facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪

Walton

এক মাসে ইতিহাস গড়া রপ্তানি আয়


০৮ অক্টোবর ২০১৮ সোমবার, ১০:৩৯  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


এক মাসে ইতিহাস গড়া রপ্তানি আয়

দেশের রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন ঘটেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে এ বছরের একই মাসে ৫৫ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় এসেছে।

এই প্রবৃদ্ধি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো এক মাসে রপ্তানিতে এতো বেশি প্রবৃদ্ধি হয়নি।

আর চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০ শতাংশের মতো। কিন্তু দ্বিতীয় মাস অগাস্টেই তা হোঁচট খায়। ওই মাসে গত বছরের অগাস্টের চেয়ে আয় কমে ১২ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

দেশের রপ্তানি আয়ের ওপর বরাবরই তৈরি পোশাক পণ্যের বড় ধরনের প্রভাব থাকে।

পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “কোরবানির ঈদের কারণে অগাস্ট মাসে প্রায় ১০ দিন কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন থেকে শুরু করে রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। সে কারণেই ওই মাসে রপ্তানিতে নেতিবাচক (নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

“গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোরবানির ঈদ হওয়ায় তখনও রপ্তানি আয় কম এসেছিল। এই সেপ্টেম্বরে উৎপাদন থেকে শুরু করে জাহাজীকরণসহ অন্যান্য সব কাজ পুরোদমে চলেছে। মূলত এ কারণেই গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে এই বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানিতে বড় জাম্প (উল্লম্ফন) হয়েছে।”

তবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরা গত কয়েক বছরে তাদের কারখানার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় ক্রেতাদের আস্থা বৃদ্ধি রপ্তানি আয় বাড়াতে অবদান রেখেছে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে ৯৯৪ কোটি (৯.৯৪ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে।

এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি; লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৯৩৩ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৮৬৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার।


এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে ২৭৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার লক্ষ্যের বিপরীতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩১৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে আয় হয়েছিল ২০৩ কোটি ৪১ লাখ ডলার।

এই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ দশমিক ৪০ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশের মতো।

অর্থাৎ ৯৯৪ কোটি ডলারের মধ্যে ৮১৯ কোটি ১৭ লাখ ডলারই এখাত থেকে এসেছে। এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৪২০ কোটি ৬৮ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ২৭শতাংশ।

উভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ।

মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেশি হওয়ার কারণেই সেপ্টেম্বরে সার্বিক রপ্তানি আয় বেড়েছে।

ফারুক হাসান বলেন, “অর্থবছরের শুরুটা খুব ভালো হয়েছিল। কিন্তু পরের মাসেই তা ধাক্কা খেয়েছিল। সে ধাক্কা আমরা সামলে নিয়েছি।”

অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতে আয় বাড়বে আশা করে তিনি বলেন, “কারখানাগুলোর উন্নয়নে পোশাক শিল্প মালিকরা গত কয়েক বছরে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কষ্টও করেছেন। ৮০ শতাংশের বেশি কারখানা উন্নত কর্মপরিবেশের (কমপ্লায়েন্স) আওতায় চলে এসেছে। এতে বায়াররাও খুশি।”

এ কারণেই বিদেশি ক্রেতাদের আস্থার সঙ্গে ক্রয়াদেশও বেড়েছে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সহসভাপতি।

তবে ভারত, চীন, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ মার্কিন ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার ব্যাপক দরপতন করায় বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি।

অন্যান্য পণ্যের মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।

হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে ১৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

তবে স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ (৩৬.৬৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। এর মধ্যে ৩০ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।

সার্বিক রপ্তানি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বাড়লেও তা ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২২ শতাংশ কম।

মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই গত অর্থবছর ওই প্রবৃদ্ধি হয়। মোট রপ্তানির ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ আসে এই খাত থেকেই।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে ৩৯ বিলিয়ন (তিন হাজার ৯০০ কোটি) ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।

এবার দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাত থেকে ৩২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার আসবে বলে ধরা হয়েছে, যা মোট রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার ৮৩ দশমিক ৮২ শতাংশ।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: