facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

কারখানা বন্ধের প্রভাবে লোকসানে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস


১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার, ০২:০৮  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


কারখানা বন্ধের প্রভাবে লোকসানে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস

পুরনো চুল্লি সংস্কারের জন্য এ বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাস কারখানার বড় একটি অংশের উৎপাদন বন্ধ ছিল স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের। ফলে উৎপাদন বন্ধ থাকার প্রভাবে চলতি ২০১৯-২০ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির বিক্রিতে ধস নেমেছে। বিক্রি কমার কারণে আলোচ্য সময়ে লোকসান গুনতে হয়েছে কোম্পানিটির, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা হয়েছিল।

স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে, যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ৮ কোটি টাকা। ফলে এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৬৯ লাখ টাকা গ্রস লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে গ্রস মুনাফা ছিল ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

২০১৯-২০ হিসাব বছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় ২ কোটি টাকা পরিচালন লোকসান হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের, যেখানে আগের হিসাব বছরে ২৯ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা হয়েছিল। কর পরিশোধের পর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ২ কোটি টাকা নিট লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ২৩ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছিল। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ১০ পয়সা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ৩৭ পয়সা আয় হয়েছিল। ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) হয়েছে ১৩ টাকা ২৭ পয়সা।

কোম্পানিটির কর্মকর্তারা বলছেন, পুরনো চুল্লি সংস্কারের কারণে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেড় মাসের মতো কারখানার বড় অংশের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ফলে এ সময়ে কোম্পানির বিক্রি অনেক কমে যায়, যার প্রভাবে লোকসান গুনতে হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে এ বছরের ১৪ আগস্ট থেকে চুল্লি বা ওল্ড গ্লস কিন সংস্কারের জন্য দুই মাসের জন্য কারখানার বড় অংশের উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস। চুল্লির জন্য জাপান থেকে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ব্র্যান্ডের মেশিন কেনে কোম্পানিটি। সংস্কার শেষে ১৪ অক্টোবর থেকে পুরোদমে কারখানা চালুর ঘোষণা দেয় কোম্পানিটি।

সক্ষমতা বাড়াতে কয়েক বছর ধরেই কারখানায় নতুন যন্ত্রপাতি আনছে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস। এর মধ্যে উৎপাদন বাড়াতে চলতি বছরের মে মাসে কোম্পানিটির পর্ষদ ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে রোলার ফর্মিং মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটি উৎপাদন কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ব্র্যান্ডের জিগারিং মেশিন আমদানি করে। ২০১৭ সালে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল কিন, ১০ লাখ টাকায় গ্রিন্ডারিং মেশিন ও ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে রোলার হেড মেশিন আমদানি করার নিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ২০১৮ সালে এ যন্ত্রপাতিগুলো কারখানায় স্থাপন করা হয়েছে।

সর্বশেষ সমাপ্ত ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের পর্ষদ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫৬ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ১ টাকা ৪৫ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ৩৭ পয়সায়।

এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য কোম্পানিটি উদ্যোক্তা ও পরিচালক বাদে অন্য শেয়ারহোল্ডারদের ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। সে বছর কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫৮ পয়সা। তবে ২০১৭ হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি ৩৯ পয়সা লোকসানের কারণে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস। ২০১৬ হিসাব বছরে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা।

সর্বশেষ ঋণমান অনুসারে, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের ঋণমান দীর্ঘমেয়াদে ‘ট্রিপল বি’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘এসটি-থ্রি’। ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ প্রত্যয়ন করেছে ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিংস লিমিটেড (এনসিআর)।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের শেয়ার সর্বশেষ ৬৩৫ টাকায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে শেয়ারটির দর সর্বনিম্ন ১৩২ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫৯ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে। অবশ্য এ বছরের আগস্টে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ১৮ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৩১৫ টাকা ৫০ পয়সা, যা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বেড়ে ৭৪০ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়ায়। অথচ এ সময়ে কোম্পানিটির কারখানার বড় একটি অংশের উৎপাদন বন্ধ ছিল।

১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৬ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৬ দশমিক ৪৯ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৬৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: