facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

এবার পুরো বন্ধের শঙ্কায় ইউনাইটেড এয়ার


১৪ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার, ১২:৪৩  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


এবার পুরো বন্ধের শঙ্কায় ইউনাইটেড এয়ার

উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারায় ২০১৬ সাল থেকেই সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বাংলাদেশ লিমিটেডের। এরপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মামলা-পাল্টা মামলায় এবার স্থায়ীভাবে বন্ধের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বেবিচকের সঙ্গে বিবাদের কারণে নির্ধারিত সময়ে উড়োজাহাজের ‘সি’ চেক (ভারী রক্ষণাবেক্ষণ) করার অনুমতি ও ফিটনেস সার্টিফিকেট পাচ্ছে না ইউনাইটেড এয়ার। এ ছাড়া পরিদর্শনের নামে হয়রানি, তদন্তের দীর্ঘসূত্রতা ও উড্ডয়ন উপযোগী উড়োজাহাজকে ফ্লাইট শিডিউল বাতিলে বাধ্য করছে বলে ইউনাইটেড এয়ার অভিযোগ জানিয়েছে। এসব কারণে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ১০টি উড়োজাহাজের সবগুলোই গ্রাউন্ডেড হয়ে আছে। বন্ধ হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম। উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারায় ২০১৬ সালের ৫ মার্চ থেকে ইউনাইটেড এয়ারের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এমনকি নতুন করে সাতটি উড়োজাহাজ সংগ্রহের সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলেও বেবিচকের অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় সেটিও ভেস্তে গেছে। এর ফলে ইউনাইটেড এয়ারের বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ারের মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহের পর স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় জিএমজি এয়ারলাইনস। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির আগেই জিএমজি এয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্লেসমেন্টধারীরা বড় অঙ্কের ক্ষতির সম্মুখীন হন।

বেবিচকের বৈরী আচরণের কারণে বিপুল পরিমাণের আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হওয়ায় ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর বেবিচক ও এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এক হাজার ২০৮ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উড়োজাহাজ ক্রয়, মেরামত, লাইসেন্সের নবায়নসহ ইউনাইটেড এয়ারের কোনো কাজই করছে না বেবিচক কর্তৃপক্ষ। মামলা প্রত্যাহার না হলে প্রতিষ্ঠানটির এসব প্রক্রিয়ায় কোনো সম্মতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বেবিচক কর্তৃপক্ষ।

নানাবিধ চার্জ বাবদ ইউনাইটেড এয়ারের কাছে প্রায় ৭৭ কোটি টাকা পাবে বেবিচক। এ টাকা কিস্তিতে পরিশোধে চেক দেয় ইউনাইটেড এয়ার। কিন্তু অর্থ না পাওয়ায় বেবিচক ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও এর পরিচালকদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ১৬ লাখ টাকার চেক প্রতারণার মামলা করে।

এই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয় ইউনাইটেড এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এখন এই মামলা-পাল্টা মামলায় কোম্পানিটি অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়েছে।  

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালক (প্রকৌশল) অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার এম সাহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেবিচকের সঙ্গে একটি সমঝোতার চেষ্টা চলছে। উভয় পক্ষ মামলা প্রত্যাহারের শর্ত দিয়েছে। মামলা প্রত্যাহার হলেই আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী কার্যক্রমে আমরা যাব। আশা করছি, তা না হলে ইউনাইটেড এয়ারের কার্যক্রম বন্ধই থাকছে।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে দেশি-বিদেশি মোট ৩৬টি রুটে ইউনাইটেডের ফ্লাইট কার্যক্রম চালু ছিল। বেবিচকের সঙ্গে বিবাদের কারণে ২০১৪ সাল থেকেই ইউনাইটেড এয়ারের উড়োজাহাজগুলো গ্রাউন্ডেড হতে থাকে। ২০১৫ সালের শেষ দিকে সচল উড়োজাহাজের অভাবে প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করতে বাধ্য হয় কোম্পানিটি। এতে প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ে। আর ২০১৬ সালের ৫ মার্চ থেকে ইউনাইটেড এয়ারের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোম্পানির অধিকাংশ কর্মী প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে চলে যান। আয় না থাকায় যেসব কর্মী প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ছিলেন চলতি বছরের শুরুতে তাদেরও বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘদিন ইউনাইটেড এয়ার বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যেও শেয়ার বিক্রি হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৩ টাকায়।

এদিকে ইউনাইটেড এয়ার নতুন উড়োজাহাজ সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালালেও বেবিচক অনাপত্তিপত্র না দেওয়ায় সে প্রক্রিয়াও থমকে গেছে। ২০১৬ সালের ১ জুন নতুন করে সাতটি উড়োজাহাজ সংগ্রহের জন্য শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রতিষ্ঠানটিকে ৪০১ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমতি দেয়। এ জন্য সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াভিত্তিক তিন কোম্পানির বিমান সরবরাহের বিপরীতে অভিহিত মূল্যে ১০ টাকা দরে মোট ৪০ কোটি শেয়ার নেওয়ার কথা ছিল। তবে বিএসইসির অনুমোদনপ্রাপ্তির দুই বছর পার হলেও বেবিচকের অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় নতুন করে উড়োজাহাজ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছে ইউনাইটেড এয়ার।

কোম্পানিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগের অনুমোদন সংশোধন করে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে শেয়ার ইস্যুর শর্ত দেয়।

এ সময়সীমার মধ্যেই উড়োজাহাজ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয় ইউনাইটেড এয়ার। পরে আরও তিন মাস সময় দিলেও বেবিচকের অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় ভেস্তে যাচ্ছে উড়োজাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া। এ ছাড়া বিএসইসি গত বছরের ১৬ জুন বন্ড ইস্যু করে কোম্পানিটিকে আরও ২২৪ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমতি দেয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি পিছিয়ে আসায় বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে কোনো অর্থই সংগ্রহ করতে পারেনি ইউনাইটেড এয়ার।

বেবিচকের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের কারণে ইউনাইটেড এয়ার নতুন করে যেমন উড়োজাহাজ সংগ্রহ করতে পারছে না, তেমনি গ্রাউন্ডেড হয়ে থাকা ১০টি উড়োজাহাজের ‘সি চেক’ করানো সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ বিদেশে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: