facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

কারসাজি : তিনগুণ দাম বাড়িয়ে ছটকে পড়ল ইনটেক


২০ নভেম্বর ২০১৯ বুধবার, ০১:৩২  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


কারসাজি : তিনগুণ দাম বাড়িয়ে ছটকে পড়ল ইনটেক

 

বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি ও নিজেদের জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনসহ বিভিন্ন মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের মাধ্যমে শেয়ারদর প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইনটেক লিমিটেডের বিরুদ্ধে। এর বাইরে ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের অর্ধবার্ষিক পর্যন্ত সময়ে কোম্পানির আয় অতিরঞ্জিত করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যদিও শেষ পর্যন্ত অনিরীক্ষিত প্রতিবেদনে দেখানো মুনাফা ধরে রাখতে পারেনি ইনটেক। এর ফলে শেয়ারদর কমে গিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা।

প্রান্তিক প্রতিবেদনে আয় বাড়িয়ে দেখানো ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির ঘোষণায় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর ইনটেক লিমিটেডের শেয়ারদর ৩০৫ শতাংশ বেড়ে ৬৯ টাকা ৪০ পয়সায় উন্নীত হয়। শেয়ারদর ধরে রাখতে ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে কোম্পানির ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা দেখানো হয়। তবে অর্ধবার্ষিকের অতিরঞ্জিত মুনাফা ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে চতুর্থ প্রান্তিকে উধাও হয়ে যায়। বছর শেষে মুনাফা নেমে আসে সর্বনিম্নে। ফলে শেয়ারদর নেমে যায় ১৩ টাকায়। এক বছরে ৮০ শতাংশ লোকসানের মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিজেদের ফিশারিজ প্রকল্পের মাছ বিক্রিই হচ্ছে ইনটেকের আয়ের প্রধান উৎস। মাছ বিক্রি ও ফিশারিজ প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে-কমিয়ে দেখিয়ে কোম্পানিটি প্রান্তিক প্রতিবেদনে কারসাজি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে ইনটেক লিমিটেড আয় দেখায় ৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০১ শতাংশ বেশি। আয়ের মধ্যে ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আসে মাছ বিক্রি থেকে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আগের বছরের তুলনায় মাছ বিক্রি থেকে আয় বেশি হলেও খরচ দেখানো হয়েছে অনেক কম। ২০১৭-১৮ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে মাছ বিক্রি থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে খরচ দেখানো হয় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। অথচ ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে মাছ বিক্রি থেকে আয়ের ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বিপরীতে খরচ দেখানো হয় মাত্র ৭০ লাখ টাকা। মাছ বিক্রি থেকে আয় বাড়িয়ে দেখানোয় ওই হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানি নিট মুনাফা দেখায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে লোকসানে ছিল।

একইভাবে ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের অর্ধবার্ষিকে মাছ বিক্রি থেকে আয় দেখানো হয় ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২১ শতাংশ বেশি। এ সময় ফিশারিজ ইউনিটের খরচ দেখানো হয় ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে মাছ বিক্রি থেকে আয় কম থাকলেও খরচ দেখানো হয় ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি ইন্টারনেট ও ডাটা সার্ভিস, সফটওয়্যারের আয়ও আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি দেখিয়েছে। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের অর্ধবার্ষিকীতে ইনটেকের নিট মুনাফা হয় ৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র আড়াই লাখ টাকা।

তবে ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের অর্ধবার্ষিকে বড় ধরনের মুনাফা দেখালেও চতুর্থ প্রান্তিকে এসে কোম্পানির মুনাফা আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ইনটেকের নিট মুনাফা ছিল ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা, যা হিসাব বছর শেষে ১ কোটি ২২ লাখ টাকায় নেমে আসে। চতুর্থ প্রান্তিকে কোম্পানিটি ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা লোকসান করে, যার কোনো ব্যাখ্যা কোম্পানিটি জানায়নি।

চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকেও ইনটেকের আয় কমে গেছে। এ সময় আয় হয়েছে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ শতাংশ কম। এদিকে আয় কমলেও আগের বছরের তুলনায় খরচ বেড়ে গেছে ৭৬ শতাংশ। এ সময় মাছ বিক্রি থেকে আয় কমলেও খরচ বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। ফলে চলতি প্রথম প্রান্তিক শেষে নিট মুনাফা দাঁড়ায় মাত্র ২৯ লাখ টাকায়, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এছাড়া কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্যোগের কথাও জানানো হয়। সে সময় জানানো হয়, শ্রীলঙ্কার একটি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ময়মনসিংহে ১০০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হবে। অথচ এক বছর পার হলেও আর কোনো তৎপরতা চালায়নি কোম্পানিটি। শেয়ারদর বাড়াতে এমন ঘোষণা বড় ভূমিকা রাখে বলে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ।

এ বিষয়ে ইনটেক লিমিটেডের চেয়ারম্যান এ টি এম মাহবুবুল আলম বলেন, শেয়ারদরে প্রভাবিত করতে আমাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। আমরা কোম্পানির সম্প্রসারণে কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম, যা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারিনি। নতুন বিনিয়োগের জন্য প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে তহবিল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তাতে শেয়ারহোল্ডাররা সম্মতি দিলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনুমোদন দেয়নি। ফলে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে আমরা সরে এসেছি। আর চলতি বছরের শুরু থেকেই মাছ উৎপাদনে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের রোগবালাইয়ের কারণে ব্যয় বেড়ে গেছে। একই কারণে আয়ও কমেছে।’

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: