facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে ব্যাখ্যা দিতে হবে


২১ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার, ১০:৫৪  এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে ব্যাখ্যা দিতে হবে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর কোনো কোম্পানির আর্থিক ফলাফলে বিপর্যয় হলে কারণসহ ব্যাখ্যা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নীতিমালা সম্পর্কিত এক নির্দেশনায় এমন বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।

প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), পুনঃগণপ্রস্তাব (আরপিও), রাইট ইস্যু, সরাসরি তালিকাভুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানির আর্থিক ফলাফল খারাপ হলে ব্যাখ্যা দিতে হবে। এ ছাড়া প্রান্তিক কিংবা বার্ষিক প্রতিবেদনে আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা দিলেও কোম্পানিকে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। পরিচালন ফলাফলে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হলে কারণসহ ব্যাখ্যা দিতে হবে। লভ্যাংশ দেওয়ার ব্যর্থতায় কারণসহ প্রতিবেদন দিতে হবে। আর তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস কিংবা স্টক লভ্যাংশ দিতে পারবে না।

তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য বেশ কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করে ২০১২ সালের ৭ আগস্ট প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নীতিমালা অনুমোদন দেয় বিএসইসি। প্রায় ছয় বছর পর ওই নীতিমালায় সংশোধনী এনে গত ৩ জুন ‘করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড’ নামে এক নির্দেশনা জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি, যা সম্প্রতি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। করপোরেট গভর্ন্যান্স কোডে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সংখ্যা, স্বাধীন পরিচালকের সংখ্যা ও যোগ্যতা ছাড়াও আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে বিভিন্ন নীতিমালা অনুসরণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।

সংশোধিত প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নীতিমালা অনুযায়ী, শেয়ার হোল্ডারদের দেওয়া পরিচালকদের প্রতিবেদনে কোম্পানির উৎপাদন ব্যয়, মোট আয়, নিট মুনাফা ও বিশেষ আয়-ব্যয় সম্পর্কিত বর্ণনা থাকতে হবে। এ ছাড়া একই গ্রুপভুক্ত কিংবা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে লেনদেনের বিস্তারিত তথ্যও দিতে হবে। আইপিও, রাইট কিংবা অন্য কোনো উপায়ে সংগৃহীত অর্থের ব্যবহারের প্রতিবেদন দিতে হবে। শিল্পের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ উন্নয়ন সম্পর্কিত প্রতিবেদন, সেগমেন্ট অথবা পণ্যের কর্মক্ষমতা ও বিভিন্ন ঝুঁকি সম্পর্কিত তথ্যও পরিচালক প্রতিবেদনে থাকতে হবে।

এ ছাড়াও পরিচালক প্রতিবেদনে নিয়ন্ত্রণকারী শেয়ার হোল্ডারদের কোনো অবমাননাকর কর্ম হতে সংখ্যালঘু শেয়ার হোল্ডারদের সুরক্ষা ও প্রতিকারের কার্যকর উপায় সম্পর্কিত বিবৃতি দিতে হবে। কোম্পানি যে অস্তিত্ব সঙ্কটের দিকে যাচ্ছে না, তার যৌক্তিক কারণসহ বিবৃতি দিতে হবে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে মূল কোম্পানি কিংবা সাবসিডিয়ারি কিংবা সহযোগী কোম্পানির শেয়ারধারণ সম্পর্কিত তথ্য জানাতে হবে। পাশাপাশি পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও ইন্টারনাল অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্সের প্রধানসহ উল্লিখিত কর্মকর্তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারধারণ সম্পর্কিত তথ্য জানাতে হবে। এ ছাড়া উল্লিখিত কর্মকর্তাদের নিচের শীর্ষ পাঁচ বেতনভুক্ত কর্মকর্তার কোম্পানিতে তাদের শেয়ারধারণ সম্পর্কিত তথ্যও জানাতে হবে। বর্তমানে শুধু উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ সম্পর্কিত তথ্য জানায় কোম্পানিগুলো।

আর্থিক বিবৃতি তৈরিতে নীতিমালা ও প্রাক্কলনে পরিবর্তন হলে আর্থিক ফলাফল ও নগদ প্রবাহে যে প্রভাব পড়বে, তার পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা থাকতে হবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পর্ষদের আলোচনা ও বিশ্লেষণে। দেশ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা থাকতে হবে। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) কোম্পানির পরিচালন, কর্মক্ষমতা ও আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অথবা পূর্বাভাস যৌক্তিক কারণসহ শেয়ার হোল্ডারদের জানাতে হবে।

করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড অনুযায়ী, সাবসিডিয়ারি, সিস্টার কনসার্ন ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কেউ তালিকাভুক্ত মূল কোম্পানির স্বাধীন পরিচালক হতে পারবে না। কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালক, মনোনীত পরিচালক কিংবা কোম্পানিতে এক শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তির আত্মীয় (বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পুত্রবধূ ও জামাতা) স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না। এ ছাড়া কোম্পানির কর্মকর্তারা পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হতে পারবেন না। তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ২০ ও সর্বনিম্ন ৫ জন থাকতে পারবেন। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের এক-পঞ্চমাংশ স্বাধীন পরিচালক হতে হবে। এক্ষেত্রে যদি ভগ্নাংশ (ফ্রাকশন) হয় সেক্ষেত্রে স্বাধীন পরিচালক বাড়াতে হবে।

এ ছাড়া কোম্পানির কোনো কর্মকর্তা অবসরের পর দুই বছর পার না হলে একই কোম্পানির স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না। আগে স্বাধীন পরিচালকদের মেয়াদের (সিলিং) বিষয়টি সুনির্দিষ্ট ছিল না। সংশোধিত নীতিমালায় এখন থেকে টানা দুই টার্মের পর তিন বছরের একটি গ্যাপ থাকতে হবে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা একই পদে একাধিক তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে থাকতে পারবেন না। নির্বাহী পরিচালকরা (এমডিও, ফাইন্যান্স ডিরেক্টর ইত্যাদি) চেয়ারম্যান হতে পারবেন না। নন-এক্সিকিউটিভদের থেকে বোর্ডের চেয়ারম্যান হতে হবে।

চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নীতিমালা অনুযায়ী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তাদের কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ডিক্লারেশন দিতে হবে। বোর্ড মিটিং সংক্রান্ত রিলেভেন্ট সেক্রেটারিয়াল স্ট্যান্ডার্ড পরিপালন করতে হবে। বোর্ডের মেম্বারদের জন্য কোড অব কন্ডাক্ট থাকতে হবে, বোর্ডের স্বাধীনতা, কনফ্লিক্টেড অব ইন্টারেস্ট ইত্যাদি। এ ছাড়া সিইও, সিএফও, কোম্পানি সেক্রেটারিসহ সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের সদস্যদের বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সরানো যাবে না।

কোম্পানিকে তার নিজস্ব ওয়েবসাইট মেইনটেন করতে হবে। একই সঙ্গে করপোরেট গভর্ন্যান্সের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো ওয়েবসাইটে উল্লেখ থাকতে হবে। এ ছাড়া আরো একটি কমিটি করতে হবে, যেটির নাম হবে নমিনেশন অ্যান্ড নিউমারেশন কমিটি- যারা পদোন্নতি ও বেতনভাতা সংক্রান্ত বিষয়ের অনুমোদন দেবেন।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: