০৯ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার, ০৭:১৬ পিএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় থাকা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজারে শেয়ার ইস্যুকারী এই কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠায় ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত পর্ষদ বৈঠকে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন অসঙ্গতি চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্টক এক্সচঞ্জেরে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ৭ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
এর আগে শেয়ারবিজনেস২৪ডট কমে কোম্পানিটির আর্থিক অনিয়ম নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যা ডিএসই-ডিবিএ ও বিএসইসির নজরে আসে।
সূত্র জানায়, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরিচালনা পরিষদ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। এর আগে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্ত করা হবে না।
জানা গেছে, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) সম্প্রতি ডিএসইর কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদনের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে। তারা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদনের উপর বিশেষ নিরীক্ষা চালানো এবং ওই নিরীক্ষার আগে এটিকে তালিকাভুক্ত না করার অনুরোধ জানায়।
ডিবিএসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ,একটি অতি দূর্বল মৌলের কোম্পানি কপারটেক কারসাজিপূর্ণ আর্থিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে ভালো আর্থিক অবস্থা দেখিয়ে আইপিওতে এসেছে। এর আগে কোম্পানিটি প্লেসমেন্টের মাধ্যমেও বড় অংকের টাকা সংগ্রহ করেছে। কোম্পানিটির প্রকৃত অবস্থা যা তাতে তালিকাভুক্তির কয়েক বছরের মধ্যেই এটি রুগ্ন কোম্পানির তালিকায় নাম লেখাবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা। এতে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ বাস্তবতায় ডিএসই কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষভাবে পর্যালোচনা করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
তামার তার,বার,পাইপ ও তামাজাত বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি কপারেটেক ইন্ডাস্ট্রিজ আইপিওর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। আইপিও’র প্রসপেক্টাসে দেওয়া তথ্য অনুসারে,আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থের একটা অংশ কোম্পানিটি ভবন ও অন্যান্য পূর্তকাজের পাশাপাশি প্লান্টের যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থাপনের কাজে ব্যয় করবে। একটি অংশ ব্যয় করবে ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহে।
২০১২ সালে মাত্র আড়াই কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ভেল্কী দেখিয়ে মাত্র ৫ বছরের মধ্যে মূলধন ৪০ কোটি টাকা বা ১৬ গুণে উন্নীত করে। আইপিওতে আসার আগের দুই বছরে। ২০১৭ সালে কোম্পানিটি ৩ দফায় মূলধন বাড়িয়েছে সাড়ে ৭ কোটি টাকা। তাতে পরিশোধিত মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ১০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে, যা সে সময়ে বিদ্যমান মূলধনের ২ গুণ। আইপিওকে সামনে রেখেই প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের জন্য এটি করা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ডিএসই ও ডিবিএ’র ভাষ্য অনুসারে, কপারটেকের আর্থিক বিবরণীতে এমন নানা তথ্য-পরিসংখ্যান রয়েছে,যা অবিশ্বাস্য ও পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। প্রসপেক্টাসের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে অসংখ্য অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। প্রসপেক্টাসে দেওয়া তথ্য অনুসারে,২০১৭-১৮ হিসাববছরে কপারটেকে ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালন ব্যয় (কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যয়) ছিল ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এ হিসেবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (MD)২১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির মাসিক বেতন দাঁড়ায় ৭ হাজার টাকা মাত্র। আর এমডিসহ শীর্ষ ৬ জন কর্মকর্তার বেতন বাদ দিলে বাকী কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাসিক গড় বেতন দাঁড়ায় মাত্র সাড়ে ৪ হাজার টাকা,যা বর্তমান সময়ে একেবারেই অবিশ্বাস্য।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন,হিসাব কারসাজি করতে গিয়ে কোম্পানিটি ভজঘট পাকিয়ে ফেলেছে। হয় মুনাফা বাড়িয়ে দেখানোর জন্য বেতন-ভাতা অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে দেখানো হয়েছে। অথবা এটিই বেতন-ভাতার প্রকৃত ব্যয়,কোম্পানির আকার বড় করে দেখিয়ে আইপিওকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে কর্মকর্তা-কর্মচারির সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। যেটিই করা হোক না কেন, তথ্যগুলো যে বানানো সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
কোম্পানিটির পণ্য বিক্রির তথ্যেও রয়েছে মারাত্মক অসঙ্গতি ও গোঁজামিল।আর্থিক বিবরণী অনুসারে, ২০১৮-১৯ হিসাববছরের শুরুতে আদায়যোগ্য নগদ অর্থ (Receivable) প্রায় ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ওই বছরে ৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে ৫০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা পাওয়া যায়। বাকি থাকে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অথচ আর্থিক প্রতিবেদনে আদায়যোগ্য পাওনা দেখানো হয় মাত্র ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
ডিএসইর আজকের বৈঠকে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হলে পরিচালনা পর্ষদ বিষয়গুলো আরও খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দিতে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।