে ‘জেড’ ক্যাটাগরির বেশিরভাগ কোম্পানিই হলো জুয়ার ইন্সট্রুমেন্ট। এগুলো নিয়ে অনেকে জুয়া খেলে। এগুলো আমাদের শেয়ারবাজারকে প্রতিনিধিত্ব করে না। দিনের পর দিন এগুলো টপটেনে আসছে। আবার ঠাস করে পড়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেখছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কিছুই করছে না। দীর্ঘদিন ধরে যে কোম্পানিগুলো জেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে এগুলো পুঁজিবাজারের জন্য ক্ষতিকারক। এদের পর্ষদকে কখনই নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকেও কিছু বলা হয় না।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

শেয়ারবাজার -এর সর্বশেষ