১৭ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার, ১১:০২ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে গতকাল লেনদেন হওয়া ৩০৬ কোম্পানির মধ্যে লেনদেনের পুরো সময়ে মাত্র ১২ কোম্পানির শেয়ার রোববারের তুলনায় দর হারিয়ে কেনাবেচা হয়। বেশিরভাগ সময় ধরে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি পায়। এর ওপর ভর করে ডিএসইএক্স সূচকও ৩৭ পয়েন্ট বাড়ে। তবে দিনের লেনদেনের শেষ পর্যন্ত ১৩৯ কোম্পানির শেয়ার দর হারায়। এতে সূচক বাড়ে মাত্র ৩ পয়েন্ট।
এ ছাড়া লেনদেনের শুরুতে প্রায় সব খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়লেও শেষ পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, সিরামিক, তথ্য ও প্রযুক্তি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং টেলিযোগাযোগ খাতের শেয়ার। বিপরীতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বস্ত্র, সিমেন্ট এবং সেবা ও নির্মাণ খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন হয়েছে। অন্য সব খাতে ছিল মিশ্রাবস্থা।
বাজার-সংশ্নিষ্টরা জানান, গতকাল গ্রামীণফোনের অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে দিনের শুরুতে কোম্পানিটির শেয়ারদরে বড় উল্লম্ম্ফন হয়েছিল। শেয়ারপ্রতি প্রায় ১৯ টাকা দর বেড়ে ৪০২ টাকায় উঠেছিল। দিনের শুরুতে বাজার সূচক অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া শুরুতে ব্যাংক, আর্থিকসহ প্রায় সব খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দরবৃদ্ধিও সূচককে ঊর্ধ্বমুখী করে। এর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। কিন্তু গ্রামীণফোনের পাশাপাশি ব্যাংক ও অন্যান্য বৃহৎ মূলধনী কোম্পানির শেয়ারদর কমার কারণে সূচক কমে যায়। ফলে গত কয়েকদিনে যেসব কোম্পানির শেয়ারদর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছিল, তার অনেকগুলোর দর কমে যায়। কারণ কোম্পানিগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের একটা অংশ মুনাফা নিতে শেয়ার বিক্রি করেন এবং অপর একটি অংশ দর সংশোধনের ভীতি থেকে শেয়ার বিক্রি করেন। এতে শুরুর ঊর্ধ্বমুখী ধারা শেষ পর্যন্ত টেকেনি।
গতকাল দিনের লেনদেন শেষে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ডিএসইতে ১৩৯টির দর কমার বিপরীতে ১৪৪ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দরবৃদ্ধি পায়। চট্টগ্রামকেন্দ্রিক দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতে ৯৫ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে, কমেছে ১৪০টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৬টির দর। অধিকাংশ শেয়ারের দর কমার পরও এ বাজারের প্রধান সূচক সিএসসিএক্স মাত্র ৮ পয়েন্ট হারিয়ে ৯৯৪৭ পয়েন্টে নেমেছে।
এদিকে লেনদেনে মিশ্রাবস্থার মধ্যে দুই শেয়ারবাজারের লেনদেনও কিছুটা কমেছে। গতকাল উভয় বাজারে মোট ৯১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা রোববারের তুলনায় ৮৬ কোটি টাকা বা সাড়ে ৮ শতাংশ কম। এর মধ্যে ডিএসইর লেনদেন পৌনে ৮২ কোটি টাকা কমে ৮৭৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকায় নেমেছে।
ডিএসইর লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল দিনের লেনদেনের শুরুতে অন্তত ১৪ কোম্পানির শেয়ার সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয়। এগুলো হলো- আইটি কনসালটেন্টস, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মুন্নু জুট স্টাফেলার্স, ন্যাশনাল ফিড মিল, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্টাইল ক্রাফট, এমবি ফার্মা, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, লিবরা ইনফিউশনস, পেনিনসুলা চিটাগং, রহিমা ফুড করপোরেশন, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ। এর মধ্যে প্রথম ছয়টি লেনদেনের শেষ পর্যন্ত ওই দরে স্থির থাকে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মাঝে কিছুটা বিরতি দিয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের আইটি কনসালট্যান্টস কোম্পানির শেয়ার বেশ তেজিভাবে দরবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে। গতকাল শেয়ারটির দর প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে ৪৫ টাকা ৮০ পয়সায় উঠেছে। গত এক মাসে শেয়ারটির দর ৩০ টাকা থেকে এ পর্যায়ে এসেছে। দরবৃদ্ধির হার প্রায় ৫৮ শতাংশ।
এদিকে পতনোন্মুখ পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর পৌনে ১০ শতাংশ বেড়েছে। গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে শেয়ারটির দরপতন হচ্ছে। এর মধ্যে মাঝেমধ্যে সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয় ও বিক্রেতা শূন্য থাকে। গতকালও সে পরিস্থিতি ছিল। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শেয়ারটি ৫৪ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছিল। রোববার শেয়ারটির দর ২৫ টাকায় নেমেছিল।
এদিকে গত দুই সপ্তাহ ধরে বাড়ছে ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ারদর। ১২ টাকা থেকে বেড়ে শেয়ারটির দর এখন ১৮ টাকা ছাড়িয়েছে। গতকাল কোম্পানিটির প্রায় ৫৩ লাখ শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা গত ১৩ মাসেরও বেশি সময়ের সর্বোচ্চ।
খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল ডিএসইতে ব্যাংক খাতে ছিল মিশ্রধারা। ১০ কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১০টির দর, বাকি ১০টির দর অপরিবর্তিত। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ১১টির দর বেড়েছে, কমেছে ৬টির। বীমা খাতের ৩১টির দর বেড়েছে, কমেছে ১১টির। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ৫টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৪টির দর। প্রকৌশল খাতের ১৭টির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৬টির দর কমেছে। ওষুধ ও রসায়ন খাতের ১০টির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৫টির দর কমেছে। এ ছাড়া বস্ত্র খাতের ৫০ কোম্পানির মধ্যে ৩৪টিই দর কমেছে, বেড়েছে ১০টির দর। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ১০ শেয়ারের দর বেড়েছে, কমেছে ৭টির। সিমেন্ট খাতের সাত কোম্পানির ছয়টিরই দর কমেছে। সিরামিক খাতের তিনটির দর বেড়েছে, কমেছে একটির। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের সাতটির সবগুলোর দর বেড়েছে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।