facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিটিআরসির দ্বন্দ্ব বিদেশিদের কাছে কঠিন বার্তা


০১ জানুয়ারি ২০২০ বুধবার, ১২:৫২  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিটিআরসির দ্বন্দ্ব বিদেশিদের কাছে কঠিন বার্তা

টানা দুই বছর ধরে বড় পতনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি। ব্লু-চিপসহ তালিকাভুক্ত প্রায় ৮০ শতাংশ শেয়ার দর হারিয়েছে। পুঁজির সর্বস্ব হারিয়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছেড়েছেন। বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বড় লোকসানে বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে। স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে। গত দুই বছরে পুঁজিবাজার পতনের যতগুলো কারণ ছিল, তার সবগুলো নিয়েই নতুন বছর ২০২০ সালে যাত্রা শুরু হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারের ভাগ্য নির্ভর করছে সরকারের হাতে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৮ সাল থেকে চলা দরপতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ২৯ শতাংশ। এর মধ্যে বিদায়ী বছর ২০১৯ সালে ১৭ শতাংশের বেশি সূচক কমেছে। বিদায়ী বছরে ব্লু-চিপ কোম্পানি নিয়ে তৈরি ডিএসই-৩০ সূচক হারিয়েছে ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সময় ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এ সময় লেনদেনও নেমে গেছে তলানিতে। ২০১৭ সালে ডিএসইতে গড় লেনদেন ছিল ৮৭৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, যা ২০১৯ সালে ৪৮০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। গত দুই বছর ধরেই বিদেশিরা দেশের পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এর প্রভাবে শক্তিশালী মৌলভিত্তির কোম্পানিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দর হারাচ্ছে।

গত দুই বছর ধরে পুঁজিবাজারের বিকাশে যেসব বাধা ছিল, তার সবই রয়ে গেছে। ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটের নিরসন হয়নি। বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পরও খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর হয়নি। পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির কোনো উদ্যোগও দেখা যায়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। বরং অর্থনীতিতে শঙ্কা আরও বেড়েছে। রপ্তানি আয় কমে গেছে। টাকার অবমূল্যায়ন হয়নি। পুঁজিবাজারে তারল্য জোগানে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগও ভেস্তে গেছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির বোনাস শেয়ারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে পুঁজিবাজার চাঙ্গার সরকারি উদ্যোগেও সাড়া পড়েনি। নতুন বছরের জন্যও এসব চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সরকারের বিশেষ করে অর্থমন্ত্রীকে পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ারের জোগানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিটিআরসির দ্বন্দ্বের বিষয়টিতে বিদেশিদের কাছে কঠিন বার্তা দেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বড় মূলধনী কোম্পানি হওয়ায় এই দ্বন্দ্বের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে। এটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে হলে পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

২০১৭ সালের পর থেকে পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমে গেছে। দুই বছরে তাদের লেনদেন কমেছে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ ছিল ১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। আর পরের দুই বছরে উল্টো ১ হাজার ৮২ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়ে গেছেন তারা। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহারের একটি বড় কারণ হচ্ছে পাওনা নিয়ে গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিটিআরসির দ্বন্দ্ব। এছাড়া টাকার অবমূল্যায়ন না হওয়া ও বিশ্বে বিভিন্ন তহবিলের অবসায়নও বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহারের কারণ।

গত দুই বছরে টানা পতনের কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার দর সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। এতে করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। সদ্য বিদায়ী বছরে ডিএসইর পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে, যা ২০১০ সালের ধসের পর সর্বনিম্ন। তবে শেয়ার দরের সর্বনিম্ন অবস্থানেও বিনিয়োগের সুযোগ নিচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসইর পরিচালক ও ডিবিএ সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, দুই বছরের দরপতনে মৌলভিত্তির তুলনায় কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে নিচে নেমে গেছে। আমরা আশা করছি, নতুন বছরে পুঁজিবাজারে সংকট কেটে গিয়ে যৌক্তিক মূল্য ফিরে পাবে শেয়ারগুলো। সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার বিষয়টিও কার্যকর হবে। ফলে পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ আসবে। তবে গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিটিআরসির বিরোধ সুরাহার বিষয়টিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কোম্পানিটির শেয়ার দর কমে যাওয়ায় সূচকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আশা করছি, নতুন বছরে এর সমাধান হবে।

বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ব্লু-চিপ শেয়ারের দর যেভাবে কমেছে, তাতে পোর্টফোলিও ম্যানেজার, বিদেশি বিনিয়োগকারীসহ স্থানীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন। বর্তমানে ফ্রন্টিয়ার মার্কেট ফান্ডগুলোর একটি বড় অংশই রিডেম্পশন হয়েছে, যার প্রভাবে পুঁজিবাজারে বিক্রিচাপ বাড়াচ্ছে।

খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির অবনতি সম্পর্কে মনিরুজ্জামান বলেন, এটা নিয়ে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখতে পাইনি। বরং খেলাপিদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও খেলাপি বাড়ছে। এ ধরনের প্রবণতা পুরো অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। টাকার অবমূল্যায়নের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বলেছেন, অবমূল্যায়ন হবে না। এমন পরিস্থিতিতে সবাই সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই আশা করছে, অর্থনীতি চাঙ্গা করতে নীতিনির্ধারণী কিছু সিদ্ধান্ত সরকার নেবে, যার প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়বে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: