facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৭ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪

Walton

ঋণের ভারে ন্যূব্জ ইমাম বাটন


২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সোমবার, ১০:০০  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


ঋণের ভারে ন্যূব্জ ইমাম বাটন

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের যন্ত্রপাতি পুরোনো হয়ে যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। একই সঙ্গে বিদেশি বাটনে (বোতাম) দেশি বাজার সয়লাব এবং এগুলোর দাম কম হওয়ায় দিন দিন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে কোম্পানিটি। লোকসানে থাকা এ কোম্পানিটির মুনাফায় ফিরতেও নেই কোনো পরিকল্পনা।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত কোম্পানিটির কারখানা ঘুরে দেখা যায়, ভাঙা মেশিন, বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে কোম্পানিটি পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে পারছে না। দেড় শতাধিক শ্রমিক নিয়মিত কারখানায় কাজ করলেও কোম্পানিটি মোট উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৭৫ শতাংশই কাজে লাগাতে পারছে না। ১৩টি লাইনের অধিকাংশ মেশিনই পুরোনো। এছাড়া বাটনের কাঁচামাল রেজিন, স্টাইরিন মনোমার, প্যারাফিন ওয়াক্স, পার্ল এসন্স ও আরমোজেলসহ সব ধরনের কাঁচামালের দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে বাটনের দাম।

কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা অভিজিত রায় বলেন, ‘আমাদের এখানে তিন ধরনের বাটন উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে পার্ল বাটন সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। এ বাটনের উৎপাদন সক্ষমতা ২০ লাখ ছয় হাজার জিজি। কিন্তু উৎপাদন হয় মাত্র ৬৭ হাজার ৪৭২ জিজি। এছাড়া চক বাটন ও হর্ন বাটনেরও উৎপাদন যথেষ্ট কমে গেছে। মেশিনের ক্যাপাসিটি কম ও বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে কোম্পানিটি পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে পারছে না।’ একই সঙ্গে কোম্পানিটি নতুন ক্রেতা খুঁজতেও ব্যর্থ হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাটনের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির তৈরি পার্ল, চক, হর্ন বাটন তৈরি পোশাকশিল্পে ব্যবহƒত হয়। বর্তমানে বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গার্মেন্ট শিল্পে ব্যবহৃত সব পণ্যের দাম কমে গেছে। ফলে আমাদের উৎপাদিত পণ্য বাটনের চাহিদা এবং বিক্রয়মূল্যও কমে গেছে। এছাড়া আমাদের বাটন উৎপাদনের মেশিন পুরোনো হওয়ার কারণে উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে এবং যত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেশি হচ্ছে।’

বাটন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইমাম বাটনের সুনাম থাকায় মুনাফা না হলেও লোকসান অনেক কমেছে বলে দাবি করেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

ওষুধ ও রসায়ন খাতের এ কোম্পানিটি সম্পর্কে সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান মতামত দিয়েছে। ইমাম বাটন পর্যাপ্ত উৎপাদন ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করতে পারছে না। এতে কোম্পানিটির লোকসান দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কোম্পানিটির টিকে থাকা অসম্ভব বলে মনে করছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান।

কোম্পানির ৩০ জুন, ২০১৬ সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত প্রতিবেদন পর্যালোচনার ভিত্তিতে এমন তথ্য জানায় নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। এদিকে নতুন ক্রেতা খুঁজতেও ব্যর্থ হচ্ছে কোম্পানিটি। ফলে কোম্পানির রিটেয়েন্ড লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ১৭ টাকা।

ইমাম বাটন বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করার পরেও এ বিষয়ে কোনো লাভ-ক্ষতির কথা স্বীকার করেনি। কোম্পানিটি বর্তমানে দশমিক ৭১ অনুপাতে দাঁড়িয়ে আছে। আর এ কম রেশিওর কারণে কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হতে পারে বলে মনে করছেন নিরীক্ষকরা। বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা কোম্পানিটির নেই বলে জানায় নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যদি অবকাঠামোগত অবস্থার উন্নতি ও আর্থিক সমস্যার সমাধান না করতে পারে, তাহলে ইমাম বাটনের ভবিষ্যতে টিকে থাকা কঠিন হবে পূর্বাভাস দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

ইমাম বাটনের সবশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোম্পানির নামে মাইডাস ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে ২০ শতাংশ সুদ হারে সাড়ে ১২ কোটি টাকা ঋণ নেয়। দীর্ঘ মেয়াদে নেওয়া এ ঋণের এখনও তিনটি কিস্তি বকেয়া রয়েছে। এদিকে আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট থেকে দীর্ঘ মেয়াদে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে ইমাম বাটন। ২০ শতাংশ সুদের হারে এ ঋণের ২৭টি কিস্তি বকেয়া রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটি ২০১১ সাল থেকে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। ৩০ জুন ২০১৫ সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় এক টাকা ৬৪ পয়সা। শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়ায় ৯ টাকা ৩১ পয়সা। এর পরের অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান কিছুটা কমে দাঁড়ায় এক টাকায়।

এদিকে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-ডিসেম্বর ’১৬) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ইমাম বাটন শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫৫ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬৯ পয়সা লোকসানে। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য হয়েছে সাত টাকা ৭৫ পয়সা। শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ’১৬) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩১ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৩ পয়সা লোকসানে।

দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকা এ কোম্পানটির শেয়ারদর প্রায়ই অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। বিদায়ী বছরের শেষ দিকে ইমাম বাটনের অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ হয়নি।

গতকাল রোববার ডিএসইতে ইমাম বাটন দর কমার শীর্ষে তালিকায় স্থান পায়। এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা এ কোম্পানিটির শেয়ারদর কমে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। দিনশেষে কোম্পানিটির শেয়ারদর দাঁড়ায় ১৬ টাকা ১০ পয়সায়। গত ৫২ সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারদর আট টাকা ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ২১ টাকা ৭০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করে।

১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন সাত কোটি টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের কাছে ৩১ দশমিক ৫৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৫৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ শেয়ার।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: