facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

উৎপাদনে নেই দেড় হাজার তৈরি পোশাক কারখানা


০৫ জানুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার, ০৩:৩৪  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


উৎপাদনে নেই দেড় হাজার তৈরি পোশাক কারখানা

 

উৎপাদনে নেই দেড় হাজারেরও বেশি রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা। এর মধ্যে কিছু কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু কারখানায় নেই রফতানি আদেশ। কাজ না থাকায় এসব কারখানাও বন্ধ হওয়ার পথে। বড় অঙ্কের কারখানা উৎপাদনে না থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে সামগ্রিকভাবে পোশাক খাতে রফতানি আয়ের গতি ধীর।

এত কারখানা বন্ধ হওয়ায় পোশাক খাত যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি মালিক এবং শ্রমিক উভয় শ্রেণিই বিপদে পড়েছে। সবচেয়ে বড় বিপদে আছেন শ্রমিকরা। বকেয়া বেতন এবং কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বিজিএমইএর সামনে বিক্ষোভ করছেন তারা। কিছু শ্রমিক পেশা বদল করেছেন। বাকিরা বেকার। বেকারদের একটি অংশ ঢাকা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। জানা গেছে, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর নিয়মিত উৎপাদনে না থাকাসহ অন্যান্য কারণে ৫৫০ কারখানার সদস্যপদ বাতিল করেছে বিজিএমইএ। আয়-ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় ৩০০ কারখানা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে মালিক পক্ষ। নিয়মিত উৎপাদনে না থাকার কারণে ১৮০ কারখানার সদস্যপদ বাতিল করেছে বিকেএমইএ। বিকেএমইএভুক্ত ২০০ কারখানা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা। সংস্কার কার্যক্রমে অগ্রগতি দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় এ পর্যন্ত ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ২৩২ কারখানা। এসব কারখানার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন ক্রেতারা। এ কারখানাগুলো দুই জোটের কোনো ক্রেতার রফতানি আদেশ পাচ্ছে না। কার্যত এসব কারখানা এখন বন্ধ।

প্রাথমিক সদস্যসহ বিজিএমইএর মোট সদস্য কারখানার সংখ্যা চার হাজার ৩৩৯টি। ঢাকা অঞ্চলের কারখানার সংখ্যা তিন হাজার ৬২৮টি। এর মধ্যে গত এক বছরে রফতানি আদেশের বিপরীতে ব্যবহূত কাঁচমাল আমদানির অনুমতি বা ইউডি (ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন) নিয়েছে এক হাজার ৬১৮ কারখানা। মূলত এরাই সরাসরি উৎপাদন এবং রফতানি প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ইউডি না নিলেও ৮৭২ কারখানা সাব-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে উৎপাদনে রয়েছে। বাকি কারখানাগুলো উৎপাদনে নেই। সরাসরি প্রতিটি কারখানা সরেজমিন পরিদর্শনের পর প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিজিএমইএর কমপ্লায়েন্স সেল।

উদ্যোক্তা এবং শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আয়-ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারাই কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার প্রধান কারণ। একদিকে বাড়ছে উৎপাদন খরচ, অন্যদিকে কমছে পোশাকের দর। একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে কমছে পোশাকের চাহিদা। বিজিমইএর সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি সমকালকে বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক খাতে যে নানামুখী চাপ তৈরি হয়েছে, তার প্রভাবেই এসব কারখানা বন্ধ হয়েছে। সংস্কার ও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির বিপরীতে পোশাকের দর ও চাহিদা কমে আসার বিভিন্ন তথ্য দেন তিনি।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। এ সময় প্রধান দুই বাজার ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে দর কমেছে গড়ে প্রায় ৭ শতাংশ। আর বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কমেছে ৮ শতাংশ। এই তিন প্রতিকূলতায় গত অর্থবছরে পোশাকের রফতানি প্রবৃদ্ধি নেমে আসে ১৫ বছরে সর্বনিল্ফেম্ন। গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) পোশাকের দর কমেছে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। চলতি বছরও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে।

বিশ্ববাজারে দর কমে আসার পাশাপাশি দেশে বেড়েই চলেছে উৎপাদন ব্যয়। সূূত্র অনুযায়ী, নতুন মজুরি কাঠামোর জন্য ব্যয় বেড়েছে ৩২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত বছর বিদ্যুৎ বাবদ ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ এবং গ্যাসে বেড়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৪০ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিংসহ (সিঅ্যান্ডএফ) পরিবহন খাতে। সব খাত মিলিয়ে গত বছর উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় ১৮ দশমিক শূন্য এক শতাংশ।

জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, বন্ধ হওয়া বেশিরভাগ কারখানার শ্রমিকরা আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য পাননি। এ নিয়ে মালিকদের সঙ্গে অনেক আলোচনা হয়েছে। তারা বলছেন, টাকা নেই বলে কারখানা চালাতে পারছেন না। কাজ না করিয়ে শ্রমিকদের অর্থ দেবেন কীভাবে। তিনি বলেন, অ্যালায়েন্সভুক্ত মাত্র দুটি কারখানা নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের অর্থ পরিশোধ করেছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: