facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ মার্চ মঙ্গলবার, ২০২৪

Walton

করোনাকালে একজন ডাক্তারের তিক্ত অভিজ্ঞতা


২৮ এপ্রিল ২০২০ মঙ্গলবার, ০৯:৫৪  পিএম

ডা: গৌরব কুমার


করোনাকালে একজন ডাক্তারের তিক্ত অভিজ্ঞতা

ডা: গৌরব কুমার সাহা বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ত্রাস ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশেও এই ভাইরাসটি মরণকামর দিয়ে বসেছে। তিনি তার কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। যা হুবহু তুলে ধরা হল-

আজ (মঙ্গলবার ২৮ এপ্রিল) সকালে আমি, আমার UH&FPO স্যার এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট গিয়েছিলাম করোনা সাসপেক্টেড রোগীর স্যাম্পল সংগ্রহ করতে। উল্লেখ্য দুইজনের স্যাম্পল সংগ্রহ করেছি তাদের দুইজনই ঢাকা ফেরত।

প্রথম ঘটনা: প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে, কিছুক্ষণ কর্দমাক্ত রাস্তায় হেঁটে পৌঁছালাম তার বাড়ি। তার আগেই শুনতে পাচ্ছিলাম সে স্যাম্পল দিতে রাজি না। যাইহোক তার বাসায় গিয়ে তাকে ডেকে বের করার পর থেকে বেশ খানিকখন আমাদের সামনেই মোবাইলে কথা বলতে থাকলো, আমরা দাঁড়িয়ে থাকলেও সে মোবাইলে কথা থামাচ্ছিলো না যেটা অত্যান্ত বেয়াদবি মনে হয়েছে। এরপর ফোন রেখে সে মোটামুটি একটা গরম দেখানো শুরু করলো। আপনারা কারা? কোত্থেকে এসেছেন? আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে চাকরি করি, আপনারা এতদিন পর কেন আসলেন? আরো আগে আসলেন না কেন? ইত্যাদি।

আমি চুপ ছিলাম, আমার স্যার অত্যান্ত ভালো মানুষ, সে দুই একটা কথায় মাথা ঠাণ্ডা রেখে উত্তর দিচ্ছিলেন। এর মধ্যে রোগীর বাবা আসলেন। সে তো আরো গরম। এমন ভাবে কথা বলছিলো যেন আমরা কোন বড় ধরনের পাপ করে ফেলছি। আমাদের তারা গেইটের বাইরেই রাস্তায়ই দাঁড় করিয়ে রেখেছে, যাইহোক এটা না হয় ইগনোরই করলাম সে এবং তার বাবা অত্যান্ত অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে অবশেষে তার স্যাম্পল কালেক্ট করে স্যার তার সকল নাম ঠিকানা পরিচয় লিখে দিলেন এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন। তারা জিজ্ঞেস করলো যে রিপোর্ট কবে পাওয়া যাবে, স্যার সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন কিন্তু তাদের কথায় মনে হলো এসব স্যাম্পলের কোন পরীক্ষা হয় না, শুধু শুধু আমরা নিয়ে নাটক করছি, সরকারকে দেখাচ্ছি এবং এসব কথা তারা খুবই বাজেভাবে চিৎকার করে করে বলছিলো।

রোগী আবার বললো, আমি পুলিশ, আমি স্কয়ার হাসপাতালে, পুলিশ হাসপাতালে চেকআপ করেই এসেছি, এমনকি আমি ব্যাক্তিগত যানবাহনে করে এসেছি, আমি কি জানি না আমার হয়েছে নাকি হয়নি ইত্যাদি।

দ্বিতীয় ঘটনা:
প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে (কাঁচা এবং ভাঙা রাস্তা বলে গাড়ি যায় না) যখন রোগীর বাড়ি পৌঁছালাম, রোগীর পিতা দরজায় দাঁড়িয়ে। যথারীতি একই কায়দায় প্রশ্ন, তবে এইবার তিনি তার পরিচয় দিলেন যে তিনি এডভোকেট এবং আমাদের রীতিমতো তিনি মক্কেল হিসেবে জেরা করা শুরু করলেন, উল্লেখ্য আমরা সেখানে উক্ত এলাকার CHCP (স্বাস্থ্যকর্মী) কে নিয়ে গিয়েছিলাম যে তাদের পরিচিত ছিল এবং গিয়েই আমাদের পরিচয় দেয়া হয়েছিল, তবুও তিনি আমাদের স্যারের মোবাইল নং নিয়ে তাকে ফোন করে তার বাড়ি কই, কবে ম্যাট্রিক পাশ করেছেন এ ধরনের প্রশ্ন করছিলেন। এরপর সে যথারীতি বলা শুরু করলো আমার ওমুক ডাক্তার, তমুক প্রফেসর ইত্যাদি ইত্যাদি বলে সে মোটামুটি নিজেকে আমি কি হনুরে প্রমাণ করতে ব্যস্ত। এরপর স্যাম্পল নেয়া শেষ হলে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট তার পিপিই এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি যথাযথ নিয়মে প্যাকেট করে বললো এটা অনুগ্রহ করে মাটিচাপা দেয়ার ব্যাবস্থা করে দিতে। কিন্তু না, সে নারাজ, তার কথা হলো এই জিনিস আমি আমার বাড়িতে রাখবো না, অথচ তার করোনা সাসপেক্টেড ছেলের সাথে সে পাশাপাশি বসে আছে। সে বললো আপনারা এই প্যাকেট নিয়ে যান। আমরা বুঝানোর চেষ্টা করলাম যে এটা নিয়ে এত পথ যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ তবুও সে তার কথায় অটল। পরে যেকোন ভাবে একটু দূরে গিয়ে সেই প্যাকেট পুড়িয়ে দিয়ে আসতে হয়েছে।

সর্বোচ্চ অসহযোগিতার মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের। এখন বলেন কোন দেশে আছি আমরা? আমরা সরকারকে দোষ দেই, আমরা ডাক্তারদের গালি দেই, সিস্টেমকে ফাক করি।
বেঁচে থাকুক এই জাতি...

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: