facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

গ্রামের মানুষের উন্নয়নই মূল লক্ষ্য: পল্লীসঞ্চয় ব্যাংক চেয়ারম্যান


০১ ডিসেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার, ১১:৪৫  এএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


গ্রামের মানুষের উন্নয়নই মূল লক্ষ্য: পল্লীসঞ্চয় ব্যাংক চেয়ারম্যান
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যন ড. মিহির কান্তি মজুমদার

ইকো সিস্টেমকে ব্যবহার করে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িতে একটি খামার, একটি বাড়ি করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের দেশের দরিদ্র জনগণের দারিদ্র্যতা বিমোচনের এগিয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের গুরুত্বপূণ ভূমিকা পালন করছে। সম্প্রতি নিজস্ব প্রতিবেদক রমজান আলীকে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যন ড. মিহির কান্তি মজুমদার।

ড. মিহির কান্তি মজুমদার বলেন, ব্যাংকের মূললক্ষ্য দেশের দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের নিয়ে সমিতি করে সমিতির তহবিল গঠন, সদস্যদের সঞ্চয় প্রবনতা বৃদ্ধি, দরিদ্র জনগণের দারিদ্র্যতা বিমোচন, নারীদের আয় বাড়ার কাজে নিয়োজিত করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করা , অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, সমিতি ও সদস্যদের সঞ্চয় ও অর্জিত সম্পদের লেনদেন ও রক্ষণাবেক্ষণ, ঋণ ও অগ্রিম প্রদান ইত্যাদি কার্যাদি সম্পাদনের মাধ্যমে দেশ থেকে দরিদ্রতা বিমোচন করা। নারীদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে প্রতিটি সমিতিতে ৬০ জন সদস্যের মধ্যে ৪০ জন মহিলা সদস্য রয়েছে। ব্যাংক সমিতি সমূহের এসএনডি হিসাব, সদস্যদের সঞ্চয়ী আমানত হিসাব, মাসিক ডিপোজিট হিসাব, স্কুল ব্যাংকিং হিসাব ইত্যাদি পরিচালনা করছে। সমিতির সদস্যের কৃষি পণ্য যাতে কম মূল্যে বিক্রি করতে না হয় তার জন্য স্বল্প সেবা মূলে ঋণ প্রদানসহ অন্যন্য বিভিন্ন উৎপাদমূখি খাতে স্বল্প সেবা মূল্যে ঋণ প্রদান করে থাকে। ব্যাংক ১ লাখ উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের প্রশিক্ষণ ও স্বল্প সেবা মূল্যে ঋণ প্রদান করছে। ব্যাংক সদস্যদের উন্নয়নকল্পে নতুন নতুন খাতে ঋণ দিচ্ছে।

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যন বলেন, সমিতি সমূহের সদস্যদের আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য ৪৮৫ টি উপজেলা সদরে ব্যাংকের নিজস্ব ভবনে শাখা স্থাপন করা হয়েছে এবং আরো ৫টি উপজেলা সদরে শাখা স্থাপন প্রক্রিয়াধীন আছে। ব্যাংকের প্রতিটি জেলায় অধিকাংশ নিজস্ব ভবনে জেলা কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। জেলা কার্যালয় শাখাগুলোকে তদারকি করে থাকে। ব্যাংকের অনুমোদিত জনবল ৮ হাজার ৮২৫ জন। প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে মাঠ কর্মী কর্মরত রয়েছে। ব্যাংক তার নিজস্ব অনলাইন ব্যাংকিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে সদস্যদের আর্থিক সেবা প্রদান করছে।

তিনি বলেন, আর্থিকসেবা সদস্যদের কাছে আরো সহজলভ্য করার জন্য চালু করা হয়েছে ব্যাংকের নিজস্ব ডিজিটাল আর্থিক সেবা ‘‘পল্লীলেনদেন’’। প্রতিটি সমিতিতে একজন করে সদস্যকে লেনদেন ম্যানেজার (এজেন্ট) নিয়োগ করা হচ্ছে যারা গ্রামে বসেই সদস্যদের অর্থ লেনদেন করছেন। সেখানে প্রতিদিন ৭ কোটি টাকার মতো লেনদেন হচ্ছে। এটাকে আরো বৃদ্ধি করা হবে। এ সেবার মাধ্যমে একদিকে লেনদেন ম্যানেজারগনের অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সমিতির সদস্যগণের প্রবাসে থাকা তাদের আত্নীয় স্বজনদের প্রেরীত রেমিটেন্স পল্লীলেনদেন ম্যানেজারগনের মাধ্যমে এলাকা থেকে উত্তোলণ করতে পারবেন। তাছাড়া এ সেবার মাধ্যমে যাবতীয় বিল প্রদান ও সরকার কর্তৃক প্রদেয় বিভিন্ন ভাতাদি উত্তোলণ করা যাবে। সদস্যগণকে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য উপজেলা সদরে অবস্থিত শাখায় আসতে হচ্ছে না। ফলে সদস্যদের শ্রম ও ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে। সদস্যগণ তাদের নিজস্ব মোবাইলের মাধ্যমে যাবতীয় ব্যাংকিং কাযর্ক্রম সম্পাদন করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ সেবাটির মাধ্যমে সদস্যগণ ঘরে বসেই নিজস্ব মোবাইলের মাধ্যমে যাবতীয় ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারবেন। সমিতির সদস্যগণের উপৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করণের নিমিত্তে ব্যাংক অনলাইন ই-কমার্স সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে। এ সিস্টেমে সদস্যগণের উৎপাদিত পণ্য যথাযথ মূল্যে বিক্রি করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের সেবামূল্য মাত্র ৮ শতাংশ এবং এসএমই ঋণের সেবামূল্য মাত্র ৫ শতাংশ । গ্রাম সমিতির সদস্য তথা ব্যাংকের গ্রাহকগণ অত্যন্ত দরিদ্র শ্রেণীর। এসকল সদস্যগণ তাঁদের বাড়িতে আয় বধর্ক কৃষিজ খামার স্থাপন করে আয়বৃদ্ধি পূর্বক দারিদ্র্যতা বিমোচনে সচেষ্ট আছেন। পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, সদস্যদের ৩৩ শতাংশ গবাদি প্রাণী পালন, ২১ শতাংশ সদস্য হাঁস-মুরগী পালন, ১১ শতাংশ সদস্য মৎস্য চাষ ও ১২ শতাংশ সদস্য কৃষি খামার স্থাপনে অর্থ বিনিয়োগ করে করা হচ্ছে।

ড. মিহির কান্তি মজুমদার আরে জানান, কৃষকদের মাঝে কৃষিঋণ বিতরণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে সমৃদ্ধ কৃষিপরিবার গড়ে তোলাও আমাদের মূল লক্ষ্য। কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঋণ যেমন-কৃষিকাজ, মৎস্যচাষ, হাঁস-মুরগি পালন, গবাদিপশু পালন, বননার্সারী ও ফলচাষ, মৎস্য হ্যাচারী, জৈবসার উৎপাদন, মাশরুম চাষ, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। উৎপাদিত কৃষিপণ্য-প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণন ঋণপ্রদানের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়াও পল্লীঅঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কার্যক্রম সম্প্রসারণ জন্য ঋণপ্রদানের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নিষিদ্ধ নয় এবং লাভজনক উৎপাদনশীল বা বাণিজ্যিক বা সেবামূলক যেকোনও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঋণের খাত হিসেবে বিবেচিত হবে।

তিনি জানান, আমরা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এরমধ্য রয়েছে, স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। আমরা ইতিমধ্যে ইলিশসংরক্ষণ সমিতি, বনসংরক্ষণ সমিতি, ডলফিনসংরক্ষণ সমিতিসহ বহু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।

ড. মিহির কান্তি মজুমদার জানান, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহণ করে তিন পদ্ধতিতে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে গ্রাহকরা। সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণপরিশোধ, মাসিক কিস্তিতে ঋণপরিশোধ, মৌসুমীভিত্তিক ঋণপরিশোধ। এছাড়াও কোনও সদস্য স্বেচ্ছায় সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণপরিশোধে আগ্রহী হলে, সে-ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যন বলেন, সরকারের ঘোষিত প্রনোদনার বরাদ্দকৃত অর্থ সারাদেশে বিতরণ করতে পেরেছি। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে ২৫০ কোটি টাকা বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া এসএমই ৫৬৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা ও শস্যগোলা ৯১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। মুজিব বর্ষে আমরা ১ লাখ পরিবারকে ৫ শতাংশ সুদে উদ্যোগতা ঋণ দিচ্ছি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: