facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

এসআইবিএল-এর মানিকানা ছেড়ে দিচ্ছে ইউনাইটেড গ্রুপ


১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সোমবার, ০২:৩০  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


এসআইবিএল-এর মানিকানা ছেড়ে দিচ্ছে ইউনাইটেড গ্রুপ

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) পর্ষদে নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছিল ইউনাইটেড গ্রুপ। সে অনুযায়ী পুঁজিবাজার থেকে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ শেয়ারও কিনেছিল তারা। কিন্তু নানামুখী জটিলতায় ব্যাংকটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপ। তারা এখন শেয়ার ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি এসআইবিএলের নিয়ন্ত্রণ নিতে আগ্রহী হয় এস আলমসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি ভালোভাবে দেখেনি ইউনাইটেড গ্রুপ। পাশাপাশি আইনি জটিলতার কারণেও তারা ব্যাংকটির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এদিকে এসআইবিএলের মালিকানায় পরিবর্তন ইস্যুতে গত এক মাসে ব্যাংকের শেয়ারের দর বাড়ে সাত টাকা। গত ১৪ আগস্ট শেয়ারটির দর ছিল ২৫ টাকা ৩০ পয়সা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর দর বেড়ে হয় ৩২ টাকা ৪০ পয়সা।

জানা গেছে, গত মে মাসে ইউনাইটেড গ্রুপের হাতে এসআইবিএলের ১৭ শতাংশ শেয়ার ছিল। এরপরের তিন মাসে গ্রুপটি এসআইবিএলের মোট ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। বিয়য়টি তখন পুঁজিবাজারে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এদিকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার হাতে থাকার পরও ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে ইউনাইটেড গ্রুপের কেউ নির্বাচিত হতে পারেননি।

শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল রোববার ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক হওয়ার কারণে শেয়ার ক্রয় করেছিলাম। পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হয়ে ব্যাংকটিকে আরও সমৃদ্ধ করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের একটি গ্রুপ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে হাতে থাকা শেয়ার এখন বিক্রি করছি।’

এ সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের একজন পরিচালক জানান, এসআইবিএলের পর্ষদে স্থান পেতে অনেকেই আগ্রহী। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম তিন শতাংশ ও কেডিএস গ্রুপ পাঁচ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করেছে। তবে বিদ্যমান পর্ষদ সদস্যদের পদ শূন্য না থাকার কারণে তাদের পক্ষে এখনই পর্ষদে স্থান পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও এসআইবিএলের পর্ষদের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। তাই চাইলেই তাদের পক্ষে পর্ষদে জায়গা করে নেওয়া সম্ভব হবে না।

এদিকে জানা গেছে, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আসতে আগ্রহী এস আলম গ্রুপ। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের কিছু প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে এসআইবিএলের তিন শতাংশ শেয়ার ক্রয় করেছে বলে জানিয়েছে কোম্পানি, যা সম্প্র্রতি ডিএসইর কাছে পাঠানো ব্যাংকটির শেয়ার ধারণ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সম্প্রতি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এসআইবিএলের উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির কোনো ঘোষণা ছিল না। তবু ব্লক মার্কেটে কোম্পানিটির লেনদেন বাড়ছে। ইউনাইটেড গ্রুপের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করার কারণেই ব্লক মার্কেটে এসআইবিএলের বেশি লেনদেন হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে গত কয়েক সপ্তাহে ব্যাংকটির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। এর নেপথ্যে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে ইউনাইটেডসহ তিনটি শিল্পগ্রুপ যুক্ত হওয়ার গুঞ্জন ছিল বাজারজুড়ে। যদিও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানিয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় এসআইবিএলের কোম্পানি সচিব হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যাংকের কোনো উদ্যোক্তা পরিচালক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ঘোষণাও দেননি এবং ক্রয়-বিক্রয় করেননি। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এটা করতে পারে। অন্যদিকে শেয়ারদর বাড়ার পেছনে কোনো কারণ নেই। কোম্পানির ভালো পারফরম্যান্স থাকায় বরাবরই শেয়ার চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর ভালো লভ্যাংশ দেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, ইউনাইটেড গ্রুপের বিভিন্ন সহযোগী কোম্পানি ও পরিচালকরা মিলে এসআইবিএলের ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গ্রুপটির হাতে ব্যাংকটির শেয়ার ছিল ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। গ্রুপটির হাতে থাকা সাড়ে ১৭ শতাংশ শেয়ার থাকা নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। শেষ পর্যন্ত আদালতেও যায় বিষয়টি। আদালত বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য রুল জারি করেন। একই সঙ্গে বিষয়টির সমাধান হওয়ার আগ পর্যন্ত শেয়ার ধারণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ভোটাধিকার বা অন্য যেকোনো অধিকার না দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এরপরেই বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করে ব্যাংকটির একজন শেয়ারহোল্ডার। এরপরও শিল্পগ্রুপটি ধীরে ধীরে ব্যাংকটির শেয়ার ধারণ করতে থাকে। চলতি বছরের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত তা ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশে পৌঁছায়, যা ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মো. এবাদত হোসেন ভূঁইয়া শেয়ার বিজের নিকট স্বীকার করেছেন।

জানা গেছে, গ্রুপের কাছে থাকা এসআইবিএলের মোট শেয়ারের মধ্যে সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নেপচুন কমার্শিয়ালের নামে তিন শতাংশ, হাসান মাহমুদ রাজার নামে দুই দশমিক ৯৬ শতাংশ, আহমেদ ইসমাইল হোসাইনের নামে দুই দশমিক ১৮ শতাংশ, নভো রিয়েল এস্টেটের নামে ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, মাইনুদ্দিন হাসান রশীদের নামে দুই দশমিক ৮৬ শতাংশ, ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের নামে এক দশমিক ২৬ শতাংশ, ফরিদুর রহমান খানের নামে দশমিক ৬৫ শতাংশ, মালিক তালহা ইসমাইল বারির নামে দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, আবুল কালাম আজাদের নামে দশমিক ১২ শতাংশ এবং ইবাদত হোসাইন ভূঁইয়ার নামে শূন্য দুই শতাংশ শেয়ার। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গ্রুপটির হাতে এ শেয়ার ছিল।

এরপরে আগস্ট শেষে গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজার নামে পাঁচ শতাংশ, মাইনুদ্দিন হাসান রশীদের নামে পাঁচ শতাংশ, নাসির উদ্দিন আক্তার রশীদের নামে তিন দশমিক ৪৩ শতাংশ, আহমেদ ইমাইল হোসাইনের নামে দুই দশমিক ১৮ শতাংশ, মালিক তালহা ইসমাইল বারির নামে দশমিক দুই দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, ফরিদুর রহমান খানের নামে পাঁচ শতাংশ, ফাহাদ খানের নামে দুই শতাংশ, আবুল কালাম আজাদের নামে দুই শতাংশ, ওয়াসিকুল আজাদের নামে দুই শতাংশ, খন্দকার মঈনুল আহসান শামীমের নামে দুই শতাংশ ছিল।

জানা গেছে, ফরিদুর রহমান খান ইউনাইটেড গ্রুপের সহযোগী মেসার্স নেপচুন কমার্শিয়াল, নভো রিয়েল এস্টেট ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক। তিনি ফাহাদ খানের বাবা। মাইনুদ্দিন হাসান রশীদ হাসান মাহমুদ রাজার ছেলে। তিনি শাহজী এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়া মেসার্স নেপচুন কমার্শিয়াল, নভো রিয়েল এস্টেটে ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডেরও পরিচালক তিনি।

আহমেদ ইমাইল হোসাইন নেপচুন কমার্শিয়ালের শেয়ার হোল্ডার। আর তার ছেলে মালিক তালহা ইসমাইল বারি। তিনি নভো রিয়েল এস্টেট, নেপচুন কমার্শিয়াল, শাহজী এন্টাপ্রাইজের পরিচালক। খন্দকার মঈনুল আহসান শামীম নেপচুন কমার্শিয়াল, নভো রিয়েল এস্টেটে ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক। নাসির উদ্দিন আক্তার রশীদও নেপচুন কমার্শিয়াল, নভো রিয়েল এস্টেটে ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক। আবুল কালাম আজাদ নেপচুন কমার্শিয়াল, নভো রিয়েল এস্টেট ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: