১৯ অক্টোবর ২০১৯ শনিবার, ০১:০২ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর ৪৫ মিনিটে অধিকাংশ শেয়ারের দরহ্রাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৩৮ পয়েন্ট হারায়। আগের দিনের মতো গত বৃহস্পতিবার বড় দরপতনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ক্রয়াদেশে বড় পতন থেকে রক্ষা পেয়েছে পুঁজিবাজার। মূলত ব্যাংক, বীমাসহ আর্থিক খাতের শেয়ারের দরবৃদ্ধি সূচকের বড় পতন ঠেকাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। দিনশেষে সূচকটি আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ করেছে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরু হয়েছিল পতন দিয়ে। গতকাল ব্যাংক, বীমা ও মিউচুয়াল ফান্ড ছাড়া বাকি সব খাতের বেশিরভাগ বাজার মূলধন হারিয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দরহ্রাস সূচকে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে ডিএসইএক্স সূচকের অবস্থান ছিল ৪৭৭৮ পয়েন্টে। পরের ২৭ মিনিটে সূচকটি ৩৪ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৭৪৪ পয়েন্টে নামে। বেলা পৌনে ১২টায় সূচকটি ৩৮ পয়েন্টের বেশি কমে যায়। তবে ব্যাংক ও অন্যান্য বহুজাতিক কোম্পানিসহ বড় মূলধনী কিছু শেয়ারের দর বাড়ায় বেলা ১২টা থেকে হারানো মূল্যসূচক পুনরুদ্ধার হতে দেখা যায়।
যদিও শেষ পর্যন্ত আর্থিক খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দরবৃদ্ধি বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও তা সার্বিকভাবে সূচককে ঊর্ধ্বমুখী করতে পারেনি। বরং ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৭৭১ পয়েন্টে নেমেছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির ব্রোকারেজ হাউজ নিট শেয়ার ক্রয়ে শীর্ষে ছিল। বিক্রির তুলনায় গত বৃহস্পতিবার ১০ কোটি টাকারও বেশি শেয়ার কেনা হয়েছে এর ব্রোকারেজ হাউজ থেকে। তবে এদিনও বিদেশিদের বিক্রির চাপ ছিল বেশি। এ কারণে লেনদেনের শেষ পর্যায়ে সূচকের পতন ঠেকাতে পারলেও বিক্রিচাপ বেশি থাকায় তা ঊর্ধ্বমুখী করতে পারেনি।
দিনের লেনদেন শেষে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ডিএসইতে ৩৫০ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৫টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৬২টির এবং অপরিবর্তিত থেকেছে ৪৩টির। লেনদেন হওয়া সব শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৩১৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
চট্টগ্রামকেন্দ্রিক দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ২৫৫ কোম্পানির শেয়ার। এর মধ্যে ৯৩ কোম্পানির শেয়ার ও ফান্ডের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৩৪টির দর কমেছে, শেষ পর্যন্ত অপরিবর্তিত থেকেছে ২৮টির। বেশিরভাগ শেয়ার দর হারানোয় এ বাজারের প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ২৮ পয়েন্ট হারিয়ে ৮৮১৬ পয়েন্টে নেমেছে। কেনাবেচা হওয়া শেয়ারের মোট মূল্য ছিল ১৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমা খাতের লেনদেন হওয়া ৯৯ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৬৫টির বাজার দর বেড়েছে, কমেছে ২০টির। এছাড়া ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৬টির দর বেড়েছে, কমেছে মাত্র একটির।
তিন আর্থিক খাতের ঠিক উল্টো চিত্র ছিল উৎপাদন ও সেবামুখী ১৫ খাতের শেয়ারের। খাতগুলোর ২১৩ কোম্পানির মধ্যে ৫৪টির দর বেড়েছে, বিপরীতে কমেছে ১৪১টির এবং অপরিবর্তিত ১৮টির।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ১৯ কোম্পানির মধ্যে মাত্র তিনটির বাজার দর বেড়েছে, দর হারিয়েছে ১২টি। প্রকৌশল খাতের ৩৮ কোম্পানির মধ্যে ১২টির দর বেড়েছে, কমেছে ২৫টির। ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩২ কোম্পানির মধ্যে ১১টির দর বেড়েছে, কমেছে ২০টির। বস্ত্র খাতের ৫৫ কোম্পানির মধ্যে আটটির দর বেড়েছে, কমেছে ৩৮টির। তথ্য ও প্রযুক্তি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং পাট খাত ছাড়া বাকি সব খাতে একই চিত্র দেখা গেছে।
সার্বিক দরপতনের মধ্যেও গত বৃহস্পতিবার কিছু কোম্পানির শেয়ারদর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এমনকি সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরেও কেনাবেচা হয়েছে অন্তত ছয় কোম্পানির শেয়ার।
এগুলো হলো- গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, রেকিট বেনকিজার, গোল্ডেন সন, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এবং ফার্স্ট ফাইন্যান্স। সিএডিএম বিডিবিএল এবং সিএপিএম আইবিবিএল নামের দুই মিউচুয়াল ফান্ডও সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয়।
বিপরীতে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, মুন্নু স্টাফলার্স, আলহাজ টেক্সটাইল, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস, এমএল ডাইং, আরএন স্পিনিং, এসএস স্টিল, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক কোম্পানির শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে কেনাবেচা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল ন্যাশনাল টিউবস। কোম্পানিটির সর্বাধিক ১৮ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এছাড়া মুন্নু স্টাফলার্সের ১০ কোটি ৪৬ লাখ টাকার, স্কয়ার ফার্মার ১০ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ন্যাশনাল টিউবসের শেয়ারদর সামান্য বাড়লেও বাকি দুটির দর কমেছে।
এদিকে বিক্রেতাশূন্য দশা থেকে ক্রেতাশূন্য অবস্থা শুরু হয়েছে তালিকাভুক্ত স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক কোম্পানির ক্ষেত্রে। যত দ্রæত এ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছিল, তার থেকে দ্বিগুণ গতিতে এর দরপতন হচ্ছে। সর্বশেষ পাঁচ কার্যদিবসে ২৯ শতাংশ দর হারিয়ে ৭৪০ থেকে ৫২৫ টাকায় নেমেছে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।